1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোটরসাইকেলে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন বসিয়ে দূষণ কমানোর উদ্যোগ

৮ ডিসেম্বর ২০২১

বায়ুদূষণ দূর করতে পরিবেশবান্ধব যানের প্রয়োজন নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই৷ কিন্তু রাতারাতি এমন পরিবর্তন সম্ভব নয়৷ আফ্রিকার এক দেশে ইঞ্জিনের রূপান্তর ঘটিয়ে সহজে ও কম খরচে ব্যাটারির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/43z4z
DW Sendung REV.olution | Uganda
ছবি: DW

রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালির মোটরসাইকেল ট্যাক্সিচালক হিসেবে এরিক টুয়িশিমে শেষ বার ট্যাংকে তেল ভরছেন৷ তারপর কম্বাশন ইঞ্জিন সরিয়ে ইলেকট্রিক মোটর বসানো হবে৷ তার জন্য এ এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত৷ এরিক বলেন, ‘‘আমারটার মতো পুরানো মোটরসাইকেল চালিয়ে পরিবহণ ব্যবসা করা সত্যি কঠিন৷ থেকে থেকে খারাপ হয়ে যায়৷ ফলে কখনো মুনাফার তুলনায় খরচ বেশি হয়৷ সে জন্য আমি এটিকে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলে রূপান্তরিত করছি৷''

কিন্তু মোটরসাইকেল চালানোর খরচই তার দুশ্চিন্তার একমাত্র কারণ নয়৷ টুয়িশিমে সাত বছর ধরে মোটোট্যাক্সি চালাচ্ছেন৷ নিজের যানের কারণে দূষণ সম্পর্কেও তিনি সচেতন৷ এরিক রুয়ান্ডা পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের একটি প্রকল্পের সুযোগ নিয়েছেন৷ এর আওতায় জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে সহযোগিতায় প্রচলিত ইঞ্জিন বর্জন করে ইলেকট্রিক মোটর বসানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷

কিগালি শহরের একটি ওয়ার্কশপে সেই কাজ করা হয়৷ এরিক টুয়িশমে তাঁর ট্যাক্সি সমবায়ের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় ৬৮০ ইউরো ব্যয় করে ইঞ্জিনের রূপান্তর ঘটিয়েছেন৷ প্রায় তিন মাসের বেতনের সমান এই অংক ছোট ব্যবসায়ীর পক্ষে বড় বোঝা বটে৷ তবে এমন বিনিয়োগের সার্থকতা সম্পর্কে তাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল৷ রুয়ান্ডা ইলেকট্রিক মোবিলিটি লিমিটেডের মাক্সিম মুতুইয়েইয়েজু এই উদ্যোগের সার্থকতা ব্যাখ্যা করে  বলেন, ‘‘তেলের দরকার নেই, বিনামূল্যে আমাদের পরিষেবা দেওয়া হয়৷ চেন না থাকায় তার রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন নেই৷ চালককেই সেই টাকা গুনতে হয়৷  এ সব খরচ বেঁচে যাওয়ায় সুবিধা হয় বৈকি!''

মোটরসাইকেলে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন

আপাতত বিনামূল্যে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত প্রায় ১০০ মোটোট্যাক্সির ইঞ্জিন বদল করা হয়েছে৷ চাহিদা বেড়েই চলেছে৷ রুয়ান্ডা ইলেকট্রিক মোবিলিটি লিমিটেডের ডনাল্ড কাবান্ডা বলেন, ‘‘শুধু নতুন ইলেকট্রিক বাইক নয়, পুরানো বাইকের ইঞ্জিন পরিবর্তনেরও অনেক অর্ডার পাচ্ছি৷ রুয়ান্ডার বাজারের ইতিবাচক সাড়া ছাড়াও প্রতিবেশী দেশগুলিতেও আমাদের পণ্য সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ছে৷''

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রূপান্তরের কাজ শেষ৷ টুয়িশমের মটোরসাইকেল এখন দুটি ব্যাটারিতে চলবে৷ প্রতিটি ব্যাটারি প্রায় ৬০ কিলোমিটার চলার শক্তি জোগান দেবে৷ খালি হয়ে গেলে কালেকশন পয়েন্টে জমা দিয়ে চার্জ করা ব্যাটারি নেওয়া যাবে৷ ব্যাটারিচালিত ট্রাকে করে খালি ব্যাটারিগুলি কেন্দ্রীয় একটি স্টেশনে নিয়ে গিয়ে চার্জ করা হয়৷ প্রতিবার চার্জের ব্যয় ৭৬ ইউরো সেন্টের মতো৷ তেলের খরচ বেঁচে যাওয়ায় প্রায় ৩০,০০০ কিলোমিটার চলার পর নতুন ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক সুবিধা টের পাওয়া যায়৷

রুয়ান্ডার প্রায় ৫০ শতাংশ নথিভুক্ত মোটরসাইকেলই মোটোট্যাক্সি হিসেবে চলে৷ সে দেশের পরিবেশ কর্তৃপক্ষ ২০২৬ সালের মধ্যে কমপক্ষে এর অর্ধেকের মধ্যে ইলেকট্রিক মোটর দেখতে চায়৷ রুয়ান্ডা পরিবেশ কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক জুলিয়েট কাবেরা বলেন, ‘‘জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির বদলে সব মোটরসাইকেলে ইলেকট্রিক মোটর লাগানো সম্ভব হলে আমরা বছরে প্রায় ৯০০ কোটি ফ্রাঁ সাশ্রয় করতে পারবো৷ কারণ সে ক্ষেত্রে দেশ জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির মাত্রা প্রায় ৪৫ শতাংশ কমাতে পারবে৷''

এরিকের মতো চালকের জীবনে তখন বড় পরিবর্তন আসবে৷ তিনি বলেন, ‘‘অতীতে যখন তেল ঢেলে মোটরসাইকেল চালাতাম, তখন সবাই পেছনে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখে আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়তো৷ কয়েকজন গ্রাহক এই যানে চড়তেই চাইতো না৷ এখন আর সেই সমস্যা নেই৷''

জিসেনি শহরে আরেকটি এমন ওয়ার্কশপ খোলা হচ্ছে৷ কাছেই সীমান্তের ওপারে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর গোমা শহরেও মোটোট্যাক্সিগুলি পরিবেশবান্ধব বিকল্প বেছে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

টেমিস্টকলে হাকিজিমানা/এসবি