1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যে দেশে সমকামিতার শাস্তি ধর্ষণ

৭ অক্টোবর ২০১৮

ক্যামেরুনে ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর চর্চা অবৈধ হলেও সমকামীদের এর আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হয়৷ সমকামী নারীদের ডাইনি আখ্যা দিয়ে নির্যাতন ও ধর্ষণ করার নজিরও আছে অনেক৷

https://p.dw.com/p/361FW
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Kurokawa

এমন কয়েকটি ঘটনাই তুলে ধরেছে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন৷ ক্যামেরুনে বহু সমকামী নারী-পুরুষ নির্যাতনের শিকার হলেও সবাই নিজেদের নির্যাতিত হওয়ার কথা জানাতে ভয় পায়৷ তবে ভিভিয়ানে ও ফেদেরিকে এখন অন্য দেশে অবস্থান করায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন৷

লেসবিয়ান হওয়ার কারণে ভিভিয়ানেকে ডাইনি আখ্যা দিয়েছিল সেখানকার গির্জা৷ ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াওন্দেতে কেবল গির্জায় নয়, তাঁর স্কুলেও শুনতে হয়েছে, ‘‘সমকামী হওয়া কেবল পাপ নয়, এর মানে হলো কোনো খারাপ আত্মা তোমার উপর ভর করেছে৷''

ভিভিয়ানে এখন ফ্রান্সে আছেন৷ তাঁর প্রেমিকার সহায়তায় সেখানে আশ্রয় পেয়েছেন তিনি৷ সেখান থেকেই ফোনে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে ঘটনাটি জানান৷ ভিভিয়ানের কাছে মনে হয়েছিল, চার্চে যা বলা হয়েছে তাই হয়ত ঠিক, খারাপ কোনো আত্মা ভর করার কারণেই হয়ত মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন তিনি৷ তাই গির্জায় প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন এ থেকে মুক্তি পেতে৷ এর ফল হলো উলটো৷ ১৪ বছরের ভিভিয়ানকে চার বছর পর ডাইনি ঘোষণা করা হলো, দেয়ালে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হলো তাকে৷ এখানেই শেষ নয়, যে ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছিল, পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে ঐ ব্যক্তি তাঁকে ধর্ষণ করল৷

প্রায় একই চিত্র দেখা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত আর ইকুয়েডরে৷ পরিবারের সদস্য, অপরিচিত এবং অপরাধীদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন সেই দেশগুলোর সমকামীরাও৷ সেখানেও অনেকেই মনে করেন, সমকামিতা একটা মানসিক ব্যধি এবং ধর্ষণই হলো এর ওষুধ৷

ভিভিয়ানে একা নন, ক্যামেরুনের বেশ কয়েকজন সমকামী এসব ঘটনার কথা জানিয়েছেন থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে৷ এমনকি সমকামী পুরুষ ও নারীকে তাঁদের পরিবারেরসদস্যরা হত্যাও করেন৷ ক্যামেরুনে সাধারণ মানুষের মধ্যে কালো জাদুর প্রতি অনেকেরই বিশ্বাস রয়েছে৷ যদিও দেশে এর চর্চা করা অবৈধ৷ কিন্তু এসব রোধে কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেয় না৷

আফ্রিকাজুড়ে সমলিঙ্গের সম্পর্ক নিয়ে ট্যাবু রয়েছে৷ ২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্স অ্যান্ড ইন্টারসেক্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, আফ্রিকার ৫৪টি দেশের মধ্যে ৩৩টিতে সমকামিতা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়৷ সমকামী প্রমাণ হলে ক্যামেরুনে পাঁচ বছর কারাভোগ করতে হয়৷ দেশটিতে গত বছর সমকামীদের উপর ৬০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ প্রতি ৫ জন সমকামী নারীর মধ্যে একজন এবং প্রতি ১০ জন সমকামী পুরুষের মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে৷

ভিভিয়ানের পরিবার যখন তাঁর ব্যাপারটা জানতে পারে, তাঁরা তাঁকে গ্রামের এক ওঝার কাছে নিয়ে যায়৷ ঐ ব্যক্তি প্রথমে তাঁকে মুরগির রক্ত পান করতে বলে, এরপর মলাশয়ে মরিচের গুড়া ঢুকিয়ে দেয়৷ তাদের ধারণা, এর ফলে সে যে যন্ত্রণা পাবে, তার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হবে৷ এরপর স্থানীয় গির্জার এক যাজকের কাছে যৌতুক নিয়ে ভিভিয়েনকে বিয়ে দেয় পরিবার৷ ঐ ব্যক্তি তাঁর চেয়ে ৩০ বছরের বড়৷ ক্যামেরুনে ধর্ষণ যদিও অপরাধ হিসেবে গণ্য, কিন্তু স্বামীর দ্বারা ধর্ষণ অপরাধ নয়৷ ভিভিয়ান বলেন, ‘‘ক্যামেরুনে যাজকরা ঈশ্বরের মতো৷ ঈশ্বর তো ধর্ষণ করতে পারেন না৷ আর কেউ যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে, তাহলে সে শয়তান হিসেবে চিহ্নিত হয়৷''

ফেদেরিকের ঘটনাও অনেকটা একই রকম৷  ২০১৬ সালে তিনি যখন কর্মস্থল থেকে কাজ শেষে ফিরছিলেন, তখন রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয় তাঁকে৷ ধর্ষণকারীরা বলছিল, সমকামিতার জন্যই এ শাস্তি দেয়া হলো তাঁকে৷  

ফেদেরিকে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে জানান, তাঁর এক বন্ধু ধর্ষিত হওয়ার পর আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন৷ তবে কষ্টের চেয়ে তাঁর মধ্যে রাগ হয়েছিল বেশি৷ তাই তিনি সমকামীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন৷ ক্যামেরুন থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন৷ তিনি জানান, ‘‘কেউ আমাদের রক্ষা করবে না, কেউ আমাদের মুক্তি দিতে এগিয়ে আসবে না৷ এটা আমাদের লড়াই, যা আমাদেরই চালিয়ে যেতে হবে৷''

এপিবি/এসিবি (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)

আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