রূপকথার দুর্গে জি সেভেন সম্মেলন
২৬ জুন দ্বিতীয়বারের মতো জি সেভেন শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন হচ্ছে দক্ষিণ জার্মানির আলপাইন অঞ্চলে এলমাউ দুর্গে৷ পাঁচ তারকা এই দু্র্গের বিশেষত্ব কী? চলুন জানা যাক৷
দুর্দান্ত এক অবস্থান
এমন এক স্থানে এই দুর্গের অবস্থান, এখানে বারবার ফিরে আসা যায়৷ শ্লোস এলমাউ বা এলমাউ দুর্গ জার্মানি-অস্ট্রিয়া সীমান্তে মিউনিখ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত৷ আল্পস অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর এলাকাগুলোর একটি এটি৷ প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থানের কারণে যারা নীরবতা খোঁজেন, তাদের জন্য এই দুর্গ একটি চমৎকার স্থান৷
রোদ না থাকলেও চমৎকার
যখন সূর্যালোক থাকে না, তখনও এই দুর্গের চারপাশ উজ্জ্বল রঙে আচ্ছাদিত থাকে৷ বিস্তৃত এই এলাকায় সর্বত্রই সানবেডে ছাতার নীচে শুয়ে প্রকৃতি উপ৷ভোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে৷ মূল ভবনটির নাম দেয়া হয়েছে হাইডঅ্যাওয়ে, অর্থাৎ নিরালা৷ কিন্তু নীরবতা খুঁজে নেয়ার মতো অনেক জায়গাই পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে৷
ভিড়ের ভয় নেই
দ্য হাইডঅ্যাওয়ে নামটা বেশ যুৎসই হয়েছে৷ হোটেলটির মাত্র ৩৫ শতাংশ জায়গা ভাড়া দেয়া হয়৷ এত বড় হোটেলে এত কম জায়গা ভাড়া দেয়ার ঘটনা বেশ বিরল৷ হোটেলের বেশিরভাগ জায়গাই পাবলিক প্লেস৷ অর্থাৎ থাকার জায়গা শতভাগ বুকিং থাকলেও কখনই অতিরিক্ত ভিড় হওয়ার আশঙ্কা নেই৷ পাবলিক স্পেসের মধ্যে রয়েছে লাউঞ্জ, লাইব্রেরি, বইয়ের দোকান, পোশাকের দোকান এবং আরো নানা কিছু৷
সংগীতের বিনিময়ে হোটেলবাস
শ্লোস এলমাউ এর একটি কনসার্ট হলও রয়েছে, যেখানে সঙ্গীতশিল্পীরা বছরে দুইশটিরও বেশি কনসার্ট আয়োজন করেন৷ ফলে সংখ্যার দিক দিয়ে জার্মানির সবচেয়ে বড় কনসার্ট আয়োজকদের মধ্যে একটি এই হোটেল৷ মজার ব্যাপার হলো, যেসব সংগীতশিল্পী এখানে পারফর্ম করেন, তাদের কোনো সম্মানি দেয়া হয় না৷ বরং সংগীত পরিবেশনের বিনিময়ে তারা বিনামূল্যে হোটেলটিতে থাকতে পারেন৷ অতিথিরাও বিনামূল্যেই এসব কনসার্ট উপভোগ করেত পারেন৷
কাঠের বেঞ্চে ইতিহাস
এর আগে ২০১৫ সালে এই দুর্গ হোটেলে জি সেভেন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ তখন এই ছবিটি বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়ে পড়ে৷ তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল কিছু একটা বোঝাচ্ছেন এবং একটি কাঠের বেঞ্চে বসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা খুব মনোযোগ দিয়ে তা শুনছেন৷ এরপর থেকে হোটেলের সামনের এই বেঞ্চটি ফটোশ্যুটের এক জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে৷
সবখানেই হাতি
শ্লোস এলমাউয়ে সব জায়গাতেই হাতির উপস্থিতি৷ কাপড় থেকে শুরু করে সবকিছুতেই হাতি আর হাতি৷ এর পেছনে রয়েছে মজার এক গল্প৷ ভারতে থাকার সময় হোটেলের মালিক ডিটমার ম্যুলার-এলমাউ একটি দোকানের কোনে হাতির ছবি আঁকা একটি কাপড় পড়ে থাকতে দেখেন৷ ভারতীয় সংস্কৃতিতে হাতি সুবিচার এবং স্মৃতিশক্তির প্রতীক, এটা তিনি জানতেন৷ পরে হোটেলের প্রতীক হিসাবেও তিনি হাতিকেই গ্রহণ করেন৷
এত ছোট টেবিল কেন?
এলমাউ দুর্গ হোটেলে প্রত্যেকের পছন্দ অনুযায়ী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ মোট নয়টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে হোটেলে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো মিকেলিন স্টারড লুচে দি’ওরো, যার প্রধান শেফ ক্রিস্টোফ রাইনার৷ ১২ পদের খাবার নিয়ে এই আয়োজন করা হয়৷ প্রতিটি টেবিলের পাশে ছোট একটি টেবিল রয়েছে৷ এসব টেবিলে কে বসে? আপনার ব্যাগ৷
স্পা এর সুযোগ অফুরন্ত
এই গম্বুজাকৃতির কক্ষ দেখে স্পার্টান মনে হলেও এই ওরিয়েন্টাল হাম্মাম আসলে বেশ আধুনিক৷ ৫০০ বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের স্পায়ের মূল কক্ষ এটি৷ এছাড়া চারটি চিকিৎসাকক্ষ, তিনটি গম্বুজাকৃতি কক্ষ, দুটো বাষ্পীয় স্নানাগার, একটি ওরিয়েন্টাল টি লাউঞ্জ এবং একটি মাসাজ চিকিৎসাকেন্দ্রও রয়েছে৷ জি সেভেন সম্মেলনে বৈশ্বিক রাজনীতির চাপের মধ্যে এখানে একটু নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেতেই পারেন বিশ্বনেতারা৷
হোটেলের মধ্যে হোটেল
২০১৫ সালে জি সেভেন সম্মেলনের জন্য হোটেলের মধ্যে দ্য রিট্রিট নামে আরেকটি হোটেল চালু করে শ্লোস এলমাউ৷ দ্য হাইডঅ্যাওয়ে থেকে ১০০ মিটার দূরে অবস্থিত এটি৷ এতে রয়েছে ৪৭টি সুইট৷ বিশ্ব নেতারা এখানে অন্য অতিথিদের চেয়ে আলাদা থেকে নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারেন৷ জি সেভেনে কিছু সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং তাদের সহযোগীরা দ্য রিট্রিটে কক্ষ বরাদ্দ পান৷ বাকিদের অবশ্য দ্য হাইডঅ্যাওয়েতেই থাকতে হয়৷
এমন দৃশ্য থাকতে টিভির দরকার কী!
প্রতিটি বেডরুমের তিন পাশেই মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত কাঁচের দরজা৷ ফলে যেকোনো রুম থেকেই ভেটারশ্টাইন পর্বত এবং উপত্যকার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপভোগ করা যায়৷ এমন কক্ষে বাস করলে কি টিভির প্রয়োজন হয়? অবশ্য তারপরও সব কক্ষেই একটি করে টিভি রয়েছে৷ সম্মেলনের জন্য বরাদ্দ প্রতিটি কক্ষে একটি লিভিং রুম, একটি বাড়তি ছোট রুম এবং হলওয়ে রয়েছে৷