1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যোগ ব্যায়ামের ছবি তুলবে ইসরো!

৮ জুন ২০১৮

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগাম সতর্কতা কিংবা জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই নয়, এবার যোগ ব্যায়াম শিবিরের ছবি তুলতে কাজে লাগানো হবে ইসরোকে৷

https://p.dw.com/p/2zAaW
ফাইল ছবিছবি: picture-alliance/Indian Press Information Bureau

ভারতে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আয়ুর্বেদ, যোগ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা, ইউনানি, সিদ্ধা এবং হোমিওপ্যাথি বিভাগ নিয়ে তৈরি হয়েছে আয়ুষ মন্ত্রক৷ সবগুলিই প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি৷ যোগ-‌প্রচারে মোদীর এই মন্ত্রক এবার দ্বারস্থ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির৷

মোদী জমানায় ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক যোগ ব্যায়াম দিবস৷ প্রতি বছর ২১ জুন এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে৷ বলাই বাহুল্য, মোদীর উদ্যোগে ভারত যোগাভ্যাসে বিশ্বের দরবারে নিজেকে তুলে ধরেছে৷ দেশের সাধারণ মানুষ এই দিনটিকে কতটা গ্রহণ করেছে, সেই তথ্য পেতে চান মোদী৷ গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, দিল্লি, হরিয়ানা, আমেদাবাদ, চণ্ডীগড়, লখনউয়ের অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ হাজারের মতো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন৷ এবার কত মানুষ এলো?‌ এই প্রশ্নের জবাব চাই সরকারের৷ তাই যোগ দিবসে কত মানুষের অংশগ্রহণ, তা একেবারে নিখুঁতভাবে হিসেব কষতে উপগ্রহ প্রযুক্তিকে কাজে লাগাবে ভারত৷

এজন্য ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো প্রধানকে চিঠি লিখেছেন আয়ুষ মন্ত্রী শ্রীপদ নাইক৷ এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ নানা মহলের কটাক্ষ, দেশজুড়ে কৃষকের আত্মহত্যা, দলিত নির্যাতন, বেকারত্ব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিহামলাসহ সব সমস্যায় সরকারের মাথাব্যাথা না থাকলেও যোগ দিবস নিয়ে উপগ্রহে পৌঁছে গেছে মোদী সরকার৷

কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রকের বিশেষ সচিব রাজেশ কোটেচা জানিয়েছেন, ‘‌‘‌২১ জুন সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রকাশ্য যোগ শিবিরের ছবি পেতে ইসরোর সাহায্য চাওয়া হয়েছে৷ এখনও সরকারিভাবে এখনও সম্মতি আসেনি৷ তবে, নৈতিকভাবে ইসরো কর্তৃপক্ষ আমাদের আবেদনে গঠণমূলক সাড়া দিযেছে৷'‌'‌ প্রসঙ্গত, গতবছর ১৮-‌২০টি জায়গায় প্রকাশ্য যোগ শিবিরে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষ অংশ নিয়েছিলেন৷ সবমিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় ১০ কোটিতে পৌঁছেছিল বলে দাবি করেছে সরকার৷ এবার সেই লক্ষ্যমাত্রা ২০ কোটি৷

এই লক্ষ্যমাত্রা যে পূরণ হয়েছে, তা প্রমাণ করতেই ছবি‌সহ তথ্য পেশ করতে চায় মোদী সরকার৷ সেই কারণেই ইসরো'র মতো সংস্থাকে কাজে লাগানোর চিন্তা দানা বেঁধেছে সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের মস্তিস্কে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবার দেরাদূনে যোগ শিবিরে অংশ নেবেন৷ সেখানকার ‌ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট ময়দানে অন্যান্যদের সঙ্গে যোগাভ্যাস করবেন তিনি৷

এদিকে, দু-‌দিন আগেই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোকে ১০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ গবেষণার পাশাপাশি মহাকাশযান উৎক্ষেপনের জন্য এই বরাদ্দ বলে জানিয়েছে সরকার৷ এই অর্থে জিএসএলভি মার্ক-‌থ্রি এবং পিএসএলভি-র গবেষণার কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে ইসরো৷ দিল্লিতে সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এই মুহুর্তে উপগ্রহ উৎক্ষেপনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্যতম ভরসা ইসরো৷ কম খরচে কক্ষে উপগ্রহ স্থাপনে দক্ষ ইসরো৷ নিরবচ্ছিন্ন গবেষণার সাহায্যে উপগ্রহ উৎক্ষেপনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতীয় এই সংস্থার৷

অনেকেই মনে করছেন, একদিকে সরকারি অর্থ সাহায্য, অন্যদিকে সরকারের অন্যায় আবদার, ইসরো কর্তৃপক্ষের কাছে যা অস্বস্তির কারণ হতেই পারে৷ রাজধানী দিল্লিতে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা অলিন্দে বিচরণ করেছেন প্রাক্তন আধিকারিক, তথা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সুগত হাজরা৷

সরকার যা শুরু করেছে তা আসলে ‘‌মশা মারতে কামান দাগা’‌র সমান: সুগত হাজরা

যোগ দিবসের ছবি সংগ্রহ করতে ইসরোকে কাজে লাগানোর ভাবনা প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‌‘‌ইন্টারন্যাশনাল যোগ দিবসের প্রচার ভালোভাবেই হচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক স্তরে অনেকটাই সফল বলা চলে৷ সরকারি উদ্যোগের আগে থেকেই যোগাভ্যাসের চল ভারতে আছে৷ ইদানিং ভারতকে যোগার উৎপত্তিস্থল প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ ব্র্যান্ডিং চলছে৷ গত বছর ২১ জুন ‘‌আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে'‌ গোটা দেশে প্রায় ১০ কোটি মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল৷ এবার একশ' শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, অর্থাৎ, সরকারের আশা ২০ কোটি মানুষ অংশ নেবে। এই নিয়ে সরকার যা শুরু করেছে, তা আসলে ‘‌মশা মারতে কামান দাগা'‌র সমান৷'‌'‌

সুগতর কথায়, ‘‌‘‌কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক যদি শুধুমাত্র প্রচারের জন্য এমনটা করে থাকেন, তাহলে কিছু বলার নেই৷ কিন্তু, হঠাৎ ইসরোকে কাজে লাগানোটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না৷ এখন ইসরো'‌র উচিত হবে সরকারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া৷ এর কোনও যৌক্তিকতা নেই।'‌'‌ তাঁর মতে, যোগ ব্যায়ামের ছবি সংগ্রহ করতে প্রশাসনিক পরিকাঠামোই যথেষ্ট ছিল৷ তাছাড়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তো ছবি, ভিডিও প্রচার করবেই। এতকিছুর পরে আচমকা ইসরোর দ্বারস্থ হওয়া বড্ড বাড়াবাড়ি৷

এদিকে, ইতিমধ্যেই আয়ূষ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা হয়েছে ইসরোর৷ রাজেশ কোটেচারের অনুরোধ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে ইসরো৷ যদিও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি তারা৷ তবে, প্রাথমিক অনুমতি মিলেছে বলে সরকার সূত্রের দাবি৷