1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যোধপুরে বাউরি সংরক্ষণ করছেন এক বিদেশি

১১ মার্চ ২০২০

গোটা বিশ্বে পানিসম্পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ আধুনিক, প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধানসূত্র ছাড়াও আমাদের পূর্বপুরুষদের দেখানো পথে এগোলেও পানি সংরক্ষণ করা যে সম্ভব, এক ব্যক্তি হাতেনাতে তার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন৷

https://p.dw.com/p/3ZCF3
Ein Klassiker: Die Perlenflasche wird 50
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-J. Hildenbrand

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের যোধপুর শহরে প্রায় তিনশো বছর পুরানো ‘বাউরি' বা সিঁড়ির মতো দেখতে কুয়ার পানি একেবারে স্বচ্ছ৷ ক্যারন রন্সলি সময় পেলেই সেখানে যেতে খুব ভালোবাসেন৷ ক্যারন রন্সলি নামের ৭৫ বছর বয়সি আইরিশ এই ব্যক্তি ঐতিহাসিক এই শহরে প্রাচীন জলাধার সংস্কারের কাজ করেন৷ তিনি মনে করিয়ে দেন. ‘‘সাধারণত মহারানিদের নির্দেশেই এমন সব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল৷ তাঁরা এই শহরের মহারাজাদের রাজকুমারী অথবা রানি ছিলেন৷ পানি ও সাধারণ মানুষের জন্য পানির সরবরাহ নিয়ে তাঁরা সব সময়ে চিন্তা করতেন৷ নির্ভরযোগ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পানি ধরে রাখার কারণেই শহরের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা গেছে৷ আমার মতে, শহরের সেরা পানি নীচেই দেখা যাচ্ছে৷ এটি ভূগর্ভস্থ পানি৷''

পানি সংরক্ষণের ঐতিহ্য

ভারতের যে সব জায়গায় সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়, যোধপুর সেগুলির মধ্যে একটি৷ পুরানো দিনে স্টেপ ওয়েলই শহরের পানির মূল উৎস ছিল৷ টিউবওয়েল ও ভূগর্ভস্থ পানি তোলার অন্যান্য পদ্ধতি আসার পর সেই ঐতিহ্য বিস্মৃত হয়ে যায়৷ মাত্র এক বছর আগে রন্সলি জায়গাটির সংস্কার করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি হৃদয়বিদারক এক সংগ্রামে জড়িয়ে রয়েছি৷ মূল্যবান ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদেই আমি এই কাজ করি৷ এ সব জায়গা সত্যি মূল্যবান৷ এগুলি কোনো সাজানো পরিত্যক্ত ভবন নয়৷ পানি সঞ্চয়ের এই প্রণালী রাজস্থানের প্রাচীন যুগে সমাজের বাস্তববুদ্ধির অমূল্য দৃষ্টান্ত৷ তারা কীভাবে পানি সম্পদ একত্রিত করতো, তাদের অস্তিত্বের জন্য যার মূল্য ছিল অপরিসীম৷ আমাদের জীবনে পানির মূল্যের পবিত্র মর্যাদা দিতে এই স্থাপনাকে মন্দির হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে৷ '' 

ভারতে পানি সংকটের সমাধান দিচ্ছেন আইরিশ পরিবেশবিদ

পাম্পের মাধ্যমে এখান থেকে পানি সংগ্রহ করে পানি সরবরাহ বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ রন্সলি বলেন, ভারতের প্রতি ভালবাসা আসলে তাঁর দাদার কাছ থেকে পাওয়া, যিনি ঔপনিবেশিক ভারতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছিলেন৷ রন্সলি নিজে অনেক দেশে বসবাস করেছেন৷ কিন্তু যোধপুরের প্রাচীন জলাধারগুলি তাঁর জীবনে নতুন লক্ষ্যমাত্রা যোগ করেছে৷

জলাধার সংস্কারের প্রাসঙ্গিকতা

রন্সলি মাহিলাবাদ ঝলরা জলাধার বেশ দ্রুত পরিশোধন করেছেন৷ এককালে রাজপরিবারের নারী সদস্যরা ঝালরায় গিয়ে সাঁতার কাটতেন ও নিজেদের মনোরঞ্জন করতেন৷ যোধপুর শহরে পাঁচশোরও বেশি ঐতিহাসিক জলাধার রয়েছে, যেগুলি আজও মানুষের কাজে লাগতে পারে৷ পৌর কর্তৃপক্ষকে শুধু সেগুলি সংস্কার করে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে৷ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে প্রত্যুষ যোশী বলেন, ‘‘এ বিষয়ে সচেতনা বাড়াতে বিভিন্ন সংগঠন একাধিক স্তরে কর্মসূচি চালিয়েছে৷ তা সত্ত্বেও মানুষ প্রাচীর নষ্ট করে বা পানি দূষণের চেষ্টা করে৷ কিন্তু আমাদের সেটা থামাতে হবে৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমরা পানি সংকট দেখতে পাচ্ছি৷ এই সম্পদ সংরক্ষণ না করলে আমাদেরও জলসংকটের মুখোমুখি হতে হবে৷''

মান্দোর রাজ্যের শাসক রাও যোধা ১৪৫৯ সালে যোধপুর শহর পত্তন করেছিলেন৷ তখন থেকেই মেহরানগড় দুর্গ শহরের মূল প্রতীক৷ সেই দুর্গের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তৈরি ট্রাস্টই স্টেপওয়েল সংস্কারের জন্য অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে৷ ট্রাস্টের প্রতিনিধি করণী সিং জসৌল বলেন, ‘‘সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে আমাদের সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷ প্রথমত মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব৷ দ্বিতীয়ত, ব্যবহারের অভাবে সেগুলির মধ্যে নোংরা জমে গেছে৷ সে সব হাতে করে দূর করতে হবে৷ যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ নেই৷ শহরের যুব প্রজন্ম ও কিছু সংগঠন একযোগে স্টেপওয়েলগুলি পরিস্কার ও সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছে৷''

রন্সলির ছেলে ও মেয়ে ব্রিটেনে নিজেদের পরিবারের সঙ্গে থাকেন৷ মাঝেমধ্যে তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে যান৷ তবে তাঁর মতে, যোধপুরের পুরানো জলাধারগুলিও তাঁর পরিবারের মতো৷ ক্যারন রন্সলি বলেন, ‘‘আমার হৃদয়ে এক মা আছেন, আর সেটাই যথেষ্ট৷ এই সব জায়গাও আমার মা৷ তাই যেখানেই যাই না কেন, আমার গ্রহের সঙ্গে, আমার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে এক অসাধারণ সংযোগের অনুভূতি পাই৷ আমি জানি, আমার মা-ই সেরা পূর্বপুরুষ৷ অর্থাৎ এ সবও আমার মা৷ আর আমি তাদের জন্য এসেছি, তাদের যত্ন নিতে চাই৷ যে বাউরি নিয়ে কাজ করি, সেটি আমার পরিবারও বটে৷''

রন্সলির বয়স ৭৫৷ কিন্তু তিনি আরও বেশি স্টেপওয়েল বাঁচাতে আরও ৫০ বছর বাঁচতে চান৷

অশোক কুমার/এসবি