1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৃত্যুর দিন গোনা

মুরালি কৃষ্ণন / এসিবি১০ আগস্ট ২০১৩

সন্তান হারানোর বেদনা মায়ের কাছে যে কতটা, কেউ তা বোঝেনা৷ তাই তাঁরা ঘরছাড়া৷ আশ্রয় তখন বৃন্দাবন৷ সবার কাছে তীর্থস্থান৷ কিন্তু বিধবাদের কাছে এই শহরটা তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু৷ বৃন্দাবন তাই এখন বিধবাদের শহর৷

https://p.dw.com/p/19NAv
Thema Witwen in der indischen Stadt Vrindavan im nördlichen Bundesstaat von Uttar Pradesh. Caption 9:  Despite their age, many widows who live in cramped quarters cook their own meals, clean their own clothes and utensils.  Copyright: DW/Murali Krishnan
ছবি: DW/M. Krishnan

৬০ হাজার মানুষের শহর বৃন্দাবন৷ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় সবার কাছেই অতি চেনা ভারতের উত্তর প্রদেশের এই শহরটির মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ২০ ভাগই বিধবা৷ প্রত্যেকের জীবনের একই গল্প৷ পেলেপুষে সন্তানদের বড় করেছেন, প্রতিষ্ঠিত হয়ে সেই সন্তানরাই মাকে করেছেন ঘরছাড়া৷ স্বার্থের কোনো দ্বন্দ্ব নেই৷ আসল সমস্যা কুসংস্কার৷ স্বামী মারা যাওয়ায় পরিবারে অমঙ্গল নেমে আসার জন্য নিজের মাকেই দায়ী করে সন্তান৷ মাকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিতে তখন একটুও তাদের বাঁধেনা৷ সন্তানই যখন কুসংস্কারের ঊর্ধে উঠতে পারে না, পরিবারের অন্যরা কি বুঝবে! অমঙ্গলের হাত থেকে পরিবারকে বাঁচানোর নামে ভারতে বিধবাদের ঘরছাড়া করা তাই নিত্যদিনের ঘটনা৷ এমন বিধবাদের সবচেয়ে বড় আশ্রয় এখন বৃন্দাবন৷

স্বর্গসুখ নেই সেখানে৷ বরং প্রায় নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় তাঁদের৷ শ্রীকৃষ্ণের শৈশব কেটেছে যেখানে, বিধবারা সেখানে যান জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে৷ পার্বতী দেবী, পার্বতী রানী সোমিন্দর, জানকি ঝা – ২০ হাজার বিধবাদের মধ্যে যাঁর সঙ্গেই কথা বলবেন সকলেই বলবেন এক কথা – সংসারে ফেরার কোনো উপায় নেই, তাই বৃন্দাবনেই মরতে চান তাঁরা৷

Thema Witwen in der indischen Stadt Vrindavan im nördlichen Bundesstaat von Uttar Pradesh. Caption 10: Most of these women like Parvati Devi who come to Vrindavan want a dignified ending to their lives because of this ordeal they have gone through. Their numbers are increasing with every passing year. Copyright: DW/Murali Krishnan
পরিবার পরিত্যক্ত বিধবাদের কাছে কোনোরকমে বেঁচে থাকাটাই অনেকছবি: DW/M. Krishnan

৭০ বছর বয়সি পার্বতী দেবীর জীবন আট বছর ধরে চলছে অন্য নিয়মে৷ হাতে লাঠি নিয়ে প্রতিদিনই তাঁকে বেরোতে হয় ভিক্ষা করতে৷ জরাজীর্ণ, ছোট্ট একটা ঘর জুটেছে৷ তাতেই তিনি মহাখুশি৷ কত বিধবার তো তা-ও জোটেনা৷ রান্না করা, থালা-বাসন, কাপড়-চোপর ধোয়া – হেন কাজ নেই যা তাঁদের করতে হয় না৷ বৃন্দাবনে চার হাজারের মতো মন্দির আছে৷ তাই পূণ্যার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে৷ দু'বেলা অন্ন মুখে দিয়ে কায়ক্লেশে বেঁচে থাকার একটা ব্যবস্থা হয়ে যায় কোনোরকমে৷

পরিবার পরিত্যক্ত বিধবাদের কাছে কোনোরকমে বেঁচে থাকাটাই অনেক৷ কে দেখবে তাঁদের? ৬৫ বছর বয়সি জানকি ঝা জানালেন আপনজনেরা তাঁর এই দুর্ভোগে ভরা জীবনের কথা জেনেও কিছু করছেন না, ‘‘আমি যে এমন মর্মান্তিক জীবনযাপন করছি, আমার পরিবার সেটা জানে৷ কিন্তু তাঁরা এ বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয় না৷ মৃত্যু এখানে হবে – এই সত্যটা আমাকে মেনে নিতে যে হবেই৷''

হালে কিছু মানবাধিকার সংস্থা বৃন্দাবনের বিধবাদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছে৷ গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনগুলি ভারতের সুপ্রিম কোর্টেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷ ইতোমধ্যে সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে আদালত৷ উত্তর প্রদেশ সরকার তারপর বিধবাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছে একটি প্যানেলকে৷ দেখা যাক, বৃন্দাবন বা ভারতের অন্যান্য শহরের ঘরছাড়া বিধবাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসে কিনা!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য