1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংগীত স্রষ্টা বেটোফেনের বাড়িতে

মোস্তাফিজুর রহমান
২৫ নভেম্বর ২০১৭

জার্মানির বন শহরে এসে প্রথমে যে জায়গাটিতে চোখ আটকায় সেটা হলো মুনস্টারপ্লাৎস৷ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে কালো এক ব্রোঞ্জের মূর্তি৷ চিনতে কষ্ট হয়নি এই সুরস্রষ্টাকে৷ সন্ধ্যার মায়াবী আলোয় সেদিন ছবিও তুলেছিলাম কয়েকটি৷ 

https://p.dw.com/p/2oCV2
বেটোফেনের বাড়ি
ছবি: DW/M. M. Rahman

বন শহরের এক ব্যস্ত গলি বনগাসে৷ আশপাশে জমকালো নানান দোকানপাটের ভিড়ে চাপা পড়া বাড়িটি চোখে পড়েনি৷ অথচ গত বিশ দিনে এই বাড়ির সামনে দিয়ে কতবারই না হেঁটে পার হয়েছি! বাইরে থেকে বোঝার উপায়ও নেই যে এর ভেতরেই আছে বিস্ময়কর এক সঙ্গীত স্রষ্টার জীবনের নানান স্মৃতি আর ইতিহাস৷ বেটোফেনের সংগীত জীবনের নানা সামগ্রী আর তাঁর ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে বাড়িটিকে রূপ দেয়া হয়েছে মিউজিয়ামে৷

বন শহরে নিবন্ধনের সময় নগর কর্তৃপক্ষ আমাকে এক বান্ডেল কুপন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই থিয়েটার আর মিউজিয়াম দর্শনের সৌজন্য কুপন৷ বেটোফেন হাউসে প্রবেশের একটি কুপনও ছিল সেখানে৷

বেটোফেনের জাদুঘর
ছবি: DW/M. M. Rahman

এক সকালে বেরিয়ে পড়লাম বেটোফেন হাউস দেখতে৷ ভেড়ানো দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম৷ সংগীত স্রষ্টা লুডভিগ ফন বেটোফেনের জন্ম এই বাড়িতেই৷ বেশ পুরনো বাড়ি৷ বাড়ির উপরের তলায় ছোট্ট একটি কক্ষেই ১৭৭০ সালের ১৬ অথবা ১৭ ডিসেম্বর জন্মেছিলেন ইয়োহান এবং মারিয়া দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান লুডভিগ ফন বেটোফেন

এখানে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার আগে বাড়িটিতে বেটোফেনের এক বন্ধু একটি রেঁস্তোরা চালু করেছিলেন৷ পরে ১৮৮৯ সালে বেটোফেন হাউস সংরক্ষণ সংস্থা নিজদের উদ্যোগে বাড়িটি কিনে নেন৷ বাড়িটিকে রূপ দিতে শুরু করেন জাদুঘর হিসেবে৷ কাজ শেষে ১৮৯৩ সালের ১০ মে এক সংগীত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় বেটোফেন হাউসের৷

বেটোফেনের জাদুঘর
ছবি: DW/M. M. Rahman

বেটোফেন হাউসের ১২ টি গ্যালারি যেন বিস্ময়ে ভরা৷ ১ নং গ্যালারি থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে চারতলা ভবনের কক্ষে কক্ষে ঘুরে ১২ নং গ্যালারিতে এসে শেষ হয় জাদুঘর দেখা৷ জাদুঘরের বেশিরভাগ জিনিসপত্রই বেটোফেনের সময়কালের৷ সবগুলো গ্যালারি ঘুরে দেখলাম বেটোফেনের হাতের লেখা স্মরলিপি, প্রাচীন বনের নানান রকম ছবি, বেটোফেনের ব্যবহার করা নানা রকম বাদ্যযন্ত্র ছাড়াও তাঁর স্মৃতিধন্য নানান জিনিসপত্র৷ অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করা জাদুঘরের প্রতিটি বিষয়বস্তুর বর্ণনা লেখা আছে জার্মান ভাষায়৷ তবে জাদুঘরে প্রবেশের সময় ইংরেজিতে গাইড দেয়া হয়েছিল৷ তাতে প্রতিটি গ্যালারির বিস্তারিত বিবরণ ছিল৷ 

বেটোফেন সবশেষে যে পিয়ানোটি বাজিয়েছিলেন, সেটিও দেখলাম৷ কনরাড গ্রাফ নামে ভিয়েনার এক পিয়ানো নির্মাতা মৃত্যুর মাত্র দেড় বছর আগে পিয়ানোটি দিয়েছিলেন তাঁকে৷ জাদুঘর হিসেবে যাত্রার শুরুর দিন থেকেই বেটোফেন হাউসে রক্ষিত আছে বেটোফেনের স্মৃতিধন্য এই বাদ্যযন্ত্রটি৷

বেটোফেনের জাদুঘর
ছবি: DW/M. M. Rahman

জাদুঘরের উপরের তলার যে কক্ষটিতে জন্মছিলেন বেটোফেন, সেটিতে এখন দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় না৷ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে এর ভেতরটা দেখা যায়৷ কক্ষটির এক পাশে বেটোফেনের একটি আবক্ষ মূর্তি রেখে সেখানে আলোছায়ার খেলা দেখানো হয়েছে৷

সকালের দিকে গিয়েছিলাম বলে দর্শনার্থী ছিল না বললেই চলে৷ কিন্তু বের হওয়ার সময় দেখলাম ছোট্ট এই জাদুঘর দর্শনার্থীতে একরকম ঠাসা৷ বড় কয়েকটি পর্যটক দলকেও দেখলাম৷ তারমধ্যে চীনা পর্যটক দলের কাছে গাইড নিজস্ব ভাষায় গ্যালারির প্রত্যেকটি বিষয় বর্ণনা করছিলেন৷ গ্যালারির ভেতরে ছবি তুলতে মানা, টিপ টিপ বৃষ্টিতেও জাদুঘরের বাইরের  আঙ্গিনায় তাই ছবি তুলতে কেউ কার্পণ্য করছিলেন না৷

মোস্তাফিজুর রহমান, ডয়চে ভেলে
মোস্তাফিজুর রহমান, ডয়চে ভেলেছবি: Asaduzzaman Pramanik

বেটোফেন হাউসের নিচ তলায় দেখলাম সমৃদ্ধ একটি বিক্রয় কেন্দ্র৷ জাদুঘর দেখতে আসা দর্শনার্থীরা সেখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন বেটোফেনের বিভিন্ন রকম স্মারক৷ কী নেই সেখানে? পোস্টার, পোস্টকার্ড, টিশার্ট, কলম, তাঁর মিউজিকের সিডিসহ বলতে গেলে সবই আছে৷ দর্শনার্থীরা এসব কিনতে পারেন সেখান থেকে৷

বেটোফেন হাউস খুবই ছেট একটি জাদুঘর৷ একজন সংগীত শিল্পীর স্মৃতি কতটা যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে তা এই জাদুঘর না দেখলে বোঝা কঠিন৷ অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের ভবনের ভেতর কিংবা বাইরের সবকিছু অবিকল রেখে কত সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে বেটোফেনের নানান স্মৃতি৷

বাংলাদেশে এ চিত্র পুরোটাই বিপরীত৷ দেশের প্রায় সবগুলো জাদুঘরই দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, যার বেশিরভাগের অবস্থাই অত্যন্ত নাজুক৷ আর এ ধরনের সংগীতশিল্পীদের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগেরও অভাব আছে৷ যেমন বাউল সম্রাট লালন সাঁই, মরমী শিল্পী আবদুল আলীম, আব্বাস উদ্দীন, শাহ আবদুল করিমের মতো সংগীত স্রষ্টাদের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখবার এরকম মহৎ উদ্যোগ বাংলাদেশে নেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য