1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শহরে চড়াই পাখির সুরক্ষা

৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কাক-চড়াই শহুরে জীবনের অঙ্গ৷ কিন্তু নগরসভ্যতার চাপে পাখি উধাও হয়ে যাচ্ছে৷ ভারতে এক ব্যক্তি নিজস্ব উদ্যোগে কৃত্রিম বাসা তৈরি করে চড়াই পাখির সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন৷ স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াচ্ছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/3OyLz
Haussperling, Haus-Sperling, Hausspatz, Haus-Spatz, Spatz, Passer domesticus, house sparrow
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/M. Wulf

শহরের বিবর্তনের পরিণাম

এককালে যে চড়াই পাখি সর্বত্র দেখা যেত, এখন অস্তিত্ব লোপ পাওয়ার কারণে তার কদর বেড়ে গেছে৷ এমন পাখি হারিয়ে যাওয়ার জন্য মানুষ ও পাখির মধ্যে আবেগের সম্পর্কের অভাবকেই দায়ী করা হয়৷ অথচ পাখিই মানুষের সবচেয়ে পুরানো বন্ধুদের মধ্যে পড়ে৷

খোলামেলা ঘরে ভরা আধুনিক ভবনগুলিতে পাখি কোথাও বাসা বাঁধতে পারে না৷ সেখানে ফাটল, কোণা বা তাক নেই৷ শুধু বসতবাড়ির অবস্থা এরকম নয়৷ ইকো রুটস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা রাকেশ ক্ষত্রী মনে করেন, ‘‘যেখানে সবুজের সমারোহ ছিল, নগর পরিকল্পনার আওতায় সে সব জায়গা কংক্রিটের কাঠামোয় ভরে গেছে৷ তাহলে পাখিরা কোথায় চলে গেছে? আমরা তাদের বাড়িতে স্থান দেই না, হৃদয় থেকেও সরিয়ে দিয়েছি৷ আজ তাদের কাছেই ঘেঁষতে দেওয়া হয় না৷''

চড়াই সংরক্ষণের ভাবনা

রাকেশ ক্ষত্রী পেশায় তথ্যচিত্র পরিচালক৷ কাকতালীয়ভাবে তিনি চড়াই পাখির সংরক্ষণকারী হয়ে উঠেছেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দিল্লির দক্ষিণে আমার দপ্তর ছিল৷ সেখানে যাবার পথে ঝাঁকঝাঁক পাখি দেখে আমার মন ভালো হয়ে যেত৷ একদিন দেখলাম, যে পাইপের মধ্যে পাখি বাসা বাঁধতো লোকে তা ভরাট করে দিচ্ছে৷ প্রশ্ন করতে তারা বললো, নোংরা ছড়িয়ে পড়া এড়াতেই তারা এই কাজ করছে৷ আমি তাদের বললাম, এই পাখির সংখ্যা এমনিতেই কমে আসছে এবং তারা সমস্যাটিকে আরও প্রকট করে তুলছে৷ তারা বললো, তারা শুধু নির্দেশ পালন করছে৷ তখন আমি কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে বললাম, যে পরিবেশ ট্রাইব্যুনালে গিয়ে নালিশ করতে পারি৷''

চড়াই ফেরাতে মানুষের বাসা

ভারতের জাতীয় পরিবেশ ট্রাইব্যুনালের কাছে নালিশ করার হুমকি দিতে কাজ হলো৷ তারপর রাকেশ ক্ষত্রী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাস্তার ধারে ১০০টি কৃত্রিম পাখির বাসা তৈরি করেন৷ ফলে চড়াইপাখি আবার ঘর বাঁধতে পারলো৷ এমনকি এতে আশ্বস্ত হয়ে তারা আবার ডিম পাড়তেও শুরু করলো৷

ফাউন্ডেশন গড়ে সার্বিক উদ্যোগ

এই সাফল্যে অভিভূত হয়ে পাখি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে রাকেশ ইকো-রুটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন৷  তিনি সারা দেশে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য ওয়ার্কশপ আয়োজন করেন৷ যে কেউ শহরে পাখি বাঁচাতে চাইলেই তিনি সেই ডাকে সাড়া দেন৷

কৃত্রিম বাসা তৈরির পদ্ধতি শিখতে মাত্র ৪০ মিনিট সময় লাগে৷ নারকোলের তন্তু, পাট ও বাঁশ দিয়ে পাখির বাসার নকল তৈরির চেষ্টা করা হয়৷ এই উদ্যোগের গুরুত্ব সম্পর্কে রাকেশ ক্ষত্রী বলেন, ‘‘আমাদের ইকোসিস্টেমের জন্য এই পাখি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ পাখি আসলে ইকোসিস্টেমের স্বাস্থ্যের নির্দেশক৷ পাখি আমাদের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় খায়৷''

পাখি সংরক্ষণের গুরুত্ব

প্রোফেসর সুদীপ্ত চ্যাটার্জি ২০ বছর ধরে জঙ্গল সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করেন৷ তিনি মনে করেন, ইকোলজিকাল বা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে চড়াইপাখি সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তাঁর মতে, ‘‘এই প্রজাতি অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের৷ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী এই প্রজাতি ‘ডোমেস্টিকাস'৷ অর্থাৎ মানুষের বসতির কাছাকাছি এদের দেখা মেলে৷ তবে এই সংজ্ঞা আসলে সার্থক নয়৷ গোটা দেশে, গোটা বিশ্বে চড়াই ছড়িয়ে রয়েছে৷ কিন্তু সমস্যা হলো, এই পাখির সংখ্যা কমে এলেও এই প্রজাতির অস্তিত্ব নিয়ে প্রকৃতি সংরক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সংগঠনের মাথাব্যথা নেই৷ ‘লিস্ট কনসার্ন' বা সবচেয়ে কম উদ্বেগজনক তালিকায় তাদের রাখা হয়েছে৷''

ওয়ার্কশপ চালু করার পর থেকে রাকেশ ক্ষত্রী এক লক্ষেরও বেশি পাখির বাসা তৈরি করেছেন৷ তিনি প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্কুলে গিয়ে নিজের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন৷ সংরক্ষণবাদী হিসেবে তাঁর দাবি, কৃত্রিম পাখির বাসার সাফল্যের হার প্রায় ৬০ শতাংশ৷ ফলে শহরাঞ্চলে পাখির সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছে৷ আগামী দুই থেকে তিন বছরে তিনি আরও আড়াই লাখ পাখির বাসা তৈরি করতে চান৷

ঈপ্সিতা বসু/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য