1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সতর্ক থাকুন, নিপাহ ভাইরাস থেকে বাঁচুন

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১

মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে একের পর এক জেঁকে বসছে নতুন নতুন রোগ৷ ফলে বিজ্ঞানীরা এক রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের পর স্বস্তির নিশ্বাস না ফেলতেই আরেক নতুন রোগ এসে হাজির৷ এমনই এক নতুন ভাইরাস ‘নিপাহ’ হানা দিয়েছে বাংলাদেশে৷

https://p.dw.com/p/10HEW
প্রধানত নিপাহ বাদুড়ের দেহে থাকেছবি: Merlin D. Tuttle, Bat Conservation International, www.batcon.org.

সম্প্রতি বাংলাদেশের লালমনিরহাট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এক অজ্ঞাত রোগ৷ ঘটতে থাকে প্রাণহানি৷ তবে শেষ পর্যন্ত জানা যায় এটি নিপাহ ভাইরাসের প্রকোপ৷ বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম লালমনিরহাটেই ঘটেনি৷ এর আগে ফরিদপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজবাড়ি, নওগাঁ, মেহেরপুর ও টাঙ্গাইল এলাকায় নিপাহ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল৷ বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাসের অস্তিত্ব দৃষ্টিগোচর হয় ২০০১ সালে৷ আর এর চার বছর আগে বিশ্বে প্রথম ধরা পড়ে এই ভাইরাসের সংক্রমণ৷ সেটি ছিল মালয়েশিয়ায় ১৯৯৮ সালে৷ মালয়েশিয়ার পর সিঙ্গাপুর, ভারত ও বাংলাদেশে এর অস্তিত্ব খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা৷

এই নিপাহ ভাইরাসের প্রকোপ ও ভয়াবহতা নিয়ে এবং তা থেকে মানুষকে বাঁচাতে গবেষণাসহ মাঠ পর্যায়েও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট - আইইডিসিআর৷ প্রাথমিকভাবে দেশের ১০টি হাসপাতালে এই ভাইরাসের চিকিৎসা ও গবেষণা কাজ চালু করা হয়৷ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান মাঠ থেকে ফেরার সময়েই আমরা জানতে চাইলাম লালমনিরহাটের সর্বশেষ পরিস্থিতি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, এ পর্যন্ত লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২৪ জন৷ তাদের মধ্যে মারা গেছে ১৭ জন৷ আরো কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছে৷ তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে৷

তাই নিপাহ ভাইরাসের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ তবে প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন কারো দেহে এটি সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি৷ এ বছর লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা ছাড়াও ফরিদপুরে পাঁচ জনের দেহে ধরা পড়ে এই ভাইরাস৷ তাদের মধ্যে চার জনই মারা গেছে৷ এর সংক্রমণ যাতে আর কোথাও ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সারা দেশের সিভিল সার্জন অফিসকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে৷

তিনি জানান, প্রধানত এটা বাদুড়ের দেহে থাকে৷ তবে কখনও কখনও এটা মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে৷ মূলত শীতকালে এর সংক্রমণ বাড়তে দেখা যায়, তাই এসময় আমরা নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে তৎপরতা বাড়িয়ে থাকি৷ লালমনিরহাটে শনাক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ২০০১ সাল থেকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫২ জন৷ এর মধ্যে ১১৩ জনই মারা গেছেন৷ শীতকালে খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়৷ এসময় রসের পাতিলটি খোলা থাকায় সেখানে বাদুড়ের লালা, প্রস্রাব এমনকি বাদুড়ের দেহ থেকে নিঃসৃত সব তরল পদার্থ থেকেই এই ভাইরাস রসের সাথে যুক্ত হতে পারে৷ মানুষ এই রস খেলে মানুষের দেহে বাসা বাঁধে এই ভাইরাস৷

তিনি বাদুড়ের খাওয়া ফল ও এই সময় শীতকালে খেজুরের রস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷ ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন৷ আর বাদুড়ের আবাসস্থলও এড়িয়ে চলতে বলেছেন৷ এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সুনির্দিষ্ট কোন চিকৎসা নেই৷ তবে আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে৷

ডা. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, এটা মস্তিষ্কের প্রদাহ সৃষ্টি করে, যেটাকে আমরা এনকেফেলাইটিস বলি৷ কখনও কখনও শ্বাসনালীকেও সংক্রমিত করে৷ আর সেক্ষেত্রে মানুষ থেকে মানুষের দেহে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ এই ভাইরাসের সংক্রমণে প্রচণ্ড জ্বর, মাথাব্যথা, খিঁচুনি, প্রলাপ বকতে থাকা, কখনও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কিংবা শ্বাসকষ্ট হতে পারে৷ এসব লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে এবং আলাদা রেখে সাবধানতার সঙ্গে চিকিৎসা করতে হবে৷ শুশ্রূষাকারী ছাড়া আর কেউ যেন রোগীর সংস্পর্শে না যায়৷

এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হার শতকরা ৭৫ ভাগ৷ চার জন মানুষ আক্রান্ত হলে তিন জনই মারা যায়৷ নিপাহ ভাইরাসকে মারাত্মক ভাইরাস বলা হলেও তিনি আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷ কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা অন্যান্য ভাইরাসের মতো এটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে না, বলে আশ্বস্ত করেন ডা. মাহমুদুর রহমান৷ তিনি বলেন, সতর্কতাই এই ভাইরাস খেকে বাঁচার প্রধান উপায়৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী