1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শুরু হলো জোট আলোচনা

২৬ জানুয়ারি ২০১৮

অবশেষে জোটের দিকে একধাপ এগলো জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি৷ শুক্রবার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন এসপিডি প্রতিনিধিরা৷ তবে শেষ পর্যন্ত জোট হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি৷

https://p.dw.com/p/2rYbb
জার্মানিতে জোট সরকার নিয়ে আলোচনা
ছবি: picture-alliance/dpa/B.v. Jutrczenka

অবশেষে আলোচনায় বসল জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের কনজারভেটিভ দল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন সিডিইউ এবং জার্মানির মধ্যবামপন্থি দল সামাজিক গণতন্ত্রীরা৷ দীর্ঘ টালবাহানার পর দুই দল আলোচনায় বসতে রাজি হল৷ তবে এই আলোচনা যে শেষপর্যন্ত মহাজোটের দিকে এগোবে এবং জার্মানিতে সরকার গঠন করবে, এখনই তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না৷ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, জল গড়িয়েছে মাত্র৷ তবে তা কোন পথে যাবে, এখনই বলা মুশকিল৷ 

ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে৷ ওই মাসেই জার্মানিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ কিন্তু কোনো দলই সরকার বানানোর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি৷ গতবারের চেয়ে অনেক কম ভোট পায় ম্যার্কেলের দল৷ খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের আরেক জোট সদস্য বাভেরিয়ার খ্রিষ্টীয় সমাজতন্ত্রী বা সিএসইউ দলের ভোট কমেছে চোখে পড়ার মতো৷ চোখে পড়ার মতো ভোট কমেছে মধ্যবামপন্থিদেরও৷ উলটোদিকে, দক্ষিণপন্থি দল জার্মানির জন্য বিকল্প বা এএফডি ভোট শতাংশ অনেকটাই বাড়িয়ে নেয়৷ কিন্তু কোনো দলই সরকার গঠন করার মতো গরিষ্ঠতা পায়নি৷

২০০৫ থেকে ২০০৯ এবং ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ম্যার্কেলের দলের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠনে সাহায্য করেছিল এসপিডি৷ কিন্তু সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের পর এসপিডি প্রাথমিক ভাবে জানিয়ে দেয়, অন্যবারের মতো এবারও ম্যার্কেলের পাশে থাকবে না তারা৷ ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে ম্যার্কেলও সরকার গঠন করতে পারেননি৷ প্রাথমিক ভাবে অচলাবস্থা কাটার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল না৷ মাঝে কেটে গিয়েছে, প্রায় চার মাস৷ এখনো পর্যন্ত জার্মানিতে সরকার গঠন করা যায়নি৷ জার্মান ইতিহাসে যা ব্যতিক্রমী ঘটনা৷ অন্যদিকে, ম্যার্কেলের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে এসপিডি৷ গত রবিবার বন শহরে তাদের বিশাল সভা হয়৷ ভোটাভুটির মাধ্যমে সেখানে শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় যে, অচলাবস্থা কাটাতে ম্যার্কেলের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে৷ যদিও এসপিডি-র বামমনস্ক একটি অংশ এই ভাবনার সঙ্গে সহমত হতে পারেনি৷ তাদের দাবি, এর ফলে আগামী দিনে এসপিডি-র ভোট আরো কমবে৷ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে দলটি৷

তবে অধিকাংশের মতকে সম্মান জানিয়ে শুক্রবার ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসেছেন এসপিডি-র প্রতিনিধিরা৷ অন্যদিকে ম্যার্কেলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এসপিডি-র সঙ্গে আলোচনা ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করা হবে৷ তারপরেই সরকার গঠনের দিকে এগোবে তাঁর দল৷ উল্লেখ্য ২০১৩ সালে জোট গঠনের জন্য এসপিডি-র সঙ্গে প্রায় তিন সপ্তাহ আলোচনা চলেছিল ম্যার্কেলের৷ 

এবারের পরিস্থিতি অবশ্য আরো জটিল৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আলোচনায় গত সরকারের বেশকিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করবে এসপিডি৷ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আয়কর এবং শরণার্থীদের পরিবারকে জার্মানিতে আসতে দেওয়ার সুযোগ সংক্রান্ত বিষয়৷ বস্তুত, গত দু'টি জোটেই এসপিডি ছিল কনিষ্ঠ সঙ্গী৷ তার জন্য বহু সময়ে তাদের বক্তব্য গুরুত্ব পায়নি৷ এবারের আলোচনায় সেই বিষয়গুলি উঠে আসবে৷ এসপিডি আগের চেয়ে নিজেদের প্রাধান্য বাড়ানোর চেষ্টা করবে৷ অস্তিত্বরক্ষার প্রয়োজনে ম্যার্কেল তা কতদূর পর্যন্ত মেনে নেন, সেটাই দেখার৷

এদিকে জোট আলোচনা ভেস্তে গেলে নতুন ভোটের দিকে এগনো ছাড়া জার্মানির আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারনা, সে ক্ষেত্রে দক্ষিণপন্থি দলের আরো বেশি জনসমর্থন লাভের সুযোগ থাকবে৷ ইতিমধ্যেই অস্ট্রিয়ায় গঠিত হয়েছে অতি দক্ষিণপন্থি দলের সরকার৷ জার্মানিতেও যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, সিডিইউ এবং এসপিডি দু'দলই সে বিষয়ে চিন্তিত৷ ফলে জোট সিদ্ধান্তে সেই বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে অনেকের মত৷

শেষপর্যন্ত জোট বৈঠক সফল হলে নির্বাচনের প্রায় ৬ মাস পর জার্মানিতে সরকার গঠিত হবে৷ জার্মানির ইতিহাসে এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা৷ তবে এসপিডি-র শেষ সভাতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, আলোচনায় বসা মানেই জোটকে সমর্থন করা নয়৷ যদিও অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘ টালবাহানার পর এসপিডি যখন আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে, তখন জোট সম্ভাবনাও খুব দূরবর্তী নয়৷

প্রতিবেদন: টিমোথি জোনস/এসজি