1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোবাইল কোর্ট নিয়ে কেন এত বিতর্ক?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ মার্চ ২০২০

বাংলাদেশে মোবাইল কোর্ট এখন চলছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ দিয়ে৷ হাইকোর্ট আগেই মোবাইল কোর্ট বাতিলের রায় দিয়েছে৷ এই অবস্থায়ও মোবাইল কোর্টের অপব্যহার থামছে না৷ নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে৷

https://p.dw.com/p/3ZWi3
ছবি: Bdnews24.com

সবশেষ গত শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডিসি অফিসে মোবাইল কোর্ট এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে নতুন করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে৷ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তদন্ত করে ওই ঘটনায় আইনের অপব্যবহার ও লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে৷ সোমবার কুড়িগ্রামের ডেপুটি কমিশনার সুলতানা পারভিন ও তিনজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ এই ঘটনায় হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনেরও শুনানি চলছে৷ হাইকোর্ট সাংবাদিক আরিফুলকে আটক ও সাজা দেওয়ায় অনিময়মের ঘটনা দেখতে পুরো নথি তলব করেছে৷ আরিফুলকে নির্যাতনও করা হয়েছে৷ আগামী সোমবার হাইকোর্ট সেই নির্যাতনের ঘটনা তার মুখে শুনবেন৷
রিটকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান জানান, ‘‘মোবাইল কোর্ট আইনেই অপব্যহারের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে৷ কারণ এই আইনে যে ম্যাজিষ্ট্রেট আটক করেন, তিনিই সাক্ষ্য প্রমাণ দেন এবং তিনিই শাস্তি দেন ৷ ফলে তিনি যা খুশি তা করতে পারেন৷ প্রচলিত আইনে পুলিশ আটক করে৷ শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা আদালতের৷ সব ক্ষমতা একজনের হাতে থাকলে তার অপব্যবহারতো হবেই৷’’

মোবাইল কোর্ট আইনেই অপব্যহারের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে: ইসরাত জাহান

সাংবাদিক আরিফের ক্ষেত্রে এমনকি মোবাইল কোর্টের যে আইন আছে তাও মানা হয়নি বলে জানান তিনি৷ শুধু ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে মোবাইল কোর্টের নামে আনাচার করা হয়েছে৷ তিনি বলেন,‘‘অভিযান হয়েছে টাস্কফোর্সের নামে৷ শাস্তি দিয়েছে মোবাইল কোর্ট মাদকদ্রব্য আইনে৷ অভিযান চালানো হয়েছে মধ্যরাতে, ঘরের দরজা ভেঙে৷ আবার ঘটনাস্থলে শাস্তি না দিয়ে ডিসি অফিসে দেয়া হয়েছে৷ এখানে সংবিধান, মাদক আইন, ফৌজদারি আইন এবং মোবাইল কোর্ট আইন সব কিছুরই লঙ্ঘন হয়েছে৷’’
মোবাইল কোর্টের নামে এই স্বেচ্ছাচারি ঘটনার আরো অনেক উদাহরণ আছে৷ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে লক্ষ্মীপুরের তখনকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন৷
২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আশরাফুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে নিষেধ করায় শিক্ষক মোনতাজ উদ্দিনকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে শাস্তি দেয়ার উদ্যোগ নেন তিনি৷ পরে তাকে পা ধরতে মাফ চাইতে বাধ্য করা হয় শাস্তির ভয় দেখিয়ে৷
২০১১ সালে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবুল হাসেমের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক সিলেট বাণী পত্রিকার সাংবাদিক আকবর হোসেনকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তিন মাসের জেল দেয়া হয়৷
আর গত বছরের অক্টোবরে সংবাদ মাধ্যমে ১২১ শিশুকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ড দেয়ার ঘটনা প্রকাশ পায়৷ আদালত গত ১১ মার্চ ওই দণ্ড বেআইনি ঘোষণা করে৷ হাইকোর্ট বলেন, ‘‘এটা শুধু বেআইনি নয়, চূড়ান্ত অমানবিকতা৷’’

মোবাইল কোর্টের ম্যাজিষ্ট্রেটরা নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না: ব্যারিস্টার আজিম

মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন বিচার বিভাগের বাইরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটরা৷ ২০১৭ সালের ১১ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ২০০৯ সালের আইনের ১১টি ধারা ও উপধারা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট৷ একইসঙ্গে, এই আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত৷ রায়ে বলা হয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া সংবিধানের লঙ্ঘন এবং তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর আঘাত৷ এটি ক্ষমতার পৃথককরণ নীতিরও পরিপন্থী৷ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ কর্ম-কমিশনের সব সদস্যরা প্রশাসনিক নির্বাহী৷ একজন নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তারা প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম বিচারিক ক্ষমতা চর্চা করতে পারেন না৷
কিন্তু সরকার এর বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করলে তা গ্রহন করে  হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা আপিল বিভাগ স্থগিত করে৷ আর সেই স্থগিতাদেশের ভিত্তিতে এখনো মোবাইল কোর্ট চলছে৷
মোবাইল কোর্ট বাতিলে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম বলেন,‘‘আমি তিন জন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির পক্ষ হয়ে ওই রিট করেছিলাম৷ মোবাইল কোর্টের অপব্যবহারের প্রশ্নের চেয়ে বড় কথা হলো এটা সংবিধানের মৌলিক নীতির পরিপন্থী৷ কারণ বিচারকাজে নিয়োজিত নয় এমন কেউ বিচার করতে পারেন না৷ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটরা বিচারক নন৷ সংবিধানে বিচার বিভাগ আলাদা ও স্বাধীন থাকার কথা বলা আছে৷ আর মোবাইল কোর্টের ম্যাজিষ্ট্রেটরা নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না৷ কারণ তারা প্রশাসনের অধীন৷ পুলিশের কাজ বিচার করা নয়৷ যারা ম্যাজিস্ট্রেট তারা আইন পড়ে আসেন না৷ তাদের প্রশিক্ষণও নেই৷ যার কাজ তাতে করতে হয়৷ তাই আমরা এখন মোবাইল কোর্টের অপব্যবহার দেখতে পাচ্ছি৷ এটা নিজের জন্য বা ভাই ব্রাদারের জন্য ব্যবহার করা হয়৷’’
তিনি বলেন,‘‘সরকার মোবাইল কোর্ট বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে৷ কিন্তু এর শুনানি শুরু হচ্ছে না৷ ইচ্ছা করে মোবাইল কোর্ট টিকিয়ে রাখতে সরকার আপিল শুনানি ঝুলিয়ে রেখেছে৷''