1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোমাদের সাহায্যে দুই জার্মান তরুণী

১৮ অক্টোবর ২০১০

ফ্রান্স থেকে বিতাড়িত রোমাদের জার্মান সরকার তাদের থাকার জন্য বেশ কিছু ফাঁকা বাড়িতে জায়গা করে দেয়৷ তাদের সাহায্যে এগিয়ে যায় দুই জার্মান তরুণী৷ ক্রিস্টিনা নাসটাসে এবং বারবারা থোর্ম৷

https://p.dw.com/p/PgOL
Roma in Deutschland und Europa
রোমাদের কয়েকজনছবি: picture alliance/dpa

খুব সম্প্রতি ফ্রান্সে রোমাদের বিতাড়িত করার ঘটনা আমরা শুনেছি৷ জোর করে তাদের ফেরত পাঠানো হয় নিজ দেশে৷ অনেকেই যেতে রাজি ছিল না কিন্তু তাদের ফ্রান্সে থাকার কোন উপায়ও ছিল না৷ চাকরি নেই, থাকার নির্দিষ্ট জায়গা নেই, সাহায্য করারও কেউ নেই৷ প্রায় কয়েকশ' রোমা পরিবার ফ্রান্স থেকে আসে জার্মানিতে৷ আশ্রয় নেয় বার্লিনে৷

ক্রিস্টিনা নাসটাসে সকাল আটটার সময় হাজির হয়েছে পুরনো, ধূসর, বিবর্ণ একটি বাড়ির সামনে৷ বার্লিনের টিয়ারগার্টেনের কাছে অবস্থিত বাড়িটি৷ খুব হালকাভাবে একটি নাম ধরে ক্রিস্টিনা কয়েক বার ডাকে৷ একটি জানালা থেকে একটি পর্দা হালকা সরে যায়৷

এই বিল্ডিং-এ বসবাস করছে বেশ কয়েকটি রোমা পরিবার৷ রোমানিয়া থেকে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে তারা এসেছিল পশ্চিম ইউরোপে৷ কিন্তু পশ্চিম ইউরোপের আর্থ-সামাজিক সুযোগ-সুবিধা দেখে কেউই আর নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়নি৷ সমস্যার শুরু হয় তখন থেকেই৷

৩২ বছরের ক্রিস্টিনা সমাজকর্মী৷ সে নিজেও রোমানিয়ার৷ রোমাদের জার্মান সমাজে একাত্ম করার কাজে সে নিজেকে নিয়োজিত করেছে৷ ক্রিস্টিনা বললেন, ‘‘এখানে রোমারা বসবাস করছে৷ তারা এখন আর লেওপল্ড প্লাট্স বা গোরলিৎসার পার্কে নেই৷ এই সব বাড়িতেই তারা থাকছে৷ বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় তারা জর্জরিত কিন্তু তারপরেও তারা এখানে থাকতে চায়৷''

Roma in Deutschland Kultur und Leben
রোমাদেরও রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য সংস্কৃতিছবি: DW

যে সব শিশু কোনদিন স্কুলে যায়নি

ক্রিস্টিনা অপেক্ষা করছে দুই বছরের ডেভিড এবং ওর মা আঙ্গেলার জন্য৷ তারা আসতেই তাদের নিয়ে ধীরে ধীরে একটি কিন্ডারগার্টেনের দিকে এগিয়ে যায় সবাই৷ কয়েক দিন আগে ডেভিডকে সেখানে ভর্তি করানো হয়েছে৷ মা এবং ছেলের জন্য সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা এটি৷ কারণ, এতদিন মা তাঁর ছেলেকে কোলে নিয়ে রোমানিয়ার রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করে বেড়াতেন৷ ক্রিস্টিনা আরো জানান, ‘‘এখানকার বেশির ভাগ রোমা শিশুই কোনদিন স্কুলে যায়নি৷ স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে এরা পরিচিতও নয়৷ তাই যে সব পরিবার জার্মানিতে থেকে যেতে চায় তাদের জন্য এটা একটি বড় সুযোগ৷ বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানোর, শিক্ষিত করে তোলার৷''

নিজ দেশে রোমাদের সাহায্য করার কেউ নেই৷ সরকার নিজেও বেশ উদাসীন৷ এসব রোমারা বড় হয় ট্রেলারে, বন-জঙ্গলে শিকার করে, পথে-ঘাটে হট্টগোল বাধিয়ে৷ যে সব রোমা জার্মানিতে এসেছে তাদের কারোরই প্রায় আক্ষরিক জ্ঞান নেই৷ কেউই জার্মান ভাষা জানেনা৷ এসব শিশুরা রোমানিয়ার রাস্তায় গাড়ির কাঁচ পরিস্কার করতো নয়তো ভিক্ষে করতো৷ বার্লিনে এসব রোমা পরিবার আসার পর একটি সমিতি ক্রিস্টিনা এবং তার এক বান্ধবীকে পাঠায়৷ তারা রোমা পরিবারদের সঙ্গে কথা বলে ঘুরে-ফিরে দেখছেন কোন্ পরিবারের কী প্রয়োজন৷ বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো থেকে শুরু করে কার কোন্ অধিকার রয়েছে জার্মানিতে থাকার সে সব বিষয়ে সব কিছুই তারা জানাচ্ছেন৷ ক্রিস্টিনার বান্ধবী বারবারা থোর্ম জানালেন, ‘‘ সবকিছুই এলোমেলোভাবে চলছিল৷ এর জন্য অবশ্য কেউই দায়ী নয়৷ দায়ী হল পরিবেশ৷ জার্মানিতে বাচ্চাদের আমরা ঘর থেকেই অনেক কিছু শেখাই৷ এখানে কিন্ডারগার্টেনে অনেক দেশের বাচ্চা আসছে৷ সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শেখার আছে৷ বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন সংস্কৃতির বাচ্চা – একদিক দিয়ে কিন্তু বিষয়টি ভালই৷ কাউকে তাড়িয়ে দিলে কোন সমস্যার সমাধান হয় না৷''

ডেভিড এবং আঙ্গেলাকে কিন্ডারগার্টেনে নিয়ে যাওয়ার পর ক্রিস্টিনা আর বারবারা বার্লিন্যার ডোমের কাছে চলে যায়৷ সেখানে অনেক পর্যটকের ভীড়৷ আর সেখানেই হাজির হয় রোমা শিশুরা৷ ভিক্ষের জন্য হাত পেতে দেয়৷ এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে বাচ্চাদের৷ সামনের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে হবে তাদের৷ সাহায্য করতে হবে সবাইকে৷ এগিয়ে যেতে হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক