1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোজা রেখেছেন হিন্দু অভিনেতা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২২ এপ্রিল ২০২১

হিন্দুর সন্তান হয়ে রোজা রাখছেন টালিগঞ্জের এক অভিনেতা। তাতেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। নেটমাধ্যমে ট্রোলিংয়ের মুখে পড়েও অভিনেতা অবিচল তার সিদ্ধান্তে।

https://p.dw.com/p/3sNXS
Symbolbild Indonesien Frauen Moschee
ছবি: Reuter/Beawiharta

আপত্তি আগেও উঠেছিল। সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত জাহানের পর তালিকায় এবার অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের সাংসদ নুসরত বিয়ে করে মাথায় সিঁদুর পরে, হাতে চূড়া পরে সংসদে শপথ নিয়েছিলেন। এই ঘটনা নিয়ে নেটদুনিয়ায় ব্যাপক ট্রোল করা হয় মুসলিম অভিনেত্রীকে। এবার অভিযোগের আঙুল হিন্দু অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ের দিকে। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কলাকুশলীদের উৎসর্গ করে এই প্রথমবার রোজা রাখার কথা বলেছিলেন খ্যতিমান এই অভিনেতা। তার দাবি, "আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অনেক মুসলিম মেকআপ আর্টিস্ট, ড্রেসার রোজা রেখে কাজ করেন দিনের পর দিন। আমি না হয় আমার মতো করে তাদের প্রতি আমার ভালবাসা, সম্মান ফেরত দিলাম!” এতেই আক্রমণের মুখে পড়েছেন তিনি। অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তও গোমাংস খাওয়া নিয়ে মন্তব্যের জেরে সম্প্রতি কট্টরপন্থীদের অশালীন মন্তব্যের শিকার হয়েছেন।

রাজ্যে এখন বিধানসভা ভোটের গরম হাওয়া। সঙ্গে চলছে মেরুকরণের রাজনীতি। তার রেশ ধরে অনেক নেটনাগরিক তার উপর গোমাংস ভক্ষণ বা মুসলিম তোষণের অভিযোগ আনছেন। যদিও ভাস্বর তার উত্তরে লিখেছেন, "না, গরু আমি খাই না আর রোজা রাখলে কারোর পা চাটতেও হয় না। সবটাই নিজের ইচ্ছের ব্যাপার।”

দেবদূত ঘোষ

ভাস্বর দীর্ঘদিনের অভিনেতা। দলবদলের যুগেও তাঁকে কোনো রাজনৈতিক শিবিরে দেখা যায়নি। বড় পর্দার পাশে টেলিভিশনে ‘জয় বাবা লোকনাথ', ‘ওম সাঁইরাম' ধারাবাহিকে লোকনাথ এবং সাঁইয়ের চরিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হয়েছেন তিনি। মেকআপ আর্টিস্ট মহম্মদ নুরকে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর চরিত্রে রূপদানের জন্য কৃত্বিত্বও দিয়েছেন অতীতে। ভাস্বর জানিয়েছেন, হিন্দু সাধক লোকনাথ নিজেও নাকি কোরান পাঠ করতেন। তার মতে, "লোকনাথ বাবার এই আচরণ আমায় ছুঁয়ে গিয়েছিল। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আমার এই পদক্ষেপ।” 

এই পদক্ষেপকে নেটনাগরিকরা অনেকেই ভাল চোখে দেখছেন না। কিন্তু কী বলছেন তার সতীর্থরা?

টালিগঞ্জের অভিনেত্রী ও পরিচালক সুদেষ্ণা রায় ভাস্বরের এই মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বাঙালির চরিত্র এমনই হওয়া উচিত। ভাস্বর দেখিয়েছেন বাঙালিরা গোবলয়ের মতো নয়। রামকৃষ্ণও তো নামাজ পড়েছিলেন। ভাস্বর যা করেছেন, বেশ করেছেন।” সুদেষ্ণার পাশাপাশি অভিনেতা দেবদূত ঘোষও সমর্থন জানিয়েছেন ভাস্বরকে। তিনি বলেন, "আমাদের সংবিধানে ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে নাগরিকদের। ভাস্বরের উপর এমন আক্রমণে আমি খুবই আঘাত পেয়েছি। তাহলে তো সংবিধানটা তো পাল্টাতে হয়। শুটিংয়ের সময় আমাদের মুসলিম টেকনিসিয়ানরা যখন রোজা ভাঙত, আমরা একসঙ্গেই তো খাওয়াদাওয়া করেছি।” দেবদূত এ বারের টালিগঞ্জ বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চার সিপিআইএম প্র্রার্থী।

সমাজতত্ত্বের অধ্যাপিকা সুহৃতা সাহার যুক্তি, ইফতারে বা দুর্গাপূজায় একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া আর কোনো হিন্দুর রোজা রাখার বিষয়টি এক নয়। সুহৃতা বলেন, "আমি যে ধর্মের আচার পালন করতে চাইছি, তাতে সংশ্লিষ্ট ধর্মের মানুষদের অনুমোদন আছে তো? ভাস্বরের আন্তরিকতা নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলছি না, বরং যারা তাকে ট্রোল করেছে, তাদের নিন্দা করছি। কিন্তু এ ধরনের আপাত-উদার পদক্ষেপের নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে।” এরই সঙ্গে তিনি সংবিধানের সঙ্গে ধর্মকে গুলিয়ে ফেলার পক্ষপাতী নন।

ভোটের মরসুমে হঠাৎ করে রোজা রাখার বিষয়ে অনেকে রাজনীতির গন্ধও পাচ্ছেন। মানিকতলার একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক অরূপ দত্ত বলেন, "এতদিন পরে হঠাৎ রোজা রাখার প্রয়োজন কেন? তাও বিধানসভা ভোট চলাকালীন?” অবশ্য পবিত্র রোজার উপবাস প্রসঙ্গে ভাস্বর তার ফেসবুকে প্রবল প্রতিবাদ জানিয়ে লেখেন, "একজন জানতে চেয়েছেন আমি উপোস করি কিনা। আমার বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। তাই উপোস করার অভ্যেস আছে।”

এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক রজত রায় উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের ছবি তুলে ধরেন। ডিরোজিয়ানরা পুরোনো প্রথা ভাঙতে ধর্মের বিরুদ্ধে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। রজত বলেন, "বিদ্রোহ এভাবেই হয়। এখন তথাকথিত হিন্দু ধর্মের নয়া সংজ্ঞা তৈরি করা হচ্ছে। এখানে এটা করবে না, ওটা করবে না বলা হচ্ছে। নিচুতলার দলিত হিন্দুরা অনেকে বৌদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন। ভাস্বরের মত একান্ত ব্যক্তিগত হলেও এটা রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বলে ধরা যেতে পারে। তবে এই প্রতিবাদটা খুব একটা কার্যকর হবে না।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য