1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আমরা লজ্জা পাই’

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৬ জানুয়ারি ২০১৪

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অরাজনৈতিক ভাষা ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে৷ বিশেষ করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-নেত্রীরা রাজনৈতিক সমালোচনার চেয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণেই বেশি দক্ষ৷ আর এই আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত থাকে৷ তার সঙ্গে যোগ দেন অনুগতরা৷

https://p.dw.com/p/1AxAU
Kombobild Khaleda Zia und Sheikh Hasina
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিউল আলম বলেন, ‘‘তাদের ভাষা আমাদের লজ্জা দেয়৷ আর শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিউটের অধ্যাপক মজিবর রহমান মনে করেন, ‘‘অরাজনৈতিক ভাষা রাজনীতিকে আরো অসহিষ্ণু করে তোলে৷''

বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের মুখ থেকে বের হওয়া দুটি শব্দ ‘গোলাপি' এবং ‘ঘোমটা পড়া বুবুজান'৷ এই দুটি শব্দ দিয়ে কোন দু'জন রাজনীতিবিদকে ইঙ্গিত করা হয় তা সবার জানা৷ তাদের একজন আরেকজনকে কথায় কথায় পাকিস্তান অথবা ভারতে পাঠিয়ে দেন৷ একজনকে বলা হয় জামায়াতের আমির৷ তার জবাবে আরেকজনকে বলা হয় জাতীয় পার্টির আমির

নবম জাতীয় সংসদে এরকম আরো অনেক শব্দের ব্যবহারে একবার চরম বিরক্ত হয়েছিলেন সাবেক স্পিকার এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ৷ তিনি এতই বিরক্ত হয়েছিলেন যে সংসদের বাইরে গিয়ে কোন কোন সাংসদকে গায়ে তেল মেখে কুস্তি লড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন৷

নাম, উপ-নাম এবং বিশেষণ ব্যবহার ছাড়াও নেতা-নেত্রীরা কখনো কখনো অতীত আলোচনায় এতই নির্মম হয়ে ওঠেন যে তারা পরস্পরের দেশপ্রেম নিয়েই প্রশ্ন তোলেন৷ কেউ হয়ে যান রাজাকার৷ আবার কেউ নব্য বাকশাল৷ একজন আরেকজনকে খুনি, হত্যাকারী বলতেও দ্বিধা করেন না৷

তবে রাজনীতিবিদদের এই ভাষাকে মোটেই রাজনৈতিক মনে করেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিউল আলম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটি রাজনৈতিক দল আরেকটি রাজনৈতিক দলের কাজের সমালোচনা করবে সেটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু তা না করে নেতারা ব্যক্তিগত আক্রমণ, নিন্দা এবং অপপ্রচারে লিপ্ত৷ আর তাতে যেসব ভাষা ব্যবহার করা হয় তাতে আমরা লজ্জা পাই৷

‘‘পরস্পরকে অরাজনৈতিক ভাষা ব্যবহার করে ঘায়েল করার এই কৌশল বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক দিন ধরেই চলে আসছে৷ আর এই সময়ে মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে৷ এটা কোন সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয়৷ এই ভাষা দিয়েই বাংলাদেশের রাজনীতির মান সম্পর্কে ধারণা করা যায়৷''

ড. শফিউল আলম মনে করেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতেও এই ধরনের নিন্দা বা ব্যক্তিগত কুত্‍সা রটানোর রেওয়াজ আছে৷ তবে দুঃখ হল রাজনীতিবিদরা এর উর্ধ্বে উঠতে পারছেন না৷ তাদের ভাষা থেকে দেশের সাধারণ মানুষ কোন ইতিবাচক শিক্ষা পাচ্ছেনা৷ আর রাজনীতিবিদদের সমর্থকরা তাদের এজাতীয় কথাবার্তায় হাততালি দিয়ে আরো উত্‍সাহ দেন৷

তিনি বলেন, ‘‘দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল যেন রাজনীতি নয়, ঝগড়ায় লিপ্ত৷''

শফিউল আলম বলেন, ‘‘হয়ত সময়ের পরিবর্তনে রাজনীতি যখন আরো পরিশীলিত হবে৷ তখন হয়ত রাজনীতিবিদদের ভাষায়ও পরিবর্তন আসবে৷''

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিউটের অধ্যাপক মজিবর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজনীতিবিদদের এই ভাষা রাজনীতিকে আরো অসহিষ্ণু এবং সংঘাতময় করে তুলছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ব্যক্তি ও পরিবারকেন্দ্রিক৷ তাই তাদের সমালোচনা এবং আক্রমণও ব্যক্তি ও পরিবারকে কেন্দ্র করে৷ তারা মনে করেন ব্যক্তিগত আক্রমণের মাধ্যমে ব্যক্তিকে ঘায়েল করা গেলে দলও ঘায়েল হয়৷ তাই তারা রাজনৈতিক সমালোচনার পরিবর্তে ব্যক্তিগত কুত্‍সা বা সমালোচনায়ই বেশি উত্‍সাহী৷

অধ্যাপক মজিবর বলেন, ‘‘তাদের ভাষা থেকে নতুন প্রজন্মের কিছু শেখার নেই৷ বরং নতুন প্রজন্ম তাদের এই আচরণে বিরক্ত৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য