সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা আর ঈদ আনন্দ নিয়ে ঘরমুখো মানুষ
করোনার ভয় উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদে শহর ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ৷ বেশি ভাড়া দিয়ে, নানা ধরনের ঝক্কি সামলে আপনজনদের সঙ্গে উৎসব উপভোগ করতে বাড়ি ফিরছেন তারা৷
দিনভর যানজট
বিধি বহির্ভূতভাবে যত্রতত্র হাট বসানো এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও পিকআপ প্রবেশের কারণে ঢাকায় সৃষ্টি হয়েছে অসহনীয় যানজট৷ ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, এবার গাড়ির চাপ অন্যবারের চেয়ে কিছুটা কম থাকা সত্ত্বেও যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছেন তারা৷
যাত্রী প্রচুর, গাড়ি কম
গাবতলিতে বাস টার্মিনালে অধিকাংশ কাউন্টাটরেই বিক্রয় প্রতিনিধিদের দেখা পাওয়া যায়নি৷ জানা গেল, রাস্তায় জ্যামের কারণে অনেক বাস কোম্পানি গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন৷ ফলে টিকেট যা ছিল আগেভাগেই বিক্রি হয়ে যাওয়াতে অনেক যাত্রীকেই হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে৷
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা
জ্যোৎস্না বেগম তার দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুলনা যেতে গ্রিন লাইনের টিকেট কেটেছেন গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে৷ কিন্তু সাড়ে দশটার গাড়ি আসেনি সাড়ে ১২ টায়ও৷ আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কাউন্টারের লোকেরা এখনো কিছু জানাতে পারেনি৷’’
লঞ্চে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই
দেশের বৃহত্তম লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাটে লঞ্চের ডেকে যাত্রীরা গাদাগাদি করে বসেছেন৷ কেন এভাবে যাচ্ছেন জানতে চাওয়ায় বরগুনাগামী যাত্রী সামিউন বাছির বলেন, ‘‘আমাদের তো ভাই কেবিনে আলাদা যাওয়ার টাকা নাই৷ বাড়ি যেহেতু যাইতেই হবে, তাই এভাবে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই৷ করোনার ভয় একটু আছে, কিন্তু কিছু করার নাই৷’’
চাপ বেশি লঞ্চে
ঢাকার বাস, লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি লঞ্চ টার্মিনালে৷ কেন লঞ্চে যাচ্ছেন জানতে চাইলে বরিশালগামী যাত্রী লোকমান হোসেন বলেন, ‘‘লঞ্চে ভাড়া তুলনামূলক কম৷ তাছাড়া পরিবার নিয়া আরামে যাওয়া যায়৷ তাই ঈদে সচরাচর আমরা লঞ্চে করেই যাতায়াত করি৷’’
সামাজিক দূরত্ব নেই
উত্তরবঙ্গের দিকের বাসের অন্যতম প্রধান টার্মিনাল কল্যাণপুরে এসআর ট্রাভেলসের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেল,গাদাগাদি করে যাত্রীরা বসে আছেন৷ সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই, অনেকের মুখে মাস্কও নেই৷ সাংবাদিকের উপস্থিতি ও ছবি তোলা দেখে অনেকেই তড়িঘড়ি মাস্ক পরে নেন৷ কাউন্টারের টিকেট বিক্রয়প্রতিনিধি বলেন, “যাত্রীদের সচেতন করতে গিয়ে আমরা ক্লান্ত৷ এত বলেও কোনো লাভ হচ্ছে না৷’’
ট্রেনের অনলাইন টিকেট কিনতে ভোগান্তি
গতবছরের মতো এবারের ঈদেও ট্রেনে চেপে মানুষের বাড়ি ফেরার চাপ অতটা দেখা যায়নি৷ অনেক আসন খালি রেখেই আন্তঃনগর এবং লোকাল ট্রেনগুলোকে কমলাপুর রেলস্টেশন ত্যাগ করতে দেখা যায়৷ তবে অনলাইন টিকেটপ্রাপ্তিতে যাত্রীদের অসন্তোষ ছিল৷ রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী বলেন, ‘‘কাউন্টারে টিকেট বিক্রি বন্ধ৷ অনলাইনে টকেট পাওয়াই যাচ্ছিল না৷ অনেকবার চেষ্টা করার পর টিকেট পেয়েছি৷’’
ভাড়া দ্বিগুণ, যাত্রীও দ্বিগুণ
৫০ ভাগ আসন খালি রাখা সাপেক্ষে সরকার বাস ও লঞ্চের যে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে, ঈদের সময় তা মানা হচ্ছে না বলে যাত্রীদের দাবি৷ লঞ্চে ভাড়া দ্বিগুণ নেওয়া হচ্ছে, যাত্রীও তোলা হয়েছে গাদাগাদি করে৷ এদিকে লোকাল বাস ঢাকার সীমানা পর্যন্ত অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখলেও ঢাকা পেরোতেই তারা শতভাগ আসন পূরণ করে যাত্রী নিচ্ছেন৷ কেউ কোনো প্রতিবাদ এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে বলে জানান যাত্রীরা৷
স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে রেলস্টেশনে
ঈদুল আজহার দুই দিন আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেল সেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে যাত্রীদের হাত জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে এবং যাত্রীদের নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে লাইনে দাঁড় করিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করানো হচ্ছে৷ এছাড়া টিকেট কাটার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে অনলাইনে৷
ট্রেন ছাড়ে সময়মতো
প্রতি ঈদে রেলের শিডিউল নিয়ে প্রচণ্ড যাত্রী অসন্তোষ থাকলেও এবারে তেমন কোনো শিডিউল বিপর্যয় দেখা যায়নি৷ এছাড়া রেলস্টেশনগুলোতে এবার যাত্রীর চাপও ছিল তুলনামূলক কম৷ ঈদুল আজহায় বাড়ি যাচ্ছে এমন বেশ কয়েকজন রেলযাত্রী জানালেন, কর্তৃপক্ষ তাদের যথাসময়ে ট্রেন ছাড়ার আশ্বাস দিয়েছেন৷ আবদুস সালাম নামের একজন যাত্রী এতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ট্রেনের যাত্রা সবসময়ই আরামদায়ক, যদি তাতে কোনো ভোগান্তি না থাকে৷’’