1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউন নিয়ে যত বিভ্রান্তি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ জুন ২০২০

করোনায় বাংলাদেশের রেড জোনগুলোতে লকডাউনের সিদ্ধান্ত আছে৷ এখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকায় পূর্ব রাজাবাজার এবং ঢাকার বাইরে তিনটি এলাকা লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে৷ বাকিগুলো কবে হবে, কীভাবে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়৷

https://p.dw.com/p/3e32D
Bangladesch Ost Dhaka Lockdown Coronavirus
ছবি: DW/M. Rashed

টেকনিক্যাল কমিটির সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রামের যেসব এলাকায় প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় সর্বশেষ ১৪ দিনে ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছে সে সব এলাকা রেড জোন৷ আর ঢাকার বাইরে প্রতি লাখে ১০ জন৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনসংখ্যার হিসাব করেছে ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী৷ কিন্তু এখন জনসংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে৷ ফলে জনসংখ্যার অনুপাত নিয়ে জটিলতা হচ্ছে৷ স্থানীয় পর্যায়ে তাই লকডাউন ঘোষণা কঠিন হচ্ছে৷

কে লকডাউন ঘোষণা করছে?
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস৷ ওই এলাকায় বুধবার রাতে হঠাৎ করেই লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয় মাইকে৷ আর এই ঘোষণায় পুরো এলাকার মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন৷ তারা নানা জায়গায় ফোন করে জানতে চান বিষয়টি৷ কারণ এটা নিয়ে আগাম কোনো প্রচার ছিল না৷ পরে বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং জানান লকডাউনের ঘোষণা ভুল ছিলো৷ এরকম কেন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আসলে করোনা প্রতিরোধে আমরা আগের চেয়ে একটু বেশি বড়াকড়ি আরোপ করেছি বসুন্ধরা এলাকায়৷ আর তাতেই কিছু যুবক উৎসাহী হয়ে লকডাউনের কথা মাইকে প্রচার করেন৷’’

ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা

লকডাউন পূর্ব রাজাবাজার
লকডাউন ১৪ দিন, না ২১ দিন তা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে পূর্ব রাজাবাজারে৷ সেখানে লকডাউন শুরু হয় ৯ জুন থেকে৷ ১৪ দিনের হলে তা আগামী সোমবার শেষ হওয়ার কথা৷ কিন্তু বাসিন্দারা জানেন না ঠিক সোমবারে লকডাউন শেষ হবে কিনা৷ তারা শুনেছেন এটা ২১ দিন হতে পারে৷ তাহলে শেষ হবে ৩০ জুন৷

ওই এলাকার বাসিন্দা গাড়িচালক মাসুদ আহমেদ এই লকডাউনে দুই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন৷ তিনি একটি বাসার প্রাইভেট কার চালান৷ সেই বাসা আবার লকডাউনের বাইরে৷ তিনি সেখানে যেতে পারেন না৷ তিনি জানে না এখন তিনি বেতন পাবেন কিনা৷ আবার লকডাউন এলাকায় ভ্যানে করে শাকসবজি বিক্রি করা হলেও তার দাম চড়া বলে জানান তিনি৷ ওই এলাকায় অনেকেই আছেন যারা অন্য এলাকায় চাকরি করেন৷ সেখানে অফিস খোলা৷ এখন তাদের অফিস বেতন দেবে কিনা তা নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা৷ সরকার লকডাউন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও এব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়নি৷

ওই এলাকার আরেকজন বাসিন্দা সাংবাদিক আমিন আল রশীদ বলেন, ‘‘এলাকার যারা বাইরে বেসরকারি চাকরি করেন তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে যে তারা বেতন পাবেন কিনা৷ একারণে প্রতিদিন সকালেই লোকজন নানা অজুহাতে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ তাদের থামাতে প্রতিদিনই মাইকিং করতে হয়৷’’

পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন এলাকায় ৫০ হাজার বাসিন্দা আছেন৷ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান জানান, ‘‘এখনো ২১ দিন লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়নি৷ ১৪তম দিনে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আর বাড়ানো হবে কিনা৷’’

তিনি লকডাউনে তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, গভীর রাতে কেউ কোমল পানীয়, কেউ পান-সুপারি, কেউ আইসক্রিম এনে দিতে বলছেন৷

আক্রান্ত বাড়ছে পূর্ব রাজাবাজারে
এদিকে পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করার পর করোনা আক্রান্ত বেড়েছে৷ ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, লকডউনের আগে মোট আক্রান্ত ছিলেন ৩১ জন৷ পরীক্ষায় আরো ১৫ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে গত পাঁচ দিনে৷ এখন মোট আক্রান্ত ৪৬ জন৷ তবে ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক বলছেন, এখন প্রতিদিন ২০-২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ ফলে পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে বেশি৷ এরা আগেই আক্রান্ত৷

