1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রেইনট্রি হোটেল ধর্ষণ মামলায় আপিলের প্রস্তুতি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ নভেম্বর ২০২১

রেইনট্রি হোটেল ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামির সাবাই খালাস পাওয়ার পর এখন আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ৷ রাষ্ট্রপক্ষ মনে করে এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আপরাধ প্রমাণের মত সব উপাদান আছে৷ উচ্চ আদালতে আসামিদের শাস্তি হবে৷

https://p.dw.com/p/43BI4
রেইনট্রি হোটেল ধর্ষণ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষছবি: MAHMUD ZAMAN OVI/bdnews24.com

এই মামলার রায় দেয়া বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার হওয়ায় মামলায় কোনো কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা৷ তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ মনে করেন, আইনমন্ত্রী যেভাবে বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহারের জন্য প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেয়ার কথা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন তাতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের ওপর চাপ বাড়বে৷ অবশ্য আইনমন্ত্রীর এই চিঠি দেয়ার আগেই ১৪ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি তার বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে চাকরি আইন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করেন৷

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোছাম্মৎ কামরুন্নাহার গত ১১ নভেম্বর এই মামলার রায় দেন৷ রায়ে আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেয়া হয়৷ খালাস পাওয়া অন্য চার আসামি হলেন- সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিম, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন৷

২০১৭ সালের ৬ মে ঢাকার বনানী থানায় এই ধর্ষণ মামলাটি দায়ের করা হয়৷ মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই বছরের ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বনানীর রেইন্ট্রি হোটেলে অস্ত্রের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়৷

মামলার তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ৭ জুন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন৷ একই বছরের ১৩ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক শফিউল আজম৷ এরপর মামলা ট্রাইব্যুনাল-৭ এ স্থানান্তর হয়৷ গত ২২ আগস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়৷ মামলায় ৪৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত৷ গত ৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ১২ অক্টোবর ধার্য করেন৷ ওই দিন জামিনে থাকা মামলার পাঁচ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত৷ কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় ১২ অক্টোবর মামলার রায় না দিয়ে ২৭ অক্টোবর রায়ের নতুন তারিখ ধার্য করেন আদালত৷

২৭ অক্টোবর প্রবীণ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদারের মৃত্যুতে নিম্ন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে৷ তাই রায়ের তারিখ ফের পিছিয়ে ১১ নভেম্বর ধার্য করা হয়৷ মামলায় সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ছাড়া আর সবাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন৷

শুরুতে মামলার পাঁচ আসামিই পলাতক ছিলেন৷ ২০১৭ সালের ১২ মে সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে সিলেটে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ১৫ মে গুলশান থেকে সাফাত আহমেদের দেহরক্ষী রহমত আলী ও পুরান ঢাকা থেকে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে৷ ১৭ মে গ্রেপ্তার করা হয় নাঈম আশরাফ ওরফে আব্দুল হালিমকে৷ তবে তারা সবাই ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর ও পরবর্তী সময়ে জামিন পান৷

১১ নভেম্বর মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক মোছাম্মৎ কামরুন্নাহার বলেন, ৭২ ঘন্টা পর ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না বলে পুলিশ যেন এই সময়ের মধ্যেই ধর্ষণের মামলা নেয়৷ বিচারকের এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷ ১৩ নভেম্বর আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা নেয়া যাবে না, এমন পর্যবেক্ষণ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক৷ বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাল (রোববার, ১৪ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেয়া হবে৷’’

তিনি যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা সংবিধান বিরোধী: আইনমন্ত্রী

রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার বিচারকের পাওয়ার সিজ (ক্ষমতা কেড়ে নেয়া) করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেয়া হবে বলে জানান তিনি৷

ওই দিন সন্ধ্যায় টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে আইনমন্ত্রী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তার রায় নিয়ে আমার কোনো কথা নেই৷ তবে তিনি যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা সংবিধান বিরোধী৷ তিনি ধর্ষণের পর ৭২ ঘন্টা পার হলে মামলা না নিতে পুলিশকে বলেছেন এটা অসাংবিধানিক৷ কারণ ফৌজদারি মামলা কখনো তামাদি হয় না৷ তাই আমি আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেব৷ তিনি যা ব্যবস্থা নেয়ার নেবেন৷’’

তার বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিচ্ছি৷ কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেই দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির৷’’

আইনমন্ত্রীর চিঠির আগেই অবশ্য ১৪ নভেম্বর ওই বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেন প্রধান বিচারপতি৷ তার চাকরি আইন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়৷

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মনে করেন, ‘‘বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহারে মামলার পরবর্তী বিচার কাজে কোনো প্রভাব পড়বে না৷ তবে এটা বিচারিক আদালতের বিচারকদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বিচারক স্বাধীনভাবে তার বিচার কাজ করবেন৷ আর তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তথা প্রধান বিচারপতির৷ আইনমন্ত্রী তাদের ব্যাপারে চিঠি দিয়ে বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহারের কথা বতে পারেন না৷’’

তার মতে, ‘‘বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলা হলেও এখন দেখা গেল তা নয়, এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রভাব আছে৷ রায় নিয়ে তো আপিল হবে৷ সেখানে বিচারক পর্যবেক্ষণে কী বলেছেন বা বিচার কী করেছেন তা উচ্চ আদালত এমনিতেই দেখবেন৷ সেখানেই তারা তাদের সিদ্ধান্ত দিতেন৷ এখন যেটা করা হয়েছে তাতে নিম্ন আদালতের বিচারকেরা স্বাধীনভাবে বিচার কাজ করতে গিয়ে চাপ অনুভব করবেন বলে আমি মনে করি৷’’

আপিলে আমরা বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে আসামিদের শাস্তি চাইব: বিশেষ পিপি

তার মতে, ‘‘আদালতের সব রায় তো সঠিক নাও হতে পারে৷ আদালত ভুল রায়ও দিতে পারেন৷ উচ্চ আদালতেও এরকম হয়েছে৷ তবে তা দেখার জন্য আদালতেরই নির্ধারিত প্রক্রিয়া আছে৷’’

এদিকে রেইনট্রি হোটেল ধর্ষণ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ৷ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি আফরোজা ফারহানা আহমেদ জানান, বুধবার মামলার রায়ের সার্টিফায়েড কপির জন্য আদালতে আবেদন করেছেন৷ কপি পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আপিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন৷

এই মামলায় বাদী নিয়োজিত আইনজীবী ফারুক আহমেদ জানান, ‘‘সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করতে হবে৷ আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আপিলে আমরা বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে আসামিদের শাস্তি চাইব৷ এই মামলা প্রমাণে যথেষ্ট এভিডেন্স আছে৷ আসামিদের ১৬৪ ধরায় জবানবন্দি আছে৷ অন্য সাক্ষীরা বাদির অভিযোগের সমর্থনে বক্তব্য দিয়েছেন৷ আসামিরা তো হোটেলে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেনি৷ আর যেসব সাক্ষী পরে আদালতে এসে সাক্ষ্য দেননি তাদের লিখিত বক্তব্য যা তারা দিয়েছেন তা গ্রহণ করার বিধান আছে৷’’