1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ নভেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ আবারো  বেড়ে এক লাখ কোটি ছাড়িয়ে গেছে৷ তবে এই পরিমাণ অবলোপন ও পুণঃতফসিল করা ঋণের বাইরের হিসাব৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো খেলাপি ঋণ কমানো যাচ্ছেনা কেন? সমস্যা কোথায়?

https://p.dw.com/p/43TWP
Bengalische Banknoten
ছবি: DW

অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ে অনীহা আছে৷ আর এই অনীহার কারণ যারা খেলাপি তারা ক্ষমতাবান৷
২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত খেলাপি ঋণের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায় ব্যাংকখাতে বাংলাদেশে এখন খেলাপি ঋণ এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা৷ এর আগে আরো একবার ২০১৯ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিলো৷ ওই বছরের মার্চ মাসে প্রথমবারের মত খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা৷
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা৷ তার মধ্যে খেলাপি ঋণ এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা৷ এটা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ৷
২০২০ সালের ডিসেম্বরে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা৷  চলতি বছরের সেপ্টম্বরর পর্যন্ত ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা৷
চলতি  বছরের প্রথম ৯ মাসে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ দিয়েছে দুই লাখ ১৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা৷ এই ঋণের মধ্যেও  খেলাপি ঋণ হয়েছে ৪৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা৷ যা নয় মাসে দেয়া মোট ঋণের ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ৷
বেসরকারি ব্যাংকগুলো এই সময়ে  ঋণ দিয়েছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা৷ যার মধ্যে ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে৷ যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ৷ বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমান ও শতকরা হার উভয়ই বেশি৷
খেলাপি ঋণের একটি অংশ প্রতিবছর অবলোপন করা হয়৷ সেটা খেলাপি খাতে না দেখিয়ে অন্য খাতে দেখানো হয়৷ এখন পর্যন্ত এর পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা৷ আবার মূল ঋণের শতকরা দুইভাগ ডাউন পেমেন্টে দিয়ে খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ তিনবার পুণঃতফসিল করা যায়৷ এর পরিমাণ হবে প্রায় সাত লাখ কোটি টাকা৷ বাস্তবে এগুলোও খেলাপি ঋণ৷ কিন্তু আইনের মারপ্যাচে খেলাপি ঋণের হিসাবে দেখানো হয় না৷
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা মনে করেন, বাংলাদেশে ঋণ খেলাপি একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে৷ এর কারণ খেলাপিদের আইনের আওতায় না আনা এবং ক্ষমতাসীন রাজনীতির সাথে তাদের যোগাযোগ৷ উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন,"করোনা মহামারি এবং কৌশলগত বিপত্তির কারণে ঋণ খেলাপি হতেও পারে৷ কিন্তু বাংলাদেশে ঋণ খেলাপির কারণ ভিন্ন৷ এখানে যাদের ঋণ দেয়া হয় তারা ঋণ পাওয়ার যোগ্য নয়৷ আবার যেসব প্রকল্পে ঋণ দেয়া হয় সেইসব প্রকল্প সফল হবে কি না তাও বিশ্লেষণ করে ঋণ দেয়া হয় না৷ ফলে এখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছেই৷”
তার মতে," কাঠামোগত এবং ব্যবস্থাপনার সমস্যা এখানে প্রকট৷ এটা কাটাতে না পারলে এই খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি চলতেই থাকবে৷ কারণ আমরা সংবাদমাধ্যমে খেলাপিদের যে নাম ও তালিকা দেখি তাতে স্পষ্ট যে  এর সাথে রাজনীতির একটি সংশ্রব আছে৷ তারা ক্ষমতার সাথেও সম্পর্কিত৷”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানো এবং ঋণ কমিয়ে আনায় সরকারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন৷ তারপরে কাঠামোগত কিছু বিষয় আছে৷ তিনি বলেন,"যারা ব্যাংকের মালিক তাদের আবার রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে৷ তারাই আবার খেলাপি হচেছন৷ আবার ব্যাংক নেই কিন্তু ক্ষমতা আছে তারাও খেলপি হচ্ছেন৷ আর এই ধরনের চাপের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকও খেলাপি ঋণ আদায়ে ততটা আগ্রহী নয়৷ তারা বরং নানা ধরনের সুবিধা দিয়ে, নানা কৌশল করে খেলাপি যারা হয় তাদেরই সহযাগিতা করছে৷”
তার মতে,"যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে তাহলে খেলাপি ঋণ আদায়ে নানা পরিকল্পনা নেয়া যায়৷ সময় বেঁধে দেয়া যায়৷ কিস্তি করে দেয়া যায়৷ আরো অনেক কিছু করা যায়৷ এটা ব্যাংক ভিত্তিক করতে হবে৷ তবে সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত৷

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ

ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য