1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লাইবেরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট জর্জ উইয়া

২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফুটবলার জর্জ উইয়া লাইবেরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে জয়ী হয়েছেন৷ দু'টি গৃহযুদ্ধের পর পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে এই প্রথমবার গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর ঘটতে চলেছে৷

https://p.dw.com/p/2q5sA
Liberia Wahlen George Weah
ছবি: picture alliance/dpa/epa/A. Jallanzo

লাইবেরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রান-অফ পর্যায়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফুটবল খেলোয়াড় জর্জ উইয়াভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোয়াকাই-এর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছেন৷ ৯৮ দশমিক ১ শতাংশ ভোট গণনার পর দেখা যায়, উইয়া ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, বলে নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার জানায়৷  

আগামী মাসে উইয়া যখন এলেন জনসন সারলিফ-এর উত্তরাধিকারী হিসেবে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্বনেবেন, তখন তা হবে ১৯৪৪ সাল যাবৎ দেশটিতে প্রথম গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তর৷ সারলিফ ছিলেন আফ্রিকার প্রথম নির্বাচিত মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান; ২০১১ সালে তিনি যুগ্মভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন৷

১০ই অক্টোবর তারিখে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে উইয়া সর্বাধিক ভোট পেলেও, সরাসরি জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট সংগ্রহ করতে পারেননি৷ রান-অফ ভোটে ভোটারদের মোট ৫৬ শতাংশ ভোটে অংশগ্রহণ করেন, বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে৷ 

প্রথম পর্বের ভোটানুষ্ঠান নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এক পর্যায় মামলার কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোট অনুষ্ঠানে বেশ কয়েক সপ্তাহ দেরি হয়ে যায় – ঐ সব মামলার পিছনে ছিল বোয়াকাই-এর ঐক্য দলের সমর্থন৷ দৃশ্যত দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটে সেই সব অভিযোগের বেশ কয়েকটির সমাধান করা হয়েছে৷

যাবতীয় বিলম্ব সত্ত্বেও, গোটা নির্বাচনে কোনো বড় সংঘর্ষ ঘটেনি ও পুরোপুরি আস্থাভাজক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, বলে পর্যবেক্ষকরা সপ্রশংস মন্তব্য করেছেন৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুটেরেস একটি বিবৃতিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটের ‘‘শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান''-কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এই ‘‘শৃঙ্খলাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য লাইবেরিয়ার সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জনগণকে'' অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ 

দারিদ্র্য থেকে খ্যাতি ও ক্ষমতার শীর্ষে

৫১ বছর বয়সি উইয়া পিএসজি, এসি মিলান ও চেলসির মতো ইউরোপের সেরা ফুটবল ক্লাবগুলির হয়ে খেলেছেন৷ তিনিই একমাত্র আফ্রিকান, যিনি ফিফার ‘ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার' খেতাবটি জয় করেছেন৷

নবাগত হিসেব রাজনীতিতে পদার্পণ করার পর, তিনি ২০০৫ সালের রান-অফ ভোটে সারলিফের কাছে পরাজিত হন৷ ২০১১ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হবার প্রচেষ্টাতেও ব্যর্থ হন উইয়া৷ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি লাইবেরিয়ার সেনেটের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন৷

রাজধানী মনরোভিয়ার একটি বস্তিতে মানুষ হয়েছিলেন জর্জ উইয়া৷ তাঁর দৃষ্টান্ত বিশেষ করে তরুণ লাইবেরীয়দের উদ্বুদ্ধ করেছে, যাদের দৃষ্টিতে উইয়া দেশের জনগণের প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের কথা বোঝেন৷

অপরদিকে উইয়ার সমালোচকদের মতে তাঁর রাজনীতির অভিজ্ঞতা সীমিত৷ এছাড়া উইয়া যে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী চার্লস টেলরের সাবেক স্ত্রী জুয়েল হাওয়ার্ড টেলরকে তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল রানিং মেট হিসেবে মনোনীত করেছেন, তা-ও অনেকের পছন্দ হয়নি৷

গত অক্টোবর মাসে ডয়চে ভেলের একটি সাক্ষাৎকারে উইয়া হাওয়ার্ড টেলরের মনোনয়নকে সমর্থন করেন৷ টেলর বর্তমানে সেনেটের সদস্য৷ উইয়ার বক্তব্য: ‘‘উনি একজন লাইবেরীয়, সক্ষম, শিক্ষিত, লাইবেরিয়ার মানুষ তাঁকে ভালোবাসে৷ এছাড়া আমি নারী-পুরুষের সমানাধিকারে বিশ্বাস করি; কাজেই আমার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজন মহিলাকে নেওয়া একটা ভালো কাজ, বলে আমার মনে হয়েছে৷''

বিক্ষুব্ধ ইতিহাস, ভবিষ্যতের আশা

আফ্রিকার প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্র হলো লাইবেরিয়া৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবিয়ান থেকে মুক্তি পাওয়া ক্রীতদাসরা ১৮৪৭ সালে দেশটি প্রতিষ্ঠা করে৷

কিন্তু আধুনিক যুগে লাইবেরিয়ার ইতিহাস হলো এক রক্তাক্ত ইতিহাস: ১৯৮৯ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে লাইবেরিয়ায় পর পর যে দু'টি গৃহযুদ্ধ ঘটে, তাতে আনুমানিক আড়াই লাখ মানুষ প্রাণ হারান৷

২০০৫ সালে সারলিফ সরকার ক্ষমতায় আসেন ও দেশটিকে যুদ্ধ ও ধ্বংসের হাত থেকে মুক্ত করেন৷ কিন্তু তিনি দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের অন্ত ঘটাতে ব্যর্থ হন, বলে সারলিফের সমালোচকদের অভিযোগ৷

উইয়া রাস্তাঘাট তৈরি, চাকুরি সৃষ্টি ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷

এসি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)