1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার হামলার শিকার সাঁওতালরা

৭ নভেম্বর ২০১৬

নাসিরনগর এবং মাধবপুরের পর দেশের বেশ বেশ কয়েকটি জায়গায় হিন্দুদের বাড়ি-মন্দিরে হামলা হয়েছে৷ চলছে হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ৷ এরই মাঝে এলো গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের ওপর হামলার অভিযোগ৷

https://p.dw.com/p/2SHLb
হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদ
ছবি: bdnews24.com

দৈনিক প্রথম আলোর খবর বলছে, ‘‘গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে স্থানীয় সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীর একদল লোকের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন৷'' খবরের বিবরণে আরো জানানো হয়, ‘‘রবিবার ১১টার দিকে চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা পুলিশি পাহারায় সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার-সংলগ্ন এলাকায় জমিতে আখ কাটতে যান৷ তবে খামারের জমিতে থাকা সাঁওতালরা তাঁদের বাধা দেন৷ এতে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং সংঘর্ষ বাধে৷''

তবে সাঁওতালদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের ওপর পুলিশ এবং পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় কিছু লোক ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে

ফেসবুকে বাকি বিল্লাহ গোবিন্দগঞ্জের কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘৬০ দশকে মহিমাগঞ্জ চিনিকলের জন্য ১৫টি আদিবাসী গ্রাম এবং পাঁচটি বাঙালির গ্রাম উচ্ছেদ করে আখচাষের প্রয়োজন দেখিয়ে জমি দখল করা হয়৷ লিখিত চুক্তি অনুযায়ী, এই জমি আখ চাষের জন্যে ব্যবহার করা না হলে জমি তার প্রকৃত মালিককে ফেরত দিতে হবে৷ মহিমাগঞ্জ চিনিকল বন্ধ হয়ে গেছে- ওই জমির কোথাও এখন আর আখ চাষ হয় না৷ দীর্ঘদিন ধরে উচ্ছেদ হওয়া জমির মালিক ও তাদের উত্তরাধিকারী আদিবাসী-বাঙালিরা জমি ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু নানান টালবাহানা করে প্রশাসন ও প্রভাবশালী মহল নিজেরাই ওই জমি গ্রাস করতে চাইছে – বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার নামে৷''

বাকি বিল্লাহ এ ঘটনায় রাষ্ট্রের ‘অন্যায়ের' দিকটি তুলে ধরতে গিয়ে তার পরে লিখেছেন, ‘‘এরপর এ সব টালবাহানাকে উপেক্ষা করে জমির প্রকৃত উত্তরাধিকারীরা নিজেদের জমির দখল নিয়েছেন – কিন্তু রাষ্ট্র কি আর এটি সহজে মানবে? তাই তাদের উচ্ছেদ করতে গুলি চালানো হয়েছে৷ পাঁচজন আদিবাসী গুরুতর জখম হয়ে এখন রংপুর মেডিকেল কলেজে আছে৷ এই ব্যাটা দখলবাজ রাষ্ট্র আর মাস্তান প্রশাসন – তোরা কি এখন নিজেদের বানানো আইনও আর মানবি না? সবকিছু কেবল তোদের উদরেই পুরতে হবে? আর দেশের বাদবাকি সব মানুষ সাগরে ভেসে এসেছে?''

ফেসবুক পোস্টে ‘মহিমাগঞ্জে রাষ্ট্রের জবরদখল ও গুলির প্রতিবাদে' মহিমাগঞ্জ ভুমি অধিকার সংহতি কমিটির ডাকে প্রতিবাদ সমাবেশে সবাইকে যোগ দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷

গোবিন্দগঞ্জের খবরটি নিয়ে টুইটারে প্রবীর বিধান লিখেছেন, ‘‘সাঁওতালদের উপর সন্ত্রাসী পুলিশি হামলা জায়েজ, কারন এটা বাংলাদেশ!''

শ্রমিক নেত্রী জলি তালুকদার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এ আদিবাসীদের উপর পুলিশি গুলি ও হামলা৷ ভূমির অধিকার দাবি করো না তাহলে যে গনতন্ত্র থাকে না! হায় গণতন্ত্র!''

প্রথমে নাসিরনগর এবং মাধবপুর, তারপর দেশের বেশ কিছু জায়গায় হিন্দুদের বাড়ি, মন্দিরে হামলার রেশ এখনো শেষ হয়নি৷ নাসিরনগরে ছোট-বড় মিলিয়ে তিন দফা হামলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান এখনো চলছে৷

হিন্দুদের ঘরবাড়ি-মন্দিরে প্রথম হামলার নয় দিন পর মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল

সেখানে আক্রান্তদের মধ্যে আতঙ্ক এখনো কাটেনি৷ রাত জেগে বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন হিন্দুরা৷

আইন ও সালিশ কেন্দ্র নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছে৷ রিট আবেদনে হিন্দুদের ওপর হামলা, মন্দির, বাড়িঘর ভাঙচুর এবং অগ্নি সংযোগের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, হিন্দুদের রক্ষা করতে ব্যর্থতার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে – তা আদালতকে জানানো৷ শুধু তাই নয়, সারা দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও তাদের ধর্মপালনের নিশ্চয়তা দেয়ার দায়িত্ব সরকার কতটুকু পালন করেছে তা দেখার কথাও বলা হয়েছে৷

নাসিরনগরের পর গোপালগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, রংপুরসহ দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় হিন্দুদের ওপর হামলা হয়ে৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের রাজনীতিতে ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি' হিসেবে পরিচিত অংশটি বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের ওপর গোপনে হামলা চালিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টা করছে৷

বিভিন্দ স্থানে হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদও হচ্ছে৷

নাসিরনগরে হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে৷

গত সপ্তাহে নেত্রকোনায় যে  হামলা হয়েছে তার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে সেই শহরে৷

এদিকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর গত কয়েকদিনের হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক টুইট বার্তায় জানান, তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে হিন্দুদের নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানাতে বলেছেন৷

অবশ্য বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষও উদ্বিগ্ন, চিন্তিত৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকের মন্তব্যেই প্রকাশ পাচ্ছে উদ্বেগের বিষয়টি৷ সার্বিক পরিস্থিতি দেখে অনেকেই বেশ হতাশ৷ হতাশা থেকে একজন টুইটারে লিখেছেন,  ‘‘সেদিন আর কত দূরে? একদিন থাকবে না মন্দির, থাকবে না প্যাগোডা বা গির্জা, ঘোষ-বোস বড়ুয়ারা পালাবে...৷''

সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য