1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিপদে জার্মান পোশাক জোট

৪ আগস্ট ২০১৭

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বেশি বাধ্যবাধকতা৷ গঠন হওয়ার তিন বছরের মাথায় একের পর এক সদস্য হারাচ্ছে ‘পার্টনারশিপ ফর সাস্টেইনেবল টেক্সটাইলস’৷ কিন্তু এখনও জোটের উচ্চাকাঙ্খী লক্ষ্যের সমর্থন করে যাচ্ছে জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রণালয়৷

https://p.dw.com/p/2hh7d
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld

নিহত ১,১৩৫ আহত ২,৪৩৮ – চার বছর আগে রানা প্লাজা ধসে এতটাই ভয়াবহ ছিল হতাহতের সংখ্যা৷ এই ঘটনাই জার্মানিতে পোশাক ব্যবসায়ীদের জোট ‘পার্টনারশিপ ফর সাস্টেইনেবল টেক্সটাইলস’ গঠনে মূল ভূমিকা রাখে৷ ২০০৪ সালে জার্মানির উন্নয়ন সাহায্য মন্ত্রী ড. গ্যার্ড ম্যুলারের (ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন-সিডিইএ) উদ্যোগেই এই জোট গঠিত হয়৷

ম্যুলার তখন বলেছিলেন, ‘‘যাঁদের মানবাধিকার পদদলিত হচ্ছে, তাঁদের তৈরি কাপড় আমরা পড়বো না৷’’ জোটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়েবসাইটে বলা আছে – উৎপাদন থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিশ্বের পোশাকশিল্পের উন্নয়ন৷

কিন্তু পার্টনারশিপ গঠন হওয়ার মাত্র তিন বছরের মাথায় মোহমুক্তি ঘটছে অনেক সদস্যের! শুরুতে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সামাজিক ও পরিবেশগত কিছু বাধ্যবাধকতা মানতে বাধ্য করার কথা ভাবছিল সরকার৷ কিন্তু এখন উলটো সরকারই মানতে বাধ্য হয়েছে যে, অনেক বড় প্রতিষ্ঠানই নির্দেশ মেনে পরিচালিত হতে চায় না৷

ফলশ্রুতিতে গঠিত হয় এই জোট৷ সেখানে নিজেদের নেয়া ব্যবস্থার একটি তালিকা নিয়মিত উপস্থাপনের কথাও বলা হয়৷ এর উদ্দেশ্য ছিল যেসব দেশে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য প্রস্তুত হচ্ছে, সেসব দেশের কর্মপরিবেশের উন্নতি করা৷

প্রত্যাহারে দুর্বল জোট

২০১৬ সালের শেষ দিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা কিছু জার্মান প্রতিষ্ঠান কিছু বিষয়ে একমত হয়৷ জোটের পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে নিজেদের নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নের রোডম্যাপ দিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ কিন্তু এই পরিকল্পনা অনুযায়ী না চলায় ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে বহিষ্কার করা হয় জোট থেকে৷

জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসাদের মধ্যে ইউরোপের সুপারমার্কেট চেইন রেয়াল এবং ঐতিহ্যবাহী জার্মান পোশাক প্রস্তুতকারক ট্রিগেমাও ছিল৷ ২০১৭ সালের শুরুতে জোটের সদস্য ছিলো ১৯৮ সদস্য, যার মধ্যে ছিলো অ্যাডিডাস ও গ্যারি ওয়েবারের মতো জায়ান্ট কোম্পানিও৷ এখন জোটের সদস্য সংখ্যা ১৪৮৷

‘‘এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা’’, বলছিলেন জোটের সদস্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনকোটার বার্নড্ট হিনৎসমান৷ ‘‘এই ধরনের জোটের মূল শক্তি বাজারে তার বিশাল ব্যাপ্তি৷ এর ফলে এই জোট ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া বা বাংলাদেশের সরবরাহকারীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারতো৷ যারা জোট থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে, তাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত যে, তাদের সদস্যপদ কি মুখের কথা ছাড়া আর কিছুই না!’’

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা

ট্রিগেমার মালিক ও প্রধান নির্বাহী ভোল্ফগাং গ্রুপ অবশ্য এমন অভিযোগ মানতে নারাজ৷ ‘‘আমাকে একটা রোডম্যাপের খসড়া করতে বলা হয়েছিল যেখানে আমাকে বলতে হবে আমি শিশুশ্রম ব্যবহার করছি না এবং আমি জার্মানির সামাজিক আইন মেনে চলছি৷ আমার প্রতিষ্ঠান শুধু জার্মানিতেই উৎপাদন করে, ফলে আমার কাছে এই ধরনের প্রস্তাব অযৌক্তিক মনে হয়েছিল৷ এ কারণে দুই মাস আগে আমি নিজের নাম প্রত্যাহার করি৷’’

ট্রিগেমার তুলা ও সুতা আসে তুরস্ক ও গ্রিস থেকে৷ কিন্তু সেখানকার উৎপাদকরা পারিবারিক ব্যবসা চালান এবং নিয়মিত পরিদর্শনও হয়ে থাকে বলে দাবি গ্রুপের৷ বড় বড় প্রতিষ্ঠান নিজেদের জোট থেকে সরিয়ে নেয়ায় কঠোর নিয়মের কারণে ছোট প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ তার৷

বিপদে ছোট প্রতিষ্ঠান

বর্তমানে জোটের সদস্যদের দখলে আছে জার্মান পোশাক বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশ৷ এই অবস্থায় যত বেশি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জোটে যোগ দেবে, সরবরাহকারী দেশগুলোর ওপর তত বেশি চাপ প্রয়োগ করা যাবে৷ কিন্তু প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ভয়ে অনেক ছোট প্রতিষ্ঠানই জোটে আসছে না৷

খেলনা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সভ্যারগেনগ্র্যুন বলছে তারা জোটে থাকতে চাইলেও জোটের সব নীতিমালা মেনে চলা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷ পোশাকশিল্পে আন্তর্জাতিক জায়ান্ট এইচ অ্যান্ড এম অবশ্য এখনও এই জোটের সদস্য৷

সরকার অবশ্য আশা করছে, জোট থেকে যারা চলে গেছে, তাদেরও পরবর্তী কোনো একটা সময়ে আবার ফিরিয়ে আনা যাবে৷

কার্লা ব্লাইকার/অডিকে