1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সবার জন্য নয় ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

২৫ আগস্ট ২০১৯

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘মেডিকেল টুরিজম'র বাজার ভারতে৷ কিন্তু বাস্তবে কতটুকু ব্যাপ্ত ভারতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা?

https://p.dw.com/p/3OS1p
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে চিকিৎসা পর্যটন থেকেই ভারতের আয় হবে নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ বর্তমানে, সেই অঙ্ক ছয় বিলিয়নের কাছাকাছি হওয়ায় বিশ্বের মেডিকেল টুরিজমের ১৮ শতাংশের দখল রয়েছে ভারতের হাতে৷ এই বিরাট অঙ্কের আয়ের পেছনে রয়েছে ভারতে স্বল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা, ভিসাপ্রদানে তৎপরতা ও ইংরেজি ভাষার ব্যাপক ব্যবহারের মতো একাধিক কারণ৷

গত পাঁচ বছরে ভারতে চিকিৎসার কারণে আসা মানুষ বা ‘মেডিকেল টুরিস্ট'র সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷ তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ ভারতে চিকিৎসা করাতে আসেন৷ কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়াও, সেই তালিকায় রয়েছেন আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, দক্ষিণ কোরিয়া ও নাইজেরিয়ার মতো দেশের নাগরিক৷ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া অভিবাসন দপ্তরের তথ্য জানাচ্ছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকেই ভারতে চিকিৎসাসংক্রান্ত ভিসায় আসেন এক লাখ ২০ হাজার ৩৮৮জন বাংলাদেশি৷ এই সংখ্যাই ২০১৭ সালে বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ২১ হাজার ৭৫১৷ ২০১৫-২০১৮ সালে ভারতে আসা বাংলাদেশি মেডিকেল টুরিস্টের সংখ্যা বেড়েছে ৮৩ শতাংশ৷

কিন্তু দেশের মাটিতে একই চিকিৎসা কি একই তৎপরতার সাথে ভারতীয় নাগরিকদের কাছে পৌঁছায়?

‘মোদীকেয়ার' এলেও ব্রাত্য সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন ‘ন্যাশনাল হেলথ প্রোটেকশান মিশন' বা ‘মোদীকেয়ার'র৷ অনেকটা অ্যামেরিