শি জিনপিংয়ের মিয়ানমার সফর এবং আঞ্চলিক রাজনীতি
চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবারের মত মিয়ানমার সফরে গেছেন শি জিনপিং৷ আঞ্চলিক মিত্র হলেও গত প্রায় দুই দশকে চীনের কোনো প্রেসিডেন্ট মিয়ানমার যাননি৷ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে জিনপিংয়ের এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
৭০ বছরের বন্ধন
দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে দুই প্রতিবেশী চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে মিত্রতা সম্পর্ক৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব সময় মিয়ানমারের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন৷ দীর্ঘ এ সময়ে মিয়ানমারে ক্ষমতার পালাবদল হলেও মিত্রতার সম্পর্কে তার প্রভাব পড়েনি৷
উৎসবের সাজে রাজধানী
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয় বছর আগে মিয়ানমার সফর করলেও প্রেসিডেন্ট শির এটাই প্রথম৷ শির আগমন উপলক্ষে তাই রাজধানী নাই পি তাও উৎসবের সাজে সেজেছে৷
আনন্দ নেই কাচিন রাজ্যে
শির আগমন চীন সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের উত্তরের রাজ্য কাচিনের কয়েক হাজার গ্রামবাসীকে দুঃসহ কষ্টের কথা মনে করে দিয়েছে৷ বেইজিংয়ের টাকায় একটি হাইড্রোপাওয়ার বাঁধ নির্মাণ করতে ওই এলাকার মানুষদের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হতে হয়৷ বিক্ষোভের কারণে ২০১১ সালে বাঁধের কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রামবাসীদের ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না৷
শি’র ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’
শির এই মেগা প্রকল্পে চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে মিয়ানমারে সরাসরি যোগাযোগের জন্য রেলপথ তৈরি হবে৷ রেলপথ দিয়ে চীনের পণ্য দ্রুত রাখাইন বন্দরে পৌঁছাবে৷রেলপথ তৈরির জন্য কাচিনের মাইইজোং বাঁধের নির্মাণ কাজ আবার শুরু হওয়া জরুরি৷ শির এবারের সফরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে৷
রাখাইনে সমুদ্র বন্দর
শির এবারের সফরে রাখাইনে চীনের সমুদ্র বন্দর তৈরি নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হতে পারে৷ যদিও রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাখাইন রাজ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে৷
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাল চীন
সন্ত্রাস দমনের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে যে নিপীড়ন চালিয়েছে জাতিসংঘ তাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলেছে৷ কিন্তু চীনের কারণে জাতিসংঘ দেশটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না৷ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ায় শুধু চীনের আপত্তিতে সব প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়৷
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস
সেনা নিপীড়ন থেকে বাঁচতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে রাজি করানোর চেষ্টার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চীন৷ কিন্তু কার্যত তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা
রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে আইসিজে গাম্বিয়ার করা যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফেঁসে যেতে পারে মিয়ানমার৷ শির সফরে এই মামলা স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে৷
হাজার হাজার ডলার বিনিয়োগ
শি যে দেশেই সফরে যান ওই দেশে হাজার হাজার ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করেন৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়৷ তার উপর আঞ্চলিক প্রভাব বড়াতে কৌশলগত দিক দিয়ে মিয়ানমারের ভৌগলিক অবস্থান তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ রাখাইনে বন্দর নির্মাণ করতে পারলে বাণিজ্য ছড়াও এই অঞ্চলে তাদের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করার সুযোগ বাড়বে৷
ভারত মহাসাগরে চীনের পদার্পণ
চীন মিয়ানমারের সঙ্গে যে ‘ওয়াই’ আকৃতির ইকোনোমিক করিডোর তৈরি করতে চাইছে তাতে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে দেশটি সংযুক্ত হবে৷
ভারতের দুশ্চিন্তা
তিন বছর আগে রাখাইনের রাজধানী সিটওয়েতে কালাদান নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বন্দর নির্মাণ করেছে ভারত৷ এখন মাত্র ১০৫ কিলোমিটার দূরে কিউকপুতে চীনের বন্দর সিতওয়ে বন্দরকে গুরুত্বহীন করে দিতে পারে৷ এই বন্দর হয়ে বঙ্গোপসাগরে চীনের নজরদারিও শুরু হয়ে যেতে পারে৷