1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কসোভোর দৈনন্দিন জীবন

আনিকা সাইটলার/আরবি১৭ জানুয়ারি ২০১৪

আলবেনিয়ান ও সার্বিয়ানদের মধ্যে সম্পর্কটা এখনও খুব সুমধুর নয়৷ প্রশ্ন উঠতে পারে অদূর ভবিষ্যতে সম্প্রীতির সম্ভাবনা কী আদৌ রয়েছে? একদল আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রী কসোভোতে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন তাঁদের ক্যামেরার মাধ্যমে৷

https://p.dw.com/p/1As23
ছবি: C. Meszaros

প্রিস্টিনার শহিদ মিনারটি সময়োপযোগী নয়৷ তবু এটি দৃশ্যমান৷ বিশাল, কিছুটা অনাদরে পড়ে থাকা৷ তবু চোখ এড়ানো যায় না৷ কমিউনিস্ট আমলের এই স্থাপনা এখন অতীতের এক স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে৷ এককালে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও একতার প্রতীক ছিল প্রকাণ্ড এই স্থাপনাটি৷

অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়

‘‘এই স্মৃতিস্তম্ভটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আলবেনীয় ও সার্বীয়দের অভিন্ন অতীতের কথা৷'' বলেন কসোভোর আলোকচিত্র শিল্পী জেটমির ইদরিজি৷ তিনি এই মিনারের সাদা কালো ছবি তুলেছেন৷ ফিতার মতো কেঁটে কেঁটে দিয়েছেন এক অভিনব রূপ৷ ছবির অনেক বিষয় খুঁজে পান এই তরুণ কসোভোর উত্তরাঞ্চলীয় শহর মিত্রোভিচায়৷ যুদ্ধের পর থেকে শহরটি বিভক্ত এবং জরুরি অবস্থার মাঝে রয়েছে৷ উত্তরের অধিকাংশ বাসিন্দা সার্বিয়ান৷ সারা দেশে যাঁরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়৷

২০০৮ সাল থেকে কসোভো একটি স্বাধীন রাষ্ট্র৷ অনেক সার্বিয়ান এটা স্বীকার করতে রাজি নন৷ তাঁরা কসোভোকে সার্বিয়ার এক অংশ বলে মনে করেন৷ গত বছরে অনুষ্ঠিত এক চুক্তিতে বেলগ্রেড ও প্রিস্টিনার সম্পর্ককে হয়ত স্বাভাবিক করবে৷ মনে করেন বিশ্লেষকরা৷

কাছাকাছি আসার চেষ্টা

কসোভো-আলবেনিয়ান জেটমির মতে কাছাকাছি আসার ব্যাপারে অভিন্ন অতীতের দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত৷ অনেক সময় পেছনের দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়৷ মঙ্গোলিয়া, হাঙ্গেরি, প্যালেস্টাইন, মালি ও জার্মানির আরো পাঁচ আলোকচিত্রীর সঙ্গে এক সপ্তাহ কসোভোতে কাটিয়ে এলেন জেটমির৷ প্রত্যেকেই দুই জাতির পারস্পরিক বোঝোপড়ার বিষয়টি নিজ নিজ দৃষ্টিতে দেখেছেন, ব্যাখ্যা করেছেন৷ এই শিল্পীরা সেখানকার মানুষ, প্রকৃতি এবং পরিস্থিতি লক্ষ্য করেছেন, ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন৷ তাঁদের তোলা এই সব শিল্পকর্ম ‘কসোভোতে পুনর্মিলন' নামে জার্মান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন বা জিআইজেড-এর একটি ফটো প্রদর্শনীতে দেখা যাবে৷

GIZ - Fotografenworkshop 2013 Versöhnung im Kososvo
২০০৮ সাল থেকে কসোভো একটি স্বাধীন রাষ্ট্ছবি: C. Meszaros

একজন স্বীকৃত ফটো সাংবাদিক

জেটমির জন্মগ্রহণ করেন প্রিস্টিনায়৷ কসোভো যুদ্ধের সময় ১৫ বছর বয়সি ছিলেন তিনি৷ এরপর ম্যাসেডোনিয়া, বেলজিয়াম হয়ে আবার স্বদেশে ফিরে আসেন৷ আজ তিনি একজন স্বীকৃত ফটো-সাংবাদিক৷ কাজ করেন যেমন কসভোর প্রিস্টিনায়, তেমনি সার্বিয়ার বেলগ্রেডে৷ যেখানে অনেক বন্ধু বান্ধব রয়েছে তাঁর৷ তিনি সেই সব মানুষের ক্রোধ ও ঘৃণা বুঝতে পারেন, যাঁরা যুদ্ধে আপনজন হারিয়েছেন৷ জেটমিরের নিজের পরিবার সৌভাগ্যবশত হানাহানির হাত থেকে উদ্ধার পেয়েছে৷

