1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষকদের কেউ রিকশা চালান, কেউ করেন চাষ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ জানুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ হাজার শিক্ষক সরকারি বেতনভাতার আওতায় আসার জন্য আমরণ অনশন করছেন ঢাকায়৷ তাঁরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেলে অনশন ভঙ্গ করবেন, তার আগে নয়৷ শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তাঁদের আস্থা নাই৷

https://p.dw.com/p/2qEdc
Organisation Shidhulai Swanirvar Sangstha in Bangladesh
ছবি: Getty Images

বাংলাদেশে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সরকার যে পদ্ধতিতে বেতনভাতা দেয়, তাকে সংক্ষেপে বলা হয় এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার)৷ তবে এই বেতনভাতা পেতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের এ জন্য এমপিও-ভুক্ত হতে হয়৷ প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা এমপিও-ভুক্ত হলে তাঁরা সরকারি বেতন কাঠামো অনুযায়ী মূল বেতনের পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে পান৷ তাঁদের মহার্ঘ্যভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসবভাতাও দেয়া হয়৷

কিন্তু বাংলাদেশে এখনো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭৫ হাজার শিক্ষক এমপিও ভুক্ত নন৷ এছাড়া প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো এমপিও-ভুক্ত হয়নি৷ তাই তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো বেতনভাতাও পায় না৷ দেশে এমন প্রতিষ্ঠানও আছে, যা গত ১৫ বছর ধরে এমপিও-ভুক্তির অপেক্ষায় আছে৷

‘বিনা বেতনে সংসার চালানো দুরূহ’

এমনই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বগুড়ার রায়নগর আদর্শ জুনিয়র হাইস্কুল৷ সেই স্কুলের সহকারী শিক্ষক নুরুন্নাহার বেগম৷ তিনি ১৪ বছর ধরে কোনো বেতনভাতা ছাড়াই ওই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিনা বেতনে সংসার চালানো দুরূহ৷ আমাদের সামান্য জমিজমা আছে৷ আমার স্বামী সেখানে চাষাবাদ করেন৷ আর আমি কিছু টিউশনি করি৷ এ দিয়েই সংসার চলে৷ ১৪ বছর ধরে আশায় আশায় আছি যদি এমপিও ভুক্ত হওয়া যায়, তাহলে আমাদের কষ্টের অবসান ঘটবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমার পরিচিত এ রকম কয়েকজন শিক্ষক আছেন, তাঁরা স্কুলের পর মুদির দোকান চালান বা অন্য কোনো কাজ করে সংসার চালান৷ আমরা অন্যের সন্তানদের শিক্ষা দেই৷ কিন্তু আমাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা দিতে পারি না, শুধুমাত্র অর্থের অভাবে৷''

দেবপ্রসাদ মন্ডল খুলনা ডুমুরিয়ার স্বর্ণদ্বীপ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ৷ তিনিও প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে আছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এমন শিক্ষকও আছেন, যাঁরা সন্ধ্যার পর রিকশা চালিয়ে অথবা ওষুধ বিক্রি করে সংসার চালান৷ কেউ কেউ টিউশনি করেন৷ যাঁদের জমিজমা আছে, তাঁরা কৃষিকাজ করেন৷ কেউ আবার মাছের ঘেরে কাজ করেন৷ কারণ শিক্ষকতার বিনিময়ে তাঁরা কোনো বেতন পান না৷''

‘এমন শিক্ষকও আছেন, যাঁরা রিকশা চালিয়ে সংসার চালান’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘২০১০ সালের নীতিমালার আলোকে ১৬২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও-ভুক্ত হয়৷ সেই নীতিমালার আলোকে বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এমপিও-ভুক্ত হওয়ার কথা৷ কিন্তু হচ্ছে না৷ আবার এমন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আছে, যারা এমপিও ভুক্ত কিন্তু যোগ্যতা নেই৷''

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মঙ্গলবার সকালে প্রেসক্লাবের সামনে অনশনরত শিক্ষকদের মাঝে গিয়ে অনশন ভাঙার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘‘নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে৷ অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়সহ বসে আমরা আপনাদের এমপিও-ভুক্ত করবো৷'' কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর এই আহ্বানে সাড়া দেননি শিক্ষকরা৷ তাঁরা বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস না পেলে আমরা ঘরে ফিরে যাব না৷''

আন্দোলনরত অধ্যক্ষ দেবপ্রসাদ মন্ডল বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর কথায় আমাদের বিশ্বাস নেই৷ কারণ শিক্ষামন্ত্রী গত ন'বছর ধরেই নীতিমালা তৈরির কথা বলে যাচ্ছেন৷ আর গতকাল (সোমবার) প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন যে, এ ব্যাপরে আমরা কিছু জানি না৷ আমাদের কোনো চিঠি দেয়া হয়নি৷ তাহলে আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কথায় কীভাবে আস্থা রাখি? আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে চেয়ে আছি৷ তিনি যদি বলেন সম্ভব না, তাহলে আমরা চলে যাব৷''

‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব’

নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ডা. বিনয়ভূষণ রায় দু'জনই অনশনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ সভাপতির পক্ষে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রদ্যোৎ কুমার সানা৷ তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী আমাদের বলেছেন, নীতিমালা হলে এমপিও-ভুক্ত করা হবে৷ কিন্তু কবে বা কতদিনের মধ্যে হবে, তা তিনি বলেননি৷ এমনকি তিনি এমনও বলেননি যে, আপনারা অনশন ভঙ্গ করেন, আপনাদের এমপিও-ভুক্ত করা হবে৷ তাই আমরা সুনির্দিষ্ট আশ্বাস ও ঘোষণা চাই৷ আর সেটা চাই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে৷ সেই ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা আমাদের আমরণ অনশন চালিয়ে যাব৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার অনুমোদিত৷ সরকারের নিবন্ধন ও পাঠদানের অনুমতির পরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হয়েছে৷''

গত ২৬ সিসেম্বর থেকে এমপিও-ভুক্তির দাবি নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষকরা৷ ৩১ ডিসেম্বর থেকে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করেন৷ নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের এমপিও-ভুক্ত নয় এমন শিক্ষকরা এই আন্দোলন করছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান