1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সত্তরের সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা রাফিয়া আক্তার ডলি

২৮ মার্চ ২০১২

বিদ্যালয় চত্বর থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের শুরু নারী নেত্রী রাফিয়া আক্তার ডলির৷ সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত সাংসদ ছিলেন তিনি৷ ভারত পাড়ি দিয়ে প্রবাসী সরকারের নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডলি৷

https://p.dw.com/p/14TA2
ছবি: National Monument of Savar

‘‘আমি পিতা-মাতা এবং পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছিলাম৷ তারা আমাকে সীমান্ত পার করে ভারত পাঠিয়েছিল৷ এমনকি আমার আব্বা-আম্মা আমার ভাইদের বলে দিয়েছিল যে, তোমাদের বোনের কথা কেউ জানতে চাইলে বলবে, সে ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ছিল এবং সেখানে তাকে হত্যা করা হয়েছে৷ ফলে আমাদের গ্রামের মানুষ জানতো যে, আমি রোকেয়া হলে পাক সেনাদের হাতে নিহত হয়েছি৷'' এমনভাবেই দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে নানা কৌশলে নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের কাজে নিয়োজিত করেছিলেন বীর সাহসী নারী নেত্রী রাফিয়া আক্তার ডলি৷

১৯৪৮ সালে টাঙ্গাইলে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম রাফিয়া আক্তার ডলির৷ বাবা খন্দকার আব্দুর রউফ এবং মা আনোয়ারা বেগম৷ ডলির পিতা নিজেই নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতেন এবং সন্তানদের উৎসাহিত করতেন৷ তাই পারিবারিকভাবেই সমাজ সচেতনতার ছোঁয়া পান রাফিয়া আক্তার৷ এরপর তিনি যখন সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন তখনই শুরু হয় হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন৷ সেই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন কিশোরী ডলি৷ কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন৷ ১৯৬৫ সালে টাঙ্গাইল কুমুদিনী মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ১৯৬৭ সালে স্নাতক পাস করেন৷ এসময় কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সহ-সভাপতি তথা ভিপি হন ডলি৷

এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ এসময় রোকেয়া হলে ছাত্রলীগের অন্যতম নেত্রী হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন ডলি৷ ১৯৭০ সালে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন৷ তবে লেখাপড়ার পাশাপাশি সমান তালে চলতে থাকে তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড৷ ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং ঊনষত্তরের গণ অভ্যুত্থানসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে ছিলেন রাফিয়া আক্তার ডলি৷ ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের পাশে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে হাজির হন এই নারী নেত্রী৷ সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে তৎকালীন জাতীয় পরিষদের সদস্য হন৷

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি এবং দেশ স্বাধীন করার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন সেসব কথা জানাতে গিয়ে রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘‘এমএনএ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমাদের কাজ ছিল মুক্তিযুদ্ধের জন্য মানুষকে সুসংগঠিত করতে আমরা পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন স্কুলে-কলেজে বৈঠক করতাম৷ মানুষের মধ্যে বাঙালি জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচার জাগরণ সৃষ্টি কাজ করি৷''

১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ রাতে পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়৷ সেই রাতে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বাসায় বৈঠক করেন রাফিয়া৷ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরুর পরিস্থিতি এবং পরবর্তীতে তাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘‘রাতে সাজেদা চৌধুরীর বাসায় বৈঠক করি৷ সকালে বের হয়ে দেখি ঢাকা শহরে ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা করে লাশের স্তূপ গড়ে তুলেছে পাক সেনারা৷ সেই লাশের উপর দিয়ে আমরা বেরিয়ে ঢাকা শহর ছাড়ি৷ এরপর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য বহু পরিশ্রম করেছি৷ প্রতিদিন প্রায় ২৪-২৫ মাইল পায়ে হেঁটে ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের নেতৃবৃন্দের সাথে মিলিত হই৷ একজন সাংসদ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের কাজ করতে থাকি৷ কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এবং কলকাতা, বনগাঁ ও বারাসাতসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে ঘুরে ঘুরে মুক্তি সংগ্রামের জন্য জনমত ও অর্থ, কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করি৷ এছাড়া শরণার্থী শিবিরে থাকা মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাক তৈরির জন্য ‘সায়েরা বানু সেলাই কেন্দ্র' নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছিলাম কলকাতায়৷''

এছাড়া কলকাতার পার্ক সার্কাসে ‘খাইরুন্নেসা কল্যাণ সমিতি' নামে একটি সমিতি গঠন করেছিলেন রাফিয়া এবং তাঁর সঙ্গীরা৷ এ সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশি সাহায্য সংস্থা থেকে ত্রাণ সংগ্রহ ও শরণার্থী শিবিরসমূহে তা বিতরণ করা হতো৷ মুক্তিযুদ্ধে কাজে অংশগ্রহণের আগ্রহী নারীদের জন্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ‘গোবরা' শিবিরের প্রশিক্ষণ কাজে সহযোগিতা করেছেন ডলি৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য