1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লাইসেন্স ছাড়াই চলছে মানসিক হাসপাতাল

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ নভেম্বর ২০২০

পুলিশের একজন সিনিয়র এএসপিকে চিকিৎসার নামে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আলোচিত ‘মাইন্ড এইড’ নামের ক্লিনিকটি মানসিক রোগীর চিকিৎসার কোনো প্রতিষ্ঠান নয়৷

https://p.dw.com/p/3l9BL
ছবি: bdnews24.com

এই প্রতিষ্ঠানটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে মানসিক রোগের ‘চিকিৎসা’ করে আসছিলো৷ ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷

মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লাইসেন্স দেয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর৷ তবে কেন্দ্রটি মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্যও লাইসেন্স চেয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আট মাস আগে৷ অধিদপ্তর তাদের লাইসেন্সের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেও তারা মানসিক রোগীর ‘চিকিৎসা’ অব্যহত রাখে৷

শুধু তাই নয়, তারা নিরাময় কেন্দ্রটির নামও প্রতারণামূলভাবে পরিবর্তন করে ফেলেছিল৷ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে তাদের নিবন্ধিত নাম হলো ‘মাইন্ড এইড মানসিক এবং মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র’৷ কিন্তু তাদের সাইন বোর্ডে লেখা ‘মাইন্ড এইড, মাইন্ড কেয়ার ইন্সটিটিউট’৷

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাইন্ড এইড মানসিক এবং মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স পায়৷ বেডের সংখ্যা উল্লেখ আছে ৩০টি৷ নিয়াজ মোর্শেদ ম্যানেজিং পার্টনার৷ লাইসেন্স নাম্বার: ৯৯৫৷ ঠিকানা: রোড নং-১৯, বাড়ি নং-২৮১, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি, আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা৷ সিরিয়াল নাম্বার-৩০৯৷ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৩২৪টি এধরনের নিবন্ধিত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে৷

শর্তপূরণ না করায় আমরা লাইসেন্স দেইনি: ঢাকার সিভিল সার্জন

ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মাইনুল হাসান জানান, ‘‘তারা গত ফেব্রুয়ারি মাসে ক্লিনিকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল৷ কিন্তু শর্তপূরণ না করায় আমরা লাইসেন্স দেইনি৷ কার্যত মানসিক রোগীর চিকিৎসা বা ক্লিনিক পরিচালনার জন্য তাদের কোনো লাইসেন্স নাই৷ তারা গত দুই বছর ধরে অবৈধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল৷’’

তিনি স্বীকার করেন এরকম অনেক অবৈধ ক্লিনিক আছে৷ তার কথা, ‘‘এরকম অনেক অবৈধ ক্লিনিক আছে সত্য৷ কিন্তু আমরা কী করব? এটা দেখার দায়িত্ব তো আমাদের না৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেখতে পারে৷ আমরা যাদের লাইসেন্স আছে শুধু তাদের কাজ মনিটরিং করি৷ লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নিই৷’’

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কীভাবে লাইসেন্স দেয় এবং ওইসব কেন্দ্রের কাজের পরিধি কী তা জানকে অনকে কাঠখড় পোড়াতে হয়৷ কেউই দায়িত্ব নিতে চাননা৷ একজন আরেকজনকে দেখিয়ে দেন৷ অবশেষে পাওয়া যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) ঊর্মি দে-কে৷ তিনি জানান, তার হাত দিয়েই ‘মাইন্ড এইড মানসিক এবং মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্র’ শুধু মাদকাসক্ত রোগীর পুনর্বাসনের অনুমোদন পায়৷ প্রতিষ্ঠানটি আর কোনো মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত নয়৷ মানসিক রোগের চিকিৎসা করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলাদা লাইসেন্স লাগবে৷

সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মাইনুল হাসান বলেন, ‘‘মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো শুধু পুনর্বাসনের জন্য৷ সেই লাইসেন্স দেয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর৷ কিন্তু এনিয়ে কেনো ধরনের ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা দিতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স লাগবে৷’’

ঊর্মি দে স্বীকার করেন অনেক মাদক নিরাময় কেন্দ্র মাদকাসক্তদের চিকিৎসার নামে মারপিট করে৷ অনেকেই অভিযোগ করেন৷ ‘‘কিন্তু আমরা অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে কোনো প্রমাণ পাই না৷ তাই ব্যবস্থা নিতে পারি না,’’ জানান তিনি৷

আমরা অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে কোনো প্রমাণ পাই না: মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা

বরিশালে কর্মরত পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম মানসিক চাপে ভুগছিলেন৷ সিনিয়র কর্মকর্তাদের পরামর্শে সোমবার সকালে তিনি ঢাকা এসে প্রথমে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন৷ সেখানে চিকিৎসার খারাপ অবস্থা দেখে কয়েক জনের পরমর্শে সকালেই তাকে ‘মাইন্ড এইড’ হাসপাতালে নেয়া হয় বলে জানান তার বড় ভাই রেজাউল করিম৷ এর কয়েক ঘন্টা পর তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ তিনি জানান, ‘‘সকাল ১১টার দিকে সে দোতলার বাথরুমে গেলে তাকে প্রথমে একটি কক্ষে আটকের চেষ্টা করা হয়৷ ব্যর্থ হয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ভাই মেন্টাল স্ট্রেসে ছিলেন৷ কোনো মানসিক রোগীও ছিলেন না৷ তার সব কিছুই স্বাভাবিক ছিলো৷ আমরা মানসিক চাপ কমাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম৷’’

আমার ভাই মাদকাসক্ত ছিল না৷ আর ওটা যে মাদক নিরাময় কেন্দ্র তাও আমরা জানতাম না৷ আমাদের অনেকেই বলেছিলেন ওটা মানসিক চিকিৎসার ভালো হাসপাতাল৷’’

এই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় কথিত হাসপাতালটির পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদসহ এপর্যন্ত ১১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে এটা পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড৷’’

কত প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক?

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ১০ হাজারের বেশি৷ তবে এর মধ্যে হাসপাতাল ও ক্লিনিক কতটি সে হিসাব তাদের কাছে নেই৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে লাইসেন্সধারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫৫টি৷ ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায় আছে ২৯৪টি৷ এরমধ্যে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের হিসাব নাই৷

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘মাইন্ড এইড হাসপাতাল আমাদের সদস্য নয়৷ যাদের লাইসেন্স নাই তাদের সদস্য করি না৷ যাদের লাইসেন্স নাই তাদের বিরুদ্ধে আমরা বার বার ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি৷ কিন্তু কাজ হয় না৷ মো. সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল অবৈধ হলেও  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরই তাদের কোভিড হাসপাতাল হিসেবে পরিচালনার সুযোগ দিয়েছিল৷’’

মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর হাসপাতাল হিসেবে পরিচালিত হওয়া প্রসঙ্গে ঊর্মি দে বলেন, ‘‘লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে আমরা ব্যবস্থা নিই৷ কিন্তু এটা দেখার দায়িত্ব অঞ্চলভিত্তিক৷ তারা না দেখলে আমার তো জানার উপায় নাই৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য