1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাইপারসনিক বিমান

২০ আগস্ট ২০১২

সাবসনিক, সুপারসনিক, হাইপারসনিক৷ যাত্রীবাহী বিমান চলে সাবসনিক গতিতে৷ অর্থাৎ শব্দের চেয়ে কম গতিতে৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র একটি হাইপারসনিক বিমানের পরীক্ষণ ফ্লাইট চালিয়েছে৷ যেটি উড্ডয়নের ৩১ সেকেন্ডের মধ্যেই ভেঙে পড়ে৷

https://p.dw.com/p/15snb
ছবি: Reuters/US Air Force

যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষণমূলক এই বিমানটির নাম ‘ওয়েভরাইডার' বা এক্স-৫১এ৷ এটি শব্দের গতির চেয়ে ছয়গুন বেশি জোরে চলতে চেয়েছিল৷ অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় সাত হাজার কিলোমিটার বেগে৷ এর ফলে নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন যেতে সময় লাগতো এক ঘণ্টার চেয়েও কম৷ বর্তমানে যাত্রীবাহী বিমানগুলো চলে ৮০০ থেকে ৯৫০ কিলোমিটার বেগে৷

যুক্তরাষ্ট্রের এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য অবশ্য যাত্রী বহন নয়৷ তাদের লক্ষ্য এই গতিকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে এক ঘন্টার মধ্যে হামলার যোগ্যতা অর্জন৷ সেজন্য ওয়েভরাইডারকে বিমান বলা হলেও এটা হতে পারে একটা ক্ষেপণাস্ত্র, যেটা অস্ত্র নিয়ে ছুটে গিয়ে সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে৷

পরীক্ষণ চলাকালে বিজ্ঞানীদের আশা ছিল ওয়েভরাইডারকে অন্তত পাঁচ মিনিট ওড়ানোর৷ কিন্তু মাত্র ৩১ সেকেন্ডই প্রশান্ত মহাসাগরে ভেঙে পড়ে মনুষ্যবিহীন এই ফ্লাইটটি৷ বিমানের ‘ফিন' বা ডানায় ত্রুটির কারণে পরীক্ষাটি সফল হয়নি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা৷

এই প্রকল্পে কত খরচ হয়েছে সেটা জানায়নি মার্কিন বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ৷ বোয়িং কোম্পানির প্রকৌশলীরা এই বিমানের নকশা ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজটি করেছেন৷

বিমান বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তাদের কাছে আরও একটি ওয়েভরাইডার রয়েছে৷ সেটাকে দিয়ে ভবিষ্যতে আবারও পরীক্ষা চালানো হবে কিনা - সেটা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি৷ এর আগে ২০১০ সালে পরিচালিত আরেকটি পরীক্ষায় ওয়েভরাইডার তিন মিনিটের একটু বেশি সময় ধরে শব্দের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি গতিতে চলেছিল৷

US Militär Mach 6 Hyperjet X-51A WaveRider
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য অবশ্য যাত্রী বহন নয়৷ তাদের লক্ষ্য এই গতিকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে এক ঘন্টার মধ্যে হামলার যোগ্যতা অর্জনছবি: picture alliance/abaca

তবে অ্যামেরিকা হামলা চালানোর জন্য হাইপারসনিক বিমান তৈরির পরিকল্পনা করলেও ইউরোপ কাজ করছে হাইপারসনিক যাত্রীবাহী বিমান তৈরির৷ শব্দের গতির চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি জোরে চলার পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ তাঁরা যে বিমান তৈরির পরিকল্পনা করছেন তার নাম ‘এ২'৷ এটা সম্ভব হলে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি যেতে সময় লাগবে মাত্র ২-৪ ঘণ্টা৷ তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৪০ সালের আগে এ ধরণের বিমান ওড়ার সম্ভাবনা নেই৷

ইউরোপীয় কমিশন এর খরচ বহন করছে৷ শুরুতে এই প্রকল্পের জন্য ১০ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ আগামী বছর প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে৷

তবে সুপারসনিক বিমান কনকর্ডের অতীত ইতিহাসের কারণে হাইপারসনিক বিমানে চড়ার স্বপ্ন মানুষের পূরণ হবে কিনা - তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ কেননা হাইপারসনিক বিমান বানানো সম্ভব হলেও এর টিকিটের যে দাম হবে সেটা দিয়ে বিমান কোম্পানিগুলো লাভবান হতে পারবে কিনা, সেটা একটা বড় প্রশ্ন৷

কনকর্ড বিমানের একটা টিকিটের মূল্য ছিল যাত্রীবাহী বিমানের প্রথম শ্রেণির টিকিট মূল্যের চেয়েও প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি৷ ফলে সেটা সাধারণ যাত্রীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল৷ তাই কনকর্ডকে আর না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ আর এয়ার ফ্রান্স৷ এই দুই কোম্পানিরই শুধু কনকর্ড বিমান ছিল৷ অবশ্য ২০০০ সালে একটি কনকর্ড বিমানের দুর্ঘটনাও কনকর্ড বন্ধ করে দেয়ার অন্যতম একটা কারণ ছিল৷

‘বিজনেস ট্রাভেলার' ম্যাগাজিনের টম ওটলে বলছেন, যাত্রীদের কাছে তাড়াতাড়ি যাওয়ার চেয়ে কম খরচ আর আরাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ ফলে হাইপারসনিক বিমানের পরিণতি কনকর্ডের মতোই হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি৷

সাম্প্রতিক এক জরিপেও দেখা গেছে ধনী ব্যক্তিরাও টাকা বাঁচাতে সরাসরি ফ্লাইটের চেয়ে ‘সরাসরি নয়' এমন ফ্লাইটই পছন্দ করেন৷

এদিকে ‘রিঅ্যাকশন ইঞ্জিনস' নামের একটি কোম্পানি যারা হাইপারসনিক বিমান তৈরির কাজে জড়িত তারা বলছে, এই বিমানের টিকিটের মূল্য সাধারণ বিমানের ‘বিজনেস ক্লাস'-এর মূল্যের সমান হবে৷

তবে সমালোচকরা বলছেন, এটা তখনই সম্ভব যদি হাইপারসনিক বিমান জ্বালানি হিসেবে তরল হাইড্রোজেন ব্যবহার করতে পারে৷ কিন্তু এজন্য পর্যাপ্ত তরল হাইড্রোজেন উৎপাদন সম্ভব হবে কিনা - তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সমালোচকরা৷

জেডএইচ / ডিজি (রয়টার্স, বিবিসি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য