1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেশি খাওয়ায় শরীরে বাড়তি রোগ

১৫ এপ্রিল ২০১৮

প্রচলিত প্রথা মেনে অল্পবয়সি মেয়েদের জোর করে খাওয়ানো! এবং তা ভবিষ্যতে দুরারোগ্য রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ না জেনেই পশ্চিম আফ্রিকার মৌরিতানিয়ার মেয়েরা এমনই বিপদের কবলে!

https://p.dw.com/p/2vzB5
অতিরিক্ত মোটা ডায়বেটিসের সম্ভাবনা বাড়ায়ছবি: Colourbox

রীতিটাই এমন! পাত্রী বড়োসড়ো, হৃষ্টপুষ্ট না হলে তার বিয়ে হয় না! অন্ততপক্ষে পাত্রীকে বিবাহযোগ্যা করে তোলার জন্য পরিবারের অন্যান্যদের সে কী আয়োজন!

পশ্চিম আফ্রিকার প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, তথাকথিত মোটাসোটা ওজনদার মহিলাই ভালো স্বামী পাওয়ার যোগ্য৷ তাই যেনতেনপ্রকারেণ মহিলাকে ওজনদার বানানো চাই-ই৷ দরকার হলে জোরপূর্বক খাইয়ে! আর এ জন্য এখানকার মহিলারা ডায়বেটিস, হার্টের অসুখ এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগতে শুরু করেছেন৷

মৌরিতানিয়ার সাদো ইসেলমো এমনই একজন মহিলা যিনি এই প্রচলিত কুপ্রথার শিকার৷ নিজের শৈশব নিয়ে ইসেলমোর অভিজ্ঞতা বেশ ভীতিপ্রদ৷ মাত্র সাত বছর বয়সেই তাঁকে তাঁর বাবা মা রোজ দু'বালতি পোরিজ খাওয়ানো শুরু করেন৷ কারণটা আর কিছুই না, যাতে শরীরের বিকাশ খুব দ্রুত হয় এবং পাত্রপক্ষ অতি সহজেই তাঁকে পছন্দ করেন৷ ইসেলমো এই জোর করে গলাধঃকরণ করার পদ্ধতিটিতে খুব বিরক্ত হতেন৷ এমনকি প্রায়ই খাবারদাবার ফেলে দিতেন৷ ইসেলমো জানালেন, রোজ তাঁকে জির্ক নামে একপ্রকার দুধ, জল এবং চিনির সমন্বয়ে তৈরি পানীয় খাওয়ানো হতো, যাতে তাঁর হজম ক্ষমতা বাড়ে৷ অতিরিক্ত মোটা বানানোর জন্য অধিক তেল, মাখন দিয়ে একটা আস্ত মেষ রান্না করে রাখতেন ইসেলমোর মা৷ সারা সপ্তাহ ধরে তাঁকে সেটা শেষ করতে হত৷ আর ইসেলমো এ সবের কার্যকারিতা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছিলেন৷ কারণ মাত্র চার মাস পরেই তিনি এত মোটা হয়েছিলেন যে নিজের কোনও জামাকাপড়েও আঁটেননি এবং হাঁটাহাঁটির ক্ষমতাটুকু হারিয়েছিলেন৷

এই জোরপূর্বক খাওয়ানোর পদ্ধতির সাফল্য হিসেবে ইসেলমোর বিয়ে হয়েছিল মাত্র ১৩ বছর বয়সে৷ এক বছর পরে তিনি এক সন্তানের মাও হয়ে যান৷ কিন্তু চল্লিশে পা দিয়ে তিনি টাইপ টু ডায়বেটিসের শিকার,মাত্রাতিরিক্ত মোটা৷

ঘটনাচক্রে ইসেলমো একা নন, বহু মহিলাই এমন পরিস্থিতির শিকার৷ এমন জোরপূর্বক খাওয়ানোর ফলে সাধারণভাবে আট বছরের বালিকারা ১৪০ কেজির কাছাকাছি দাঁড়ায়৷ ধরেই নেওয়া হয়, মহিলাদের ওজনের মাপকাঠিটা ২০০ কেজি, নইলে পাত্রপক্ষের চোখে পড়বেন না! কিন্তু অল্পবয়সেই এই অস্বাভাবিক ওজনের জন্য হৃৎপিণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং তা শরীরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে৷

মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলি এই প্রথার বিপক্ষে জানিয়েছেন, বালিকাদের দ্রুত বয়ঃসন্ধির দিকে ঠেলে তাঁদের বেশি নারীসুলভ দেখানোর এই প্রথা বাল্য বিবাহেরই সমতুল৷ স্থানীয় নারী অধিকার সমিতির তরফে অ্যামিন মিন্ট মোক্তার বলেন, ‘‘মৌরিতানিয়ার পুরুষেরা হৃষ্টপুষ্ট মহিলাদেরই বেশি পছন্দ করেন৷ তাঁরা মনে করেন, এটা তাঁদের সৌভাগ্যের প্রতীক এবং এ ধরনের স্বাস্থ্যবতী মহিলারা ভালো স্ত্রী হবেন৷''

কিন্তু এ সব প্রথা মেনে চলার ফলশ্রুতি হিসেবে সমাজে নেমে আসছে বড় সমস্যাও৷ খরা বা অন্যান্য কারণে ফসল উৎপাদন কম হলে, মেয়েকে স্বাস্থ্যবতী গড়ে তোলার জন্য পরিবার শরণ নিচ্ছে রাসায়নিক পদার্থের৷ তখন কর্টিকয়েড বা স্টেরয়েড ধর্মী হরমোন প্রয়োগ করে মেয়ের চেহারার বাহ্যিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলে৷

মোক্তার জানান, ‘‘এ সমস্ত স্টেরয়েড ধর্মী ওষুধপত্র প্রাণীদের ওপর প্রয়োগের জন্যই ব্যবহার হয় সাধারণত৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে মেয়েদের ওপর প্রয়োগ হচ্ছে৷ এটা তো বেশি খাবার খাওয়ানোর থেকেও মারাত্মক৷ আবার বৃষ্টি হলে মাংস এবং দুধের যোগান বাড়লে সেটাও জোর করে খাওয়ানো হবে৷'' এমন জোর করে খাওয়ানোর পদ্ধতিকে তাঁর সংস্থা অপরাধমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে৷

প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এই প্রথা এখনও রয়ে গিয়েছে৷ তবে শহরাঞ্চলের কর্মরতা মেয়েরা এই ওজন বাড়ানোর ব্যাপারে কান দিতে রাজি নয়৷ কাজ করার দরুণ তাঁরা তাঁদের চলাফেরায় বাধা দিতে নারাজ৷ চাকরি এবং রোজগার মহিলাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সাহস জোগাচ্ছে৷ সেই সঙ্গে তাঁরা নিজেদের মতকেও প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন৷

ফিরে আসা যাক ইসেলমোর প্রসঙ্গে৷ তিনি নিজে শৈশবে যেমনটি দেখে এসেছেন, তেমনটি কিন্তু প্রশ্রয় দিচ্ছেন না মোটেই৷ বরং নিজের দুই মেয়ের ক্ষেত্রে তিনি কখনোই এমন জোরপূর্বক খাওয়াতে চাইবেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘শরীরটা তাদের, আমার নয়৷''

পিএস/ডিজি

প্রতিবেদনটি পড়ে কেমন লাগল তা নীচের মন্তব্যের ঘরে জানান৷