1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদীর প্যাকেজ আসলে কুমিরছানা দেখানোর মতোই

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১৮ মে ২০২০

এক ঝলক দেখলে মনো হবে, বিশাল ব্যাপার। কিন্তু খতিয়ে দেখলে ধরা পড়বে, পুরনো প্রণোদনাই নতুন মোড়কে পেশ করা হলো।

https://p.dw.com/p/3cOko
ছবি: picture-alliance/dpa/PTI/Twitter

সপ্তাহখানেক আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে ২০ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা ভারতের জিডিপি-র প্রায় দশ শতাংশ। করোনার বাজারে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্যাকেজ। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পমহল সকলেই রীতিমতো আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কারণ, নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, সকলের ঘুরে দাঁড়াবার জন্য এই প্যাকেজে কিছু না কিছু থাকবে। এরপর টানা পাঁচদিন ধরে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিস্তারিতভাবে প্যাকেজে কী থাকবে তা জানিয়েছেন। আশাভঙ্গ হয়েছে তারপরই। অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, এটা পর্বতের মূষিক প্রসব।

সরকার যা ঘোষণা করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, আসলে তাঁদের দিতে হবে তিন লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি হলো ঋণ ও অন্য ব্যবস্থা যেখানে সরকারের এক পয়সাও খরচ হবে না। সাধারণ মানুষের যে টাকা ব্যাঙ্কে আছে, তাই দিয়ে ঋণ দেওয়া হবে। তাই নিয়ে এত ঢাকঢোল পেটানো শুরু হয়ে গিয়েছে, যা দেখে মনে হচ্ছে, মোদী সরকার এ যাবৎকালের সব চেয়ে মহান প্যাকেজের ঘোষণা করে দিয়েছে। অথচ, সরকার যে বিশাল অঙ্কের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তাতে তারা নিজেরা খরচ করছে মাত্র তিন লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। স্বরাজ পার্টির নেতা ও ভোট বিশেষজ্ঞ যোগেন্দ্র যাদব আবার হিসাব কষে দেখিয়েছেন, অঙ্কটা আসলে আরও কম। সবমিলিয়ে এক লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যেও প্যাকেজে এমন অনেক বিষয় আছে, যা গত বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছিলো। করোনা হওয়ার পর সরকার ঘোষণা করেছে এমন প্রকল্পও আছে। ফলে পুরনো কুমিরছানাগুলিকেই আবার দেখিয়ে কৃতিত্ব দাবি করেছেন মোদী।

এক নম্বর কুমিরছানা। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ প্যাকেজ। এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে জন ধন অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আর ৫ কেজি চাল, গম ইত্যাদি দুই মাস বিনা পয়সায় দেওয়া হবে।  এটা পুরনো ঘোষণা। করোনার পর সরকার যে প্রথম প্যাকেজের কথা ঘোষণা করে তার মধ্যে ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা ছিলো। তাছাড়া এফসিআই এর গুদাম উপছে পড়ছে। সেই সব দানাশষ্য আগেই নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তার জন্য বাজেট বরাদ্দ করা আছে. নতুন করে টাকা খরচ করতে হচ্ছে না। খালি তা রাজ্যকে দিতে হবে।

কুমিরছানা নম্বর দুই। ক্যাম্পা বা কমপালসারি অ্যাফরেস্টেশন ফান্ড। সেখান থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। ক্যাম্পা ফান্ড ২০১৬ থেকে আছে। আগের বাজেটে এই ফান্ড থেকে ৪৭ হাজার কোটি টাকা সবুজায়নের জন্য রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয়েছে।

তিন নম্বর কুমিরছানা। প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই বেড়ে ৭৪ শতাংশ করা হবে। বাজেটেই বলা হয়েছিলো, প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো হবে। সেই ঘোষণা হয়ে গেলো। আত্মনির্ভর ভারতের স্লোগান দিয়ে প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতা বাড়ানোর ঘোষণা এখন কেন করা হলো, করোনার সঙ্গে তার সম্পর্ক কী তা অবশ্য জানানো হয়নি। তবে এর ফলে বিদেশি অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলি খুশি হতেই পারে।

চার নম্বর কুমিরছানা। খনি থেকে বিমান পরিবহন সব জায়গায় সংস্কারের ঘোষণা। এটাও বাজেটের সময় করা হয়ে গিয়েছে। করোনা প্যাকেজে সেটাও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের দাবি, এই ভাবে প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচিকে তারা অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেলো। এভাবে কী করে আত্মনির্ভর ভারত হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ, এই ক্ষেত্রগুলি আরও বেশি করে বিদেশি সংস্থার জন্য খুলে দেওয়া হলো।

পাঁচ নম্বর কুমিরছানা। কৃষকদের দুই হাজার টাকা করে দেওয়া এবং কিযাণ ক্রেডিট কার্ডের বিস্তার। দুইটি ঘোষণাই পুরনো এবং বাজেটে করা। কৃষকরা তাঁদের প্রাপ্য দুই হাজার টাকা পেয়েছে মাত্র। যোগেন্দ্র যাদব জানাচ্ছেন, কৃষকদের নিয়ে আরও এগারোটি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে আটটি আগে বাজেটে করা হয়েছে।

Goutam Hore
ছবি: privat

তাই মোড়কটা যতটা চকচকে, আকর্ষণীয়, বিশাল অঙ্ক দেখে চোখ গোল গোল হওয়ার মতো, ভিতরে ঢুকলে দেখা যাচ্ছে, গুদামে মালপত্র বেশি নেই। সেখানে ফাঁকির পরিমাণই বেশি। কিন্তু হলে কী হয়। এই প্যাকেজনিয়েই টিভিতে আলোচনার ঝড় এবং বিজেপি-র প্রচারের হট্টগোল তুঙ্গে উঠেছে। লাখো পরিযায়ী শ্রমিক এখনও হাঁটছেন, তাঁদের পুলিশ বাধা দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাটে প্রায়দিনই পরিযায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ঝামেলা হচ্ছে, প্রতিদিন লোকে চাকরি হারাচ্ছেন, অনেক লোক একবেলা করে খাবার পাচ্ছেন। আর এত দিন লকডাউন করেও করোনাকে বাগে আনা যাচ্ছে না। অনেকেই আশা করেছিলেন, লাখ লাখ কোটি টাকার সরকারি সাহায্য পেয়ে লোকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হবে। সুদিন আসবে। সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্ন দেখোনাোর প্যাকেজ।