1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যোগীরাজ্যে আরো মন্ত্রী-বিধায়ক বিজেপি ছাড়লেন

১৩ জানুয়ারি ২০২২

উত্তরপ্রদেশে আরো অনগ্রসর শ্রেণির বিধায়ক বিজেপি ছাড়লেন। তিনদিনে সবমিলিয়ে আটজন বিধায়ক দল ছেড়েছেন।

https://p.dw.com/p/45TCC
যোগী আদিত্যনাথ মন্ত্রিসভা থেকে মোট তিনজন মন্ত্রী ইস্তফা দিয়েছেন। ছবি: Samiratmaj Mishra/DW

শুরু করেছিলেন স্বামীপ্রসাদ মৌর্য। মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, বিজেপি-তে এর জেরে ভূমিকম্প হবে। তার কথা বেশ কিছুটা মিলে গেছে। অনগ্রসর শ্রেণির (আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস)  মন্ত্রী, বিধায়করা একের পর এক বিজেপি ছাড়ছেন। বৃহস্পতিবারও যোগী মন্ত্রিসভার সদস্য ও অনগ্রসর শ্রেণির নেতা ধরম সিং সাইনি ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি সাহারানপুর থেকে চারবারের বিধায়ক। স্বামীপ্রসাদের সঙ্গে তিনিও বিএসপি থেকে বিজেপি-তে এসেছিলেন। এরপরই অখিলেশ যাদব টুইট করে ধরম সিং-কে সমাজবাদী পার্টিতে স্বাগত জানিয়েছেন।

এছাড়া  ফিরোজাবাদের বিধায়ক মুকেশ বর্মাও দল ছেড়েছেন। ফলে বিজেপি-তে রীতিমতো আলোড়ন দেখা দিয়েছে। যে রাজ্যে দল ক্ষমতায় আছে, সেখান থেকে পরপর আটজন অনগ্রসর শ্রেণির বিধায়ক ইস্তফা দিলেন, এমন কাণ্ড মোদী-শাহের জমানায় আগে হয়নি। তাই যোগী আদিত্যনাথ তো বটেই, পুরো দলকেই নাড়িয়ে দিতে পেরেছেন মৌর্য। সত্যিই দলে ভূমিকম্প শুরু হয়েছে।

শুক্রবার স্বামীপ্রসাদ আবার বোমা ফাটাবেন বলে জানিয়েছেন। তার এই কথার পরই আলোচনা শুরু হয়েছে, তাহলে কি আরো বিধায়ক বিজেপি থেকে ইস্তফা দেবেন এবং তাদের সকলকে নিয়ে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেয়ার কথা ঘোষণা করবেন স্বামীপ্রসাদ?

শুধু স্বামীপ্রসাদ, সাইনিই নন, আরো এক অনগ্রসর শ্রেণির প্রভাবশালী মন্ত্রী দারা সিং চৌহান যোগী আদিত্যনাথ মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। অনগ্রসর শ্রেণির ভোটব্যাংকে তারও বেশ ভালো প্রভাব আছে। সবমিলিয়ে তিনজন মন্ত্রী বিজেপি ছেড়েছেন।  আর বাকি যারা ইস্তফা দিয়েছেন, তারা সকলেই স্বামীপ্রসাদের অনুগামী। পাঁচ বছর আগে তার সঙ্গেই এই নেতারা বিএসপি ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন।

আর কতজন?

উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক মহলে এখন যে প্রশ্ন মুখে মুখে ঘুরছে, তা হলো, আর কতজন বিধায়ক বিজেপি ছাড়বেন? সূত্র জানাচ্ছে, এক-দুই দিনের মধ্যে আরো অন্তত পাঁচজন বিধায়ক বিজেপি ছাড়তে পারেন। সবমিলিয়ে বিজেপি ছেড়ে ১২ থেকে ১৫ জন বিধায়ক সমাজবাদী পার্টিতে নাম লেখাতে পারেন।

সূত্র আরো জানাচ্ছে, শুধু অনগ্রসররাই নন, আর দিন দশেকের মধ্যে বিজেপি ছেড়ে কয়েকজন ব্রাহ্মণ নেতাও বেরিয়ে যেতে পারেন।

বিজেপি-র ম্যারাথন বৈঠক

গত কয়েকদিনে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব উত্তরপ্রদেশ নিয়ে দফায় দফায়  ১৪ ঘণ্টারও বেশি বৈঠক করেছেন। স্বামীপ্রসাদ ও তার অনুগামীদের দল ছাড়ার পর এবং অখিলেশ যাদবের মোকাবিলায় কী কৌশল নেয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রবীণ সাংবাদিক ও উত্তরপ্রদেশ বিশেষজ্ঞ হরবীর সিং ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে যাদব বাদে বাকি অনগ্রসর এবং জাটভ বাদে অন্য দলিত গোষ্ঠীকে নিজেদের দিকে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এইবার দেখা যাচ্ছে, অনগ্রসরদের মধ্যে অনেক গোষ্ঠীর প্রভাবশালী নেতারা বিজেপি ছেড়ে সমাজবাদীতে চলে যাচ্ছেন। ফলে বিজেপি-কেও কৌশল ঢেলে সাজাতে হচ্ছে।''

উত্তরপ্রদেশ বিশেষজ্ঞ আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তাও ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''অনগ্রসরদের মধ্যে মৌর্য, রাজভর, সাগর, প্রজাপতি, বর্মা, বিন্দের মতো গোষ্ঠীর নেতা-বিধায়করা বিজেপি ছেড়ে যাচ্ছেন। এটা দলের কাছে বড় ধাক্কা। সেজন্যই বিজেপি-কে এখন ম্যারাথন বৈঠক করতে হচ্ছে।''

মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

হরবীর মনে করেন, ''ভোটের আগে এই যে একঝাঁক অনগ্রসর শ্রেণির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী বিজেপি ছেড়ে সমাজবাদীতে নাম লেখাচ্ছেন, তার একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব আছে। অন্তত এই বার্তাটা যাচ্ছে, সমাজবাদী পার্টির পাল্লা এবার ভারি।'' তিনি বলেছেন, ''পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় লোকদলের জোট হয়েছে। ফলে সেখানে জাঠ, মুসলিম ও যাদব ভোটের সিংহভাগ অখিলেশ পেতে পারেন। পূর্ব উত্তরপ্রদেশে যাদব বাদে অন্য অনগ্রসর গোষ্ঠীগুলি সমাজবাদী পার্টির দিকে চলে আসতে পারে। ফলে অখিলেশের দিকে পাল্লা ভারির ধারণা তৈরি হচ্ছে। আর রাজনীতি তো ধারণা তৈরির খেলা। এতদিন বলা হতো, সমাজবাদী পর্টি হলো যাদব-মুসলিমের দল। সেই ধারণাটা বদল করছেন অখিলেশ।''

শরদও বলছেন, ''ভোটের আগে এই ভাবে অনগ্রসর নেতাদের চলে যাওয়া বিজেপি-র কাছে শুভসংকেত হতে পারে না। এতদিন ভোটের আগে এইভাবে কংগ্রেসকে ভাঙিয়েছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে এবার খেলাটা উল্টে গেছে।''

স্বামীপ্রসাদ মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরের দিনই তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়েছে। কিন্তু তারপরেও অন্যদের দল ছাড়া আটকানো যায়নি।

উন্নাওয়ে ধর্ষিতার মা কংগ্রেস প্রার্থী

বছর পাঁচেক আগে উন্নাও খবরের শিরোনামে চলে এসেছিল ভয়ংকর ধর্ষণের জন্য। সেই ধর্ষিতার মা আশা সিং-কে উন্নাও থেকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। দলের নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এদিন ১৫০টি কেন্দ্রের প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করেছেন। সেখানে ৪০ শতাংশ আসনে নারী ও ৪০ শতাংশ আসনে যুব প্রার্থী দেয়া হয়েছে। প্রিয়াঙ্কার আশা, কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে নতুন প্রবণতার জন্ম দিল।

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই)