1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লামার রক্তেই করোনার ওষুধের চাবিকাঠি?

৫ অক্টোবর ২০২০

টিকা ও ওষুধের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে জরুরি ভিত্তিতে করোনা ভাইরাস জয়ের অসংখ্য চেষ্টা চলছে৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার একটি প্রাণী এ ক্ষেত্রে মানুষকে সংক্রমণ মোকাবিলায় বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে৷

https://p.dw.com/p/3jR1o
ছবি: WDR

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে জন্মের কারণে লামা শাবকের নাম রাখা হয়েছে ‘উইন্টার’৷ গেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণার স্বার্থে সেই শাবকের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করেছেন৷ তাঁদের আশা সত্য প্রমাণ করে রক্তে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে৷ মলিকিউলার ভাইরোলজিস্ট হিসেবে সাভিয়ে সেলেন্স বলেন, ‘‘লামার রক্তের রহস্য হলো অ্যান্টিবডি৷ সেই অ্যান্টিবডি অত্যন্ত ছোট, কাঠামোও খুব সহজ৷ মানুষের তুলনায় গঠন অনেক সরল৷ তবে সহজ-সরল হলেও এই অ্যান্টিবডি অত্যন্ত শক্তিশালী৷ বেশ কার্যকরভাবে ভাইরাসের মোকাবিলা করতে পারে৷’’

নিজের মলিকিউলার ভাইরোলজিস্টদের টিমসহ সাভিয়ার সেলেন্স সাফল্যের সঙ্গে লামা ও মানুষের অ্যান্টিবডির মধ্যে স্থিতিশীল যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছেন৷ সেই কৌশলের ফলে মানুষের শরীর কোষ ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে না৷ সাভিয়ে সেলেন্স বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘লামার অ্যান্টিবডি যেটা করে সেটা হলো এই৷ সেটি করোনা ভাইরাসের শীর্ষ অংশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়৷ তখন ভাইরাস আর মানুষের কোষে ডকিং করতে, অর্থাৎ যুক্ত হতে পারে না৷ ফলে কোনো সংক্রমণ ঘটে না৷ ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে ওঠে৷’’

সাভিয়ে সেলেন্স তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এমন ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছেন, যেগুলি শ্বাসনালীকে আক্রান্ত করে৷ করোনা মহামারির সূচনা থেকে তাঁর ঘুম প্রায় লোপ পেয়েছে৷ ১৫ সদস্যের টিম নিয়ে তিনি ল্যাবেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন৷ সেলেন্স মনে করেন, ‘‘লামার সামান্য রক্ত থেকে বিশেষ এই অ্যান্টিবডি তৈরির কোষ বের করা কঠিন কাজ৷ সেগুলির মধ্য থেকেও আবার ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতাশালী কোষ বেছে নিতে হয়৷’’

গবেষণাগারে অসংখ্য পরীক্ষার পর হ্যামস্টারের উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে৷ ওষুধ তৈরির লক্ষ্যে চলতি বছরের শেষে মানুষের উপরও পরীক্ষা চালানো হবে৷ সাভিয়ে সেলেন্স বলেন, ‘‘কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি প্রবেশ করানোই আমাদের লক্ষ্য৷ এর মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করা হবে৷ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মানুষের সাময়িক রক্ষাকবচ হিসেবেও এটি প্রয়োগ করতে চাই৷’’

শিল্পক্ষেত্রে বড় আকারে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করা সম্ভব হলে সেটি হবে সমাজে পরোক্ষভাবে টিকাদান কর্মসূচির মতো উদ্যোগ৷ সেলেন্স বলেন, ‘‘চারিদিকে চাপের মুখে আমি ও আমার সহকর্মীরা চালিত হচ্ছি৷ সঙ্গে বৈজ্ঞানিক কৌতূহলও কাজ করছে৷ কীভাবে আমরা এই ভাইরাস জয় করতে পারবো? আমাদের লামার অ্যান্টিবডি কি সত্যি এত কার্যকর? আমরা সেটা প্রমাণ করতে চাই৷ তাই আমরা বাড়তি পরিশ্রম করছি৷’’

গবেষণার ফলাফল সত্যি বেশ সম্ভাবনাময়৷ সবকিছু ঠিকমতো চললে আগামী বছরই লামার এই অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট বাজারে এসে যাবে৷

গোটা বিশ্বের করোনা গবেষকদের কাছে সেরা তারকা হয়ে উঠবে ‘উইন্টার' নামের এই আশ্চর্য লামা৷ লামার মালিক কুন ফানমেখেলেন বলেন, ‘‘এই প্রাণী ও তার স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদান করা আমার কাছে সবচেয়ে জরুলি বিষয়৷ প্রকৃতি আমাদের সব কিছু দিতে পারে৷ উইন্টার সেরা আদর্শ হিসেবে তা দেখিয়ে দিচ্ছে৷ আমাদের শুধু সেটা শিখতে হবে৷’’

সত্যি এমন ওষুধ সফল হলে উইন্টার অবশ্যই আরও খোরাক পাবে বলে ধরে নেওয়া যায়৷

গুড্রুন এঙেল/এসবি