ম্যার্লিন নাদ-তোর্মা জিআইজেড-এর ওয়ার্কশপে ছয়জন অংশগ্রহণকারীদেরই একজন৷ কসোভোর সহকর্মীদের তোলা ছবি তাঁর মনে দাগ কেটেছে৷ ম্যার্লিন জানান, ‘‘আমি মনে করি এটার প্রতীকী অবেদন বেশ জোড়ালো৷'' অন্যদিকে জেটমির দেখিয়েছেন, স্মৃতিস্তম্ভগুলি এখনও দাঁড়িয়ে আছে কসোভোতে৷ তবে এগুলির আর কার্যকারিতা নেই৷ কিন্তু এই সুযোগটা এখনও রয়েছে, এগুলি আবার উজ্জীবিত হতে পারে৷

বিষয়টি কিছুটা জটিল

এই জার্মান আলোকচিত্র শিল্পীর কাছে প্রথমে ‘কসোভোতে পুনর্মিলন' বিষয়টিকে কিছুটা জটিল মনে হয়েছে৷ এই প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে এমন একটি দেশে, যেখানে ঘটনাটি খুব দূর অতীতের নয় এবং অনেক জায়গায় দ্বন্দ্ব সংঘাতের কোনো মীমাংসা হয়নি এখনও৷ কিন্তু এক সপ্তাহ প্রিস্টিনায় থাকার সময় কিছু সুন্দর মুহূর্তও লক্ষ্য করেছেন তিনি৷ ‘‘একটি বেকারি ও একটি ওষুধের দোকানে আমরা সার্বিয়ান ও আলবেনিয়ানদের এক সঙ্গে কাজ করতে দেখেছি৷'' জাতিগত পার্থক্য নিয়ে মাথা ঘামাননি তাঁরা৷

ম্যার্লিন খেলাধুলার জায়গা কিংবা বসত বাড়ির ফটো তুলেছেন৷ তাঁর তোলা ছবিগুলি কিছুটা স্বপ্নমাখা, কেননা এগুলি অনেকটাই ঝাপসা৷ ‘‘এই স্থানগুলিকে ভিন্ন আলোকে দেখানো হয়েছে৷ আমি মনে করি, ছোট্ট একটু পরিবর্তন আমাদের চেতনায় বড় রকমের প্রভাব বিস্তার করতে পারে'', বলেন ম্যার্লিন৷

GIZ - Fotografenworkshop 2013 Versöhnung im Kososvo
কসোভোয় শিশুরা খেলছেছবি: G. Rentsendorj

‘লান্ডেসমুজিয়ুমে' দেখা যাবে...

জেটমিরের কাছে তাঁর সহকর্মীদের তোলা ছবিগুলি ভালো লেগেছে৷ ‘‘আমি কিছুটা চিন্তিত ছিলাম৷ ভেবেছিলাম তাঁরা শুধু একজন সার্বিয়ান ও আলবেনিয়ানকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে ফটো তুলবেন৷ আর এতেই কাজটা হয়ে গেল বলে মনে করবেন৷ কিন্তু তাঁরা দেখিয়েছেন ‘পুনর্মিলন'-এর চেয়ে অনেক বেশি'', বলেন জেটমির৷

বন শহরের ‘লান্ডেসমুজিয়ুমে' তাঁর তোলা ফটোর পাশেই স্থান পেয়েছে ম্যার্লিন নাডজ-টমার ছবি৷ ম্যার্লিন জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেছেন, বড়ও হয়েছেন৷ বাবা-মা এসেছেন সার্বিয়া থেকে৷

ওয়ার্কশপের সময় এই দুই শিল্পীর মধ্যে সৌহার্দ্য গড়ে ওঠে৷ ‘‘আমরা অনেক হাসি-ঠাট্টা করেছি৷ নিজেদের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনও করেছি, তবে অত্যন্ত ইতিবাচক এক পন্থায়'', বলেন এই আলোকচিত্রী৷ এই দুই শিল্পী ছোট আঁকারে যা পেরেছেন, ভবিষ্যতে সেটাই সমগ্র সার্বিয়ান ও আলবেনিয়ানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে৷ যা হলো, অতীত পেছনে ফেলে এক সাথে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য