1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৩৪ বছর পর রায়

অনিল চট্টোপাধ্যায়
১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

৩৪ বছর পর শিখ-বিরোধী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি, কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট৷ তবে রায় ঘোষণার সময় নিয়ে চলছে বিতর্ক৷

https://p.dw.com/p/3AKtz
NEU DELHI INDIEN 31. JULI Kongressleiter Sajjan Kumar
ছবি: imago/Hindustan Times

১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী৷ তারপরই শুরু হয় শিখ-বিরোধী দাঙ্গা৷ দিল্লিসহ ভারতের অন্যান্য স্থানে মোট ৩৩৫০ জন শিখ মারা যায় সেই দাঙ্গায়৷

দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস. মুরলীধর এবং বিনোদ গোয়েলের বেঞ্চ রায় ঘোষণার সময় ১৯৮৪ সালের অক্টোবর-নভেম্বরের সেই গণহত্যাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে অ্যাখ্যা করে৷প্রবীণ কংগ্রেস নেতা, শিখ হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামী সজ্জন কুমারকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দেয়া হয়৷ হিংসাশ্রয়ী জনতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি৷ তাদের ক্ষেপিয়ে তুলেছিলেন তিনি৷ ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে৷ উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে নিম্ন আদালতে সজ্জন কুমার ছাড়া পেয়েছিলেন৷ হাইকোর্ট তা খারিজ করে এই রায় দেয়৷ রায়ে বলা হয়, দিল্লির রাজনগর এলাকায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালানো হয়৷ স্রেফ ঐ এলাকাতেই প্রাণ হারায় ৩৪১ জন শিখ৷ শুধু তাই নয়, লুটপাট চালানো হয় এবং শিখ সম্প্রদায়ের ধনসম্পত্তিতে আগুন লাগানো হয়৷ ধ্বংস করা হয়৷ হাইকোর্টের এই রায়ের পর সজ্জন কুমার কংগ্রেস পার্টির সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন৷ রাহুল গান্ধীকে লেখা এক চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, আদালতের রায়ের পর তিনি দলকে অস্বস্তিতে ফেলতে চান না৷

কে এই সজ্জন কুমার?

প্রায় চার দশক ধরে তিনি কংগ্রেসের হয়ে রাজনীতি করছেন৷ প্রথমে দিল্লি পুরসভার কাউন্সিলর, পরে দিল্লি থেকে তিনবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন৷ তার নির্বাচনি এলাকায় বিরাট জনসমর্থন ছিল সেই সময়ে৷ এই রায় নিয়ে কংগ্রেস এবং বিজেপি সরকারের মধ্যে শুরু হয় কাজিয়া৷ তবে এই রায়কে শিখ সম্প্রদায় ছাড়াও বিজেপি এবং আকালি দল স্বাগত জানিয়েছে৷ দিল্লির কংগ্রেস সদর দপ্তরের সামনে নিহত পরিবারের আত্মীয়-স্বজন এবং সমর্থকরা সজ্জন কুমারের কুশপুত্তলিকা জ্বালিয়েছে৷ তাঁরা বলেছেন, যে দলের নেতারা এই ধরনের জঘন্য হত্যাকাণ্ডে উস্কানি দিতে পারে, সেই দলের রাজনৈতিক স্বীকৃতি খারিজ হওয়া উচিত৷

‘পুলিশ প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের কথায় উঠাবসা করে’

প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উপস্থিত ছিল বিজেপি সমর্থকরাও৷ তাঁদের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডের অপর দুই প্রধান আসামিকেও অনুরূপ শাস্তি দিতে হবে৷ অপর দুই আসামির একজন মধ্যপ্রদেশে সদ্য মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসা কমলনাথ এবং অপর জন কংগ্রেসের এককালীন ডাকাবুকো নেতা জগদীশ টাইটলার৷ বিজেপি মনে করে, এই দু'জনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে৷ কিন্তু ন্যায়বিচারকে বিলম্বিত করার জন্য তা ইচ্ছাকৃতভাবে চাপা দিয়ে রাখে সে সময় ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস সরকার৷ নানা ছলচাতুরিতে এই রায়দানকে ঝুলিয়ে রাখা হয়৷ প্রশ্ন উঠে আসে, যার হাতে এখনো রক্তচিহ্ণ লেগে রয়েছে, সেই কমলনাথকে কী করে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী? রাহুল গান্ধী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও কমলনাথ স্বয়ং বলেছেন, ১৯৯১ সাল থেকে তিনি নেতা ও মন্ত্রীপদে ছিলেন৷ কিন্তু তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনো ডায়েরি করা হয়নি৷ কোনো মামলা করা হয়নি৷ কমলনাথ এবং জগদীশ টাইটলারেকেও অনুরূপ শাস্তি দেবার কথা বলেছেন আম আদমী পার্টি, তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল৷ পাশাপাশি কংগ্রেসও পাল্টা হামলা চালিয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে৷ বলেছে, ২০০২ সালের গুজরাট হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময়ে তো গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জড়িত অপরাধীদের কয়জনকে তিনি শাস্তি দিতে পেরেছেন?

ক্ষমতাসীন দলগুলি নিজেদের মুখ-পিঠ বাঁচাতে কিভাবে কাজ করে থাকে সে বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমূল্য গাঙ্গুলি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘এটা স্বাভাবিক  যে কংগ্রেস পাল্টা হামলায় গুজরাট-দাঙ্গা প্রসঙ্গ তুলবে৷ আদালতের রায়েও সে-কথার উল্লেখ আছে৷ ১৯৮৪-র শিখ নিধনকাণ্ড এবং গুজরাট দাঙ্গায় শাসক দলের ভূমিকা কী ছিল, কারো জানতে বাকি নেই৷ হ্যাঁ, মায়া বদলানিকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তার জেল হয়৷ পরে তাকে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়৷ কিন্তু যিনি পালের গোদা, তাকে তো ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে৷ তিনি তো রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে৷ তত্কালীন গুজরাটে মোদী সরকারের মন্ত্রী হরেন পান্ডিয়া পুলিশ প্রশাসনকে তদন্তে ধীরে চলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এমনটাই জানা যায়৷ পরে হরেন পন্ডিয়া খুন হন৷ আসল কথা খুন-খারাপি ভারতীয় রাজনীতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পুলিশ প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের কথায় উঠাবসা করে৷ কার্যত সব দলই একই গোত্রের৷ কাজেই পুলিশকে হতে হবে আরো বেশি পেশাদার৷''

অমূল্য গাঙ্গুলি আরো বলেন, ‘‘সজ্জন কুমারের এত ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ছিল সে সময় যে, দেশের শীর্ষ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই অফিসাররা যখন সজ্জন কুমারের বাসভবনে গিয়েছিলেন,তখন তাদের আটকে রাখা হয়৷ এটাই ভারতের ট্র্যাজেডি৷ এই দেখুন না, কিছুদিন আগে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশায়েরে গরু নিয়ে মারদাঙ্গায়  জনতা একজন পুলিশকে মেরেই ফেললো৷ রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এটাকে বলে দিলেন অ্যাক্সিডেন্ট৷ তবে পাশাপাশি এ কথাও সত্যি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি যে হয়নি, তা নয়৷ যেমন ধরুন, সজ্জন কুমারকে দেরিতে হলেও শাস্তি দেওয়া৷''