1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদীর ‘ভুল' পরিবর্তনে মমতা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৯ মার্চ ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জমানায় যা যা ‘‌ভুল'‌ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ক্ষমতায় এলে সেসব পরিবর্তন করতে চান তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ লেখা হয়েছে তাঁর দলের নির্বাচনি ইশতাহারে৷

https://p.dw.com/p/3FsOk
Indien westbengalische Politikerin Mamata Banerjee
ছবি: Ians

বিরোধীদের সমবেত অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর থেকে একটি কাজ খুব জোর দিয়ে করা হয়েছে৷ ভারতের যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, যেখানে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে এক ধরনের ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় থাকে, তা পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করা৷ সময়ের দাবি যেখানে ছিল ক্ষমতার আরও বেশি বিকেন্দ্রীকরণের, সেখানে ঘটেছে ঠিক উলটো এবং যেসব রাজ্যে অ-বিজেপি সরকার, বিশেষত আর্থিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে তাদের শক্তিহীন করার একটা চেষ্টা জারি থেকেছে গত পাঁচ বছর ধরে৷ তারই অন্যতম উদাহরণ, স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে যে ‘যোজনা কমিশন' দেশের নানা পরিকল্পনা গ্রহণের দায়িত্ব পালন করেছে, তাকে তুলে দিয়ে ‘নীতি আয়োগ' নামে নতুন একটি দপ্তর চালু করা, যেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকারের পছন্দসই লোকজনকে বসানো৷

কিন্তু এর পেছনে কারণ কী ছিল?‌ যোজনা কমিশনে মোদীর আপত্তি কেন?‌ বিশিষ্ট অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক ধ্রুবজ্যোতি নন্দী ডয়চে ভেলেকে জানাচ্ছেন, ‘‘‌‌মোদীর মূল আপত্তির কারণ ছিল, যে যোজনা কমিশনের গোটাটাই ছিল কংগ্রেসের পরিকল্পনা৷ মূল পরিকল্পনা ছিল সুভাষচন্দ্র বোসের, জওহরলাল নেহরু সেই পরিকল্পনা রূপায়ণ করেন এবং যেহেতু ওটা কংগ্রেসের পরিকল্পনা, মোদী তো দেশের ইতিহাস থেকে কংগ্রেসের নাম মুছে দেওয়ার পরিকল্পনায় চলছে, সেই পরিকল্পনায় যোজনা কমিশন বাদ দিয়ে নীতি আয়োগ করার কথা ভেবেছিল৷ এবং সেটা করতে গিয়ে, নীতি আয়োগের কাঠামো যোজনা কমিশনের কাঠামোর থেকে অনেকখানি আলাদা৷ যোজনা কমিশনে যেভাবে রাজ্যগুলোর বক্তব্য জানানোর সুযোগ ছিল, নীতি আয়োগে সেটা তার চেয়ে অনেক কম৷'‌'

‌অর্থাৎ নতুন কোনো দৃষ্টিভঙ্গী বা নতুন কোনো দর্শনে পরিচালিত হয়ে নয়, নিছকই রাজনৈতিক কারণে নরেন্দ্র মোদী দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি দপ্তরকে স্রেফ বাতিল করে দিয়েছিলেন৷ তৃণমূল কংগ্রেস তার নির্বাচনি ইশতাহারে জানাচ্ছে, মোদী এবং বিজেপিকে হারিয়ে বিরোধীরা কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে অন্যতম কাজ হবে যোজনা কমিশনের পুনরুদ্ধার৷ একইসঙ্গে মোদী সরকারের দুটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা হবে৷ এক, জিএসটি চালু করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে, বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে খুঁজে দেখা হবে তার ভুলত্রুটি, ফাঁকফোকর৷ দুই, নোট বাতিলের হঠাৎ সিদ্ধান্তের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে৷ সুপ্রিম কোর্টের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে এই তদন্ত করানোর পক্ষপাতী মমতা ব্যানার্জি৷

‘মোদীর আপত্তি, যোজনা কমিশন কংগ্রেসের পরিকল্পনা’: নন্দী

নির্বাচনি ইশতাহারে এই পুরনো ভুলগুলোর পর্যালোচনার পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রী জোর দিয়েছেন কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায়, যার অভাব এই মুহূর্তে মোদি সরকারের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ খাড়া করে দিয়েছে৷ ঋণের ভারে জর্জরিত কৃষকদের আত্মহত্যা, ফসলের দাম না পাওয়া, ক্ষুব্ধ কৃষকদের একের পর এক আন্দোলন, আজকে লোকসভা ভোটের মুখে মোদী এবং বিজেপির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেওয়ার জায়গায় পৌঁছেছে৷

পাশাপাশি মমতা ইশতাহারে বলেছেন কর্মসংস্থানের ওপর জোর দেওয়ার কথা৷ গ্রামের গরিব মানুষদের উপার্জনের সুযোগ দিতে চালু হওয়া ১০০ দিনের কাজ বাড়িয়ে ২০০ দিন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং সেকাজের দিনপ্রতি মজুরিও বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার কথা বলেছেন৷

এক্ষেত্রে উল্লেযোগ্য যে দেশের সবকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলই তাদের নির্বাচনি ইশতাহারে সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে৷ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী যেমন নির্দিষ্ট করে বলেই দিয়েছেন, মাসে অন্তত ৬০০০, বছরে কমপক্ষে ৭২,০০০ টাকা সরকারি অর্থসাহায্যের কথা, যা মোদীর গত নির্বাচনে দেওয়া জনপ্রতি ১৫ লক্ষ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতির থেকে অনেক বেশি বাস্তবসম্মত৷

মোদী তখন বলেছিলেন, দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া কালো টাকা ফেরত আনবেন এবং সেই সুবাদেই প্রতিটি মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে ঢুকে যাবে৷ কিন্তু কার্যত হয়েছে ঠিক উলটো৷ সরকারি ব্যাংকের টাকা লুটে বিদেশে ফেরার হয়েছেন বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী, মেহুল চোকসির মতো অসৎ ব্যবসায়ীরা৷ যদিও সম্প্রতি নীরব মোদী লন্ডনে গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং বিজয় মালিয়ার মতো তাঁকেও ভারতে ফেরানোর আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ ভোটের মুখে এই খবর মোদীর মুখে যেটুকু হাসি ফোটাতে পারত, তাও কেড়ে নিয়েছে কৃষক অসন্তোষ এবং বেকারি৷ তৃণমূল কংগ্রেসের ইশতাহারে কৃষকদের সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, যে প্রতিশ্রুতি মোদী এর আগে দিয়েও রাখতে পারেননি৷ মওকুফ করতে পারেননি কৃষিঋণ৷ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মওকুফ করার কথা বলা হয়েছে জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাচনি ইশতাহারে৷ অন্যদিকে তৃণমূলের ইশতাহারে বলা হয়েছে তফশিলি জাতি-উপজাতি, আদিবাসী, অনুন্নত শ্রেণি এবং সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত সরকারি চাকরিতে সমস্ত শূন্য পদ পূরণ করার কথা৷

আরেক বিজেপিবিরোধী জোট বামফ্রন্টও সদ্য তাদের নির্বাচনি ইশতাহার প্রকাশ করেছে৷ তাতে জোর দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর সরকারি নজরদারি, খবরদারি বন্ধ করার ওপর৷ দেশে টেলিফোন এবং ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদী যেভাবে তাঁর পছন্দের দু-একটি সংস্থাকেই একচেটিয়া কর্তৃত্ব কায়েম করার সুযোগ করে দিয়েছেন, তার অবসানের কথা বলা হয়েছে বামদের ইশতাহারে৷ বলা হয়েছে ন্যূনতম মজুরি মাসে ১৮,০০০ টাকা করার কথা৷ যদিও এই সবকটি ইস্যুই এই মুহূর্তে ভারতের প্রেক্ষিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কোথাও বাস্তবের মূল সমস্যাগুলো থেকে সম্পর্কবিযুক্ত মনে হয়েছে বামেদের ইশতাহারকে৷ তুলনায় তৃণমূল কংগ্রেস এবং জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য