মেয়ররা জানেন না
উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৭টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৮টি এলাকা, এই মোট ৪৫টি এলাকাকে ঢাকার রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে৷ এর বাইরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১০টি, গাজীপুরের সবকটি উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ পুরো সিটি ও জেলার আরো তিন উপজেলা এবং নরসিংদী জেলাসদরসহ তিন উপজেলা রেড জোন৷

ঢাকা দুই সিটির রেড জোন ঘোষণা করা হলেও কবে, কখন লকডাউন করা হবে তা এখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়নি৷ ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন, লকডাউনে সুনির্দিষ্টভাবে কার কি দায়িত্ব হবে তা জানাতে হবে৷ সেটা না জানানোর আগে লকডাউন নয়৷ ফলে ওয়ারী এলাকার মানুষ আছেন বিভ্রান্তিতে৷ কারণ পূর্ব রাজাবাজারের সঙ্গেই ওই এলাকাও লকডাউন হওয়ার কথা ছিলো৷ সেখানে এখন লকডাউনের মতোই কড়াকড়ি চলছে৷

উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামও তার ১৭টি এলাকা রেড জোন করা হয়েছে বলে জেনেছেন৷ কিন্তু এব্যাপারে বিস্তারিত কোনো নির্দেশনা পাননি৷ তিনি মনে করেন, লকডাউন করা আগে কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়া দরকার৷

লকডাউন না করার চাপ
ঢাকার সাভার, আশুলিয়া এবং গাজীপুরে লকডাউন না করার চাপ আছে৷ কারণ ওই সব এলাকায় সবচেয়ে বেশি পোশাক কারখানা আছে৷ পোশাক কারখানার মালিকরা লকডাউন যাতে না হয় তার চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন৷ সাভার এলাকায় কয়েকদিন ধরে লকডাউনের গুজব ছড়াচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান৷ কিন্তু হচ্ছেনা৷ তবে আজ (শুক্রবার) মধ্য রাত থেকে ধামরাই পৌর এলাকায় লকডাউন শুরু হচ্ছে ১৪ দিনের জন্য৷ এজন্য গত দুই দিন ধরে প্রচার চলছে৷ পৌর মেয়র গোলাম কবির বলেন, ‘‘আমরা আগেই সময় দিয়েছি৷ সবাইকে যার যার খাবার কিনে রাখতে বলেছি৷ লকডাউন কয়েকদিন চলার পর দেখে সিদ্ধান্ত নেব যে খাবার সরবরাহ করতে হবে কিনা৷’’

ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ

এখনো চূড়ান্ত হয়নি
রেড জোনের একটি তালিকা করা হলেও বাস্তবে এর অনেক কিছুই চূড়ান্ত হয়নি৷ লাখে কত মানুষ আক্রান্ত হলে রেড জোন হবে তাই চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক এবং টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা৷ লাখে ৩০ না ৬০ জন তাও এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে৷ ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করা হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে৷ তার ফল দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে৷

তিনি জানান, ‘‘ঢাকার লকডাউনের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক সিদ্ধান্ত নেবেন৷ আর ঢাকার বাইরে সিভিল সার্জন৷ তবে পুরো প্রক্রিয়া কী হবে তা এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে৷’’

বিভ্রান্তিতে সিভিল সার্জনরা
দেশের রেড জোন নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১১ সালে সর্বশেষ আদমশুমারির ভিত্তিতে৷ কিন্তু গত ৯ বছরে জনসংখ্যা আরো অনেক বেড়েছে৷ নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকার পুরোটাই রেড জোন৷ নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘লকডাউনের সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি, কিন্তু জনসংখ্যাইতো ঠিক করতে পারছি না৷ ঢাকার বাইরে এক লাখে ১০ জন আক্রান্ত হলে লকডাউন হবে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তো ২০১১ সালের হিসেবে নারায়ণগঞ্জের জনসংখ্যা ২৫ লাখ ধরে রেড জোন ঘোষণা দিয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে এখন তো জনসংখ্যা এর দ্বিগুণ৷ তাহলে তো আর এটা রেড জোন হয় না৷’’

‘‘আর সর্বশেষ ১৪ দিনে আক্রান্তের হিসেব করলে আক্রান্ত তো অনেক কম৷ আমি কিসের ভিত্তিতে লকডাউন করব৷ তারপরও আলাপ আলোচনা করছি,’’ বলেন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান