1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শ্বাসপ্রশ্বাস বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয়ের প্রচেষ্টা

২৬ অক্টোবর ২০২১

যত দ্রুত সম্ভব রোগ শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসাও তত কার্যকর হয়৷ এবার শুধু শ্বাসপ্রশ্বাস বিশ্লেষণের মাধ্যমেই ইনফেকশন থেকে শুরু করে ক্যানসারের মতো রোগের লক্ষণ আগেভাগেই টের পাবার চেষ্টা চলছে৷

https://p.dw.com/p/42Brp
Deutschland Konzert der NDR Radiophilharmonie als Experiment zur Verteilung von Aerosolen
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture alliance

মিশায়েল শলেস ও জেসি শ্যোনেফেল্ডারের একটি মিশন বা লক্ষ্য রয়েছে৷ ফ্রাউনহোফার প্রতিষ্ঠানের এই দুই গবেষক শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যেই রোগ শনাক্তকরতে চান৷ গোটা বিশ্বেই সেই প্রচেষ্টা চলছে৷ সেই উদ্যোগ সফল হলে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিপ্লব আসবে৷ ড. শলেস বলেন, ‘‘ব্যাপারটা এভাবে ভাবতে হবে৷ ব্রিদিং এয়ার অ্যানালিসিসের ক্ষেত্রে হয়তো সত্যি ছোট এক পাইপের মধ্যে ফু দিতে হবে৷ সেভাবে রোগের অবস্থা বিশ্লেষণ করা যাবে৷ অথবা কোনো বিশেষ রোগ শনাক্ত করা যাবে৷''

কিন্তু প্রশ্ন হলো, শ্বাসপ্রশ্বাস কীভাবে রোগের সন্ধান দিতে পারে? আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি কোষের মধ্যে মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভলাটাইল অরগ্যানিক কম্পাউন্ড বা ভিওসি সৃষ্টি হয়৷

শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে সেই কম্পাউন্ড শরীরের বাইরে পাঠানো হয়৷ নিঃশ্বাসের মধ্যে প্রায় ২০০ ধরনের ভিওসি থাকে৷ প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে তার অনুপাত আলাদা৷ ইনফেকশন বা ক্যানসারের মতো রোগের কারণে কোষের ক্ষতি হলে ট্রেস গ্যাসের সংমিশ্রণেও পরিবর্তন ঘটে৷ তখন আঙুলের ছাপের মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যায়৷ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ স্পষ্ট হবার আগেই এই বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে৷ ফলে কোভিড-১৯ বা ক্যানসারের মতো রোগের অশনি সংকেত দেয় এই বায়োমার্কার৷

তবে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রযুক্তি পদ্ধতিগতভাবে নির্দিষ্ট কোনো রোগের লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে না৷ শ্বাসপ্রশ্বাস বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল হওয়ায় সেটা এখনো সম্ভব নয়৷ ড. জেসি শ্যোনফেল্ডার বলেন, ‘‘আমরা বায়োমার্কার হিসেবে যে সব পদার্থ সন্ধান করি, সেগুলির ঘনত্ব অত্যন্ত নগণ্য৷ কোনো পরিমাপ যন্ত্র ব্যবহার করে এত কম ঘনত্ব শনাক্ত করা সত্যি খুব কঠিন৷ অন্যদিকে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে পদার্থের বিশাল বৈচিত্র্যও এক বড় চ্যালেঞ্জ৷''

ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা নতুন এক ডায়াগনস্টিকস ইউনিটের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করতে চান৷ নমুনা থেকে অণু আলাদা করতে তারা এক পাতলা টেক্সটাইল ফাইবার ব্যবহার করছেন৷ তাতে ভিওসি লেগে থাকে৷

বিশেষভাবে তৈরি এক চিপ সেগুলির কেমিক্যাল সিগনেচার পাঠোদ্ধার করবে এবং কোনো রোগের নির্দিষ্ট লক্ষণ তুলে ধরবে৷ আয়ন মোবিলিটি স্পেকট্রোমিটার যন্ত্রে শ্বাসপ্রশ্বাসের নমুনা ও চিপের সংযোগ ঘটে৷ ভোল্টেজ পরিবর্তন করলে চিপ শ্বাসপ্রশ্বাসের নমুনা থেকে অণু বেছে নিতে পারে৷

কোনো নমুনায় ঠিক কোন ধরনের এবং কত পরিমাণ রোগের অণু রয়েছে, তা নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা সম্ভব নয়৷ অথচ সেখানেই আরেকটি বাধা রয়েছে৷ শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রত্যেকটি নমুনায় প্রায় পাঁচ লাখ রিডিং সম্ভব৷

মানুষ সেই বিশ্লেষণের কাজ করলে ফল পেতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যাবে৷ তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেই কাজে সহায়তা করবে৷ সেই এআই-কে আগে থেকেই সুস্থ ও অসুস্থ মানুষের প্রোফাইল শিখিয়ে রাখা হবে৷ ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যে ইনফেকশন ও ক্যানসারের মধ্যে তফাত বোঝা যাবে৷

ডিফারেনশিয়েটর হিসেবে এই মাত্রাকে মানদণ্ড করলে সুস্থ ও অসুস্থ মানুষের মধ্যে পার্থক্য করা যাবে৷ শ্বাসপ্রশ্বাস বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক সন্দেহ দেখা দিলে হাসপাতালেও দ্রুত স্ক্রিনিং করা সম্ভব হবে৷ ড. শলেসের বলেন, ‘‘সন্দেহ দেখা দিলে শরীরের মধ্যে লুঙ্গোস্কোপিরমতো আরও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে৷ কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমি সামান্য কয়েকজন রোগীর উপর এমন কঠিন প্রক্রিয়া চালাতে পারবো৷ বাকি রোগীদের সেই চাপ থেকে রেহাই দিতে পারবো৷''

কয়েক বছরের মধ্যেই শ্বাসপ্রশ্বাস ডায়াগনস্টিক ইউনিটের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হতে পারে৷

মানুয়েলা রিশটার-ইয়েনিশ/এসবি