1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষক অবমাননায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক সমাজ

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৮ মে ২০১৬

নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় শিক্ষক সমাজ ফুঁসছে৷ অপরাধীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছেন তারা৷ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা৷

https://p.dw.com/p/1Ipca
Dhaka Studentenproteste
ছবি: DW

শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যে বিবৃতির মাধ্যমে তাদের অবস্থান জানিয়েছে৷ শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার শিক্ষক অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তারা বড় কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যাবেন৷

নারায়ণগঞ্জ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ব্রজেন্দ্র নাথ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষকের এই অপমান পুরো জাতির অপমান৷ এটা একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়৷ আমরা এই অপমান বসে বসে দেখব না৷ আমরা, এখানকার শিক্ষকরা এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছি৷ বুধবার আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারক লিপি দেবো৷ এরপর আমরা বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘একজন শিক্ষককে যেভাবে অপমান করা হয়েছে তার প্রতিকার করতেই হবে৷ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে৷''

বরেন্দ্র নাখ শিকদার

নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির গুজব ছড়িয়ে তাঁকে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করার শাস্তি দেয়ার পরও অবশ্য ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি৷ নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক সমিতির নেতা সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এরইমধ্যে সেই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার খবরও আমারা পেয়েছি, যা আরো দুঃখজনক৷ আমরা চাই এ নিয়ে আর যেন কোনো বাড়াবাড়ি না করা হয়৷ সরকার তদন্ত করে শিক্ষক অবমাননার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে৷ আমরা আশ্বস্ত হতে চাই৷''

বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট-এর প্রেসিডেন্ট ড. কাজী ফারুক আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মঙ্গলবার বৈঠক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি৷ আমরা নিজেদের বিষয় নিজেরাই অনুসন্ধান করে দেখতে চাই৷ আমাদের তদন্ত শেষে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷''

শিক্ষক অবমাননার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘‘একজন শিক্ষক যদি কোনো অপরাধ বা আইনবিরুদ্ধ কাজ করে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিভাগীয় এবং আইনগত প্রক্রিয়া আছে৷ কিন্তু একজন শিক্ষককে অন্যায় অপবাদ দিয়ে যেভাবে অপমান করা হয়েছে তা ক্ষমাহীন অপরাধ৷ এই অপরাধ শাস্তির বাইরে থাকতে পারে না৷ আমরা শিক্ষক সমাজ এই অপরাধের শাস্তি চাই৷ তাঁকে অবমাননার মধ্য দিয়ে পুরো শিক্ষক সমাজেরই অবমাননা হয়েছে৷''

কাজি ফারুক আহমেদ

আলাদাভাবে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ড. কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘‘সরকারি তদন্ত কমিটি তাদের মতো কাজ করবে৷ আর আমাদের তদন্ত কমিটিও স্বাধীনভাবে কাজ করবে৷ এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷ আমরা আমাদের দিক থেকে প্রকৃত ঘটনা খতিয়ে দেখতে চাই৷''

শ্যামল কান্তি ভক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘বরখাস্ত কোন প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে, তার ভিত্তি কী আমরা তা জানতে চাই৷ আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কিছু করা হলে তা মানা হবে না৷''

পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়গুলোর শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনও নারায়ণগঞ্জে শিক্ষকের মর্যাদাহানির ঘটনায় ক্ষুব্ধ৷ সংগঠনটির মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা নারায়ণগঞ্জে এক শিক্ষককে চরম অবমাননার ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ্য করছি৷ এরই মধ্যে এর প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়ে আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি৷ আমরা বলেছি, ওই শিক্ষকের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা বর্বরতা এবং অসভ্যতা৷ আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষক অবমাননার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছি৷''

ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল আরো বলেন, ‘‘আমরা দু-একদিনের মধ্যেই জরুরি বৈঠক ডেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷ একজন সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে শিক্ষক অবমাননার ঘটনাটি ঘটেছে৷ এটা অনেক বড় লজ্জার ঘটনা৷ ওই সংসদ সদস্য যত প্রভাবশালীই হোক না কেন তাকেও আইনের আওতায় আনতে হবে৷''

এ কেএম মাকসুদ কামাল

শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা এখনো সরকার, তথা শিক্ষামন্ত্রণায় শিক্ষক অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখার অপেক্ষায় আছেন৷ যদি অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে শিক্ষকরা বড় কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি দেবেন৷ আর এই কর্মসূচির ব্যাপারে সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এক হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে ধর্ম নিয়ে কটুক্তির গুজব ছড়িয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয়৷ স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের প্রত্যক্ষ তদারকিতে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন নজিরবিহীন ‘শাস্তি' কার্যকর করা হয়৷

অথচ বাস্তবে প্রধান শিক্ষক ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তি করেননি৷ কয়েকদিন আগে তিনি দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে থাপ্পর দিয়েছিলেন৷ সেই ঘটনার সুযোগে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে তাঁর বিরোধী গ্রুপের সদস্যরা ধর্ম নিয়ে কটূক্তির গুজব ছড়ায়৷ মসজিদের মাইক ব্যবহার করে এই গুজব ছড়িয়ে স্কুলে লোক জড়ো করা হয়৷ এ সময় শিক্ষককে প্রহার করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে৷ সবশেষে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান সেখানে গিয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠ-বস করান৷

নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত কি যথোপযুক্ত বিচার পাবেন? আপনার মতামত জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান