1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোচোম্যান: বোমার আঘাতে মানুষ থেকে ‘সুপারম্যান'

২১ ডিসেম্বর ২০২০

তার দুই হাত, এক পা আর একটা চোখ কেড়ে নিয়েছে বোমা৷ কোমা থেকে ফিরে মনে হয়েছিল- এই জীবন রেখে কী লাভ! সেই হুয়ান হোসে ফ্লোরিয়ান  ‘মোচোম্যান' হয়ে খুঁজে পেয়েছেন জীবনের নতুন মানে৷

https://p.dw.com/p/3n1Fu
Kolumbien Der Radfahrer Juan José Florian
ছবি: Movistar Colombia

২০১১ সালের ১২ নভেম্বর৷ কলম্বিয়ায় তুমুল গৃহযুদ্ধ চলছে৷ প্রেসিডেন্ট হোসে মানুয়েল সান্তোস ফার্স বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে পাঁচ দশক ধরে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানের চেষ্টা করে চলেছেন আপ্রাণ৷ ফ্লোরিয়ানের জীবনে সেদিনই নেমে আসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়৷

বড় ভাই সেনা সদস্য বলে কৈশোরে তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ফার্স বিদ্রোহীরা৷ পরিবারের সবাই পড়েছিল ডানপন্থিদের হামলায় নিহত হওয়ার আশঙ্কায়৷ সেনা সদস্যের ছোট ভাই ফ্লোরিয়ান যে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফার্স-এ যোগ দিতে বাধ্য হয়েছে, তা তো ডানপন্থিরা বুঝতো না৷ বরং পরিবারের ইচ্ছায় ফার্স-এ যোগ দিয়েছে ধরে নিয়ে মা-কেও হয়ত মেরে ফেলতো৷

তবে ২০১১ সালের ওই সময়টায় ডানপন্থিদের হামলার ভয় আর ছিল না৷ ফার্সের ঘাঁটি থেকে পালিয়ে এসে ফ্লোরিয়ানও তখন যোগ দিয়েছেন সেনাবাহিনীতে৷ ফার্স-এর সদস্যরা এসেছিল চাঁদা চাইতে৷ মা দেননি৷ আর তাতেই যে এত বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে কে জানতো!

২০১১ সালের ১২ নভেম্বর বাড়ির সামনে এসে দেখেন সুন্দর একটা প্যাকেট৷ নীচু হয়ে ধরতে যাবেন, অমনি বিকট শব্দে বিস্ফোরণ৷ মুহূর্তে ঘরের বড় একটা অংশ মিশে গেল মাটিতে৷ ফ্লোরিয়ান অবশ্য তা দেখেননি৷ দেখবেন কী করে, দু হাত আর এক পা-সহ অনেকটা অংশ উড়ে যাওয়ার পর শরীরের যা বাকি ছিল তা-ও পুড়ে প্রায় ছাই৷ হাসপাতালে কোমায় ছিলেন ১২ দিন৷

ফার্সের পেতে রাখা বোমার আঘাতে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে মনে হয়েছিল এই জীবন না রাখাই ভালো৷ বড় ভাইকে ডেকে ফ্লোরিয়ান বলেছিলেন, ‘‘প্লিজ, মাথায় বন্দুক ধরে গুলি করে শেষ করে দাও আমাকে৷''

২০১৬ সালে অনেক চেষ্টার পর শান্তি চুক্তি করতে পেরেছেন প্রেসিডেন্ট হোসে মানুয়েল সান্তোস৷ সেই সুবাদে নোবেল শান্তি পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি৷

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে ফ্লোরিয়ানও বেছে নিয়েছেন নতুন জীবন৷ শুরু করেছিলেন সাঁতার৷ হ্যাঁ, নকল দুই হাত, আর এক পা নিয়েও ভালোই করছিলেন সাঁতারে৷ লেখাপড়াও শুরু করেছিলেন নতুন করে৷ কিন্তু একসময় মনে হলো ভালো করার সম্ভাবনা সাঁতারের চেয়ে সাইক্লিংয়ে অনেক বেশি৷

২০১৭ সালে কলম্বিয়ার বিমান বাহিনীর প্রকৌশলীরা তার জন্য তৈরি করে দেন বিশেষ ধরনের এক সাইকেল৷ কার্বন ফাইবারের তৈরি সেই সাইকেলের প্যাডেল দুটো ফ্লোরিয়ানের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি৷

২০২১ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠেয় প্যারা অলিম্পিকেওই সাইকেলের প্যাডেলে পা রেখেই ঝড় তুলবেন ফ্লোরিয়ান৷

অবশ্য এখন আর কেউ ফ্লোরিয়ান নামে চেনে না তাকে৷ দুই হাত, এক পা হারানো সাইক্লিস্টকে কলম্বিয়ার যে মানুষেরা আগে ‘কোয়ার্টার চিকেন' বলে ডাকতেন তারাও এখন ডাকেন ‘মোচোমান' নামে৷ তাদেরও আশা, সুপারম্যান, আয়রনম্যানেরা যেমন অসম্ভবকে সম্ভব করেন, সেভাবে ‘মোচোম্যান'ও এবার সোনার পদক জিতেই জাপান থেকে কলম্বিয়ায় ফিরবেন৷

অলিভার পিপার/ এসিবি