1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সবই খুলছে, কবে খুলবে ডাক্তারখানা?

শামীমা নাসরিন
৭ মে ২০২০

অর্থনীতি বাঁচাতে শিথিল হচ্ছে লকডাউন। সীমিত আকারে প্রায় সব কিছুই খুলে দেওয়া হচ্ছে। জীবন বাঁচাতে ডাক্তারখানা খোলাও তো জরুরি।

https://p.dw.com/p/3btkL
ফাইল ফটোছবি: bdnews24

শিথিল হচ্ছে লকডাউন। খুলেছে গার্মেন্টস, সরকারি-বেসরকারি অফিসে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মসজিদে জামাতের অনুমতি মিলেছে। ঈদ সামনে রেখে খুলবে মার্কেট, গণপরিবহন চালুর পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। ডাক্তারখানাগুলো খুলবে কবে?

চিকিৎসা সেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর একটি। বৈশ্বিক মহামারীর এ চরম সংকটময় সময়ে তা আরো বেশি জরুরি হয়ে উঠে। কিন্তু করোনা ভাইরাস মারাত্মক সংক্রামক হওয়ায় চিকিৎসা পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হয়েছে। 

পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) অভাবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ভয়াবহ আতঙ্কে আছেন। রোগীদের সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে চলা সম্ভব হবে না বলে অনেক চিকিৎসক চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি করাতে চাইছে না। ফলে সাধারণ রোগীরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন। যাদের নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হয় তারাও পড়েছেন বিপাকে

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক টেলিফোনে ডয়চে ফেলেকে বলেন, "আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছেন। ওনাকে সপ্তাহে দুইদিন ডায়ালাইসিস করাতে হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন একদিন করাতে পারছি। ডায়ালাইসিসের খরচও বেড়ে গেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমার বেতনও হচ্ছে না।

"বাবা বিআরটিএ-র উপপরিচালক হিসেবে অবসরে গেছেন। ওনাকে নিয়মিত যে চিকিৎসক দেখতেন তিনি এখন চেম্বার বন্ধ রেখেছেন। ফোনেও ওনাকে পাচ্ছি না। বাবা মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। নিরুপায় হয়ে চিকিৎসক বন্ধুদের পরামর্শ নিচ্ছি। মাঝে একদিন বাবা খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মনে হচ্ছিলো ওনার চোখে রক্ত উঠে গেছে। অনেকবার ফোন করেও নিয়মিত ডাক্তারকে পাইনি। কবে এ ‍অবস্থার অবসান হবে কে জানে। খুব অসহায় লাগছে।”

একই ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল রাজধানীর গ্রিনরোডের বাসিন্দা সোহানা ইয়াসমিনকে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সাধারণ ছুটিতে অফিস বন্ধ থাকায় ঘরেই আছেন। স্বামীয়ও হোমঅফিস করছেন। গত ১৭ এপ্রিল সোহানার তলপেটে মারাত্মক ব্যাথা, সেইসঙ্গে গায়ে হাল্কা জ্বর। কাছেই একটি নামকরা হাসপাতালের গাইনি বিভাগে চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসক সাফ জানিয়ে দিলেন কোভিড-১৯ টেস্ট ছাড়া রোগী দেখবেন না।

টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "অসুস্থ শরীরে কিভাবে টেস্টের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকব এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে একদিন পার। পরদিন মাঝরাতে ব্যাথা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আমাকে প্রথমে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে গাইনি ডাক্তারকে কল করা হলে আবারও তিনি সেই একই কথা বলেন।

"পাশের আরেকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে তারাও টেস্ট ছাড়া ভর্তি করবে না বলে জানিয়ে দেয়। আমার তখন মুমূর্ষু অবস্থা। পরে মহাখালীর ইউনিভার্সেল হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে তারা সেখানে ভর্তি করাতে রাজি হয়। রাত ৩টার দিকে সেখানে ভর্তি হই, পরদিন সকাল ১০টায় আমার অস্ত্রোপচার হয়। আমার বার্থলিন গ্ল্যান্ডে সিস্ট ছিল যেটা ইনফেকশনের কারণে ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ইনফেকশনের কারণেই জ্বর এসেছিল। ডাক্তারদের বারবার বলেছি আমি প্রায় ২০ দিন ধরে বাসার বাইরে যাইনি। আমার সর্দি-কাশিও নেই। তারপরও তারা বুঝতে চাননি।”

গত দুই মাসে বাংলাদেশে এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে অনেকেই প্রিয়জনকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটোছুটি এবং শেষপর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় স্বজনের মৃত্যুর ভয়াবহ ঘটনা প্রকাশ করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। সড়কে, যানবাহনে, হাসাপাতালের ট্রলিতে সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটছে।

চিকিৎসা পাবেন না আতঙ্কে অনেকে কোভিড-১৯ পজেটিভ হওয়ার তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। একসঙ্গে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন অনেক স্বাস্থ্যকর্মী। বন্ধ করে দিতে হচ্ছে পুরো ওয়ার্ড।

DW-Mitarbeiterin Shamima Nasrin
শামীমা নাসরিন, ডয়চে ভেলেছবি: privat

পুরান ঢাকার লালবাগের শীলা সাহা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাঁকে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হয়। ওনার মেয়ে ঝুমুর ‍সাহা টেলিফোনে বলেন, "২১ দিন পরপর মায়ের রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়।আগে ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতাম। এখন তো সেটা সম্ভব না। লকডাউনের পর দুইবার টেস্ট করাতে হয়েছে। দুইবারই লোক বাড়িতে ডেকে রক্ত নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাও টেলিফোনে চলছে। নিয়মিত ডাক্তার মাকে বাইরে বের করতে একদম নিষেধ করেছেন।”

সংক্রামক রোগ বিস্তারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের বলা হয় ‘সুপার স্প্রেডার'। কিন্তু সংক্রমণ ছড়াতে পারে আশঙ্কায় যদি দিনের পর দিন ডাক্তাররা চিকিৎসা বন্ধ রাখেন তবে দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগতে থাকা মানুষ কোথায় যাবে চিকিৎসা নিতে। বিনা চিকিৎসায় তাদের মৃত্যু বা মৃত্যুর যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে তার দায়ভারই বা কার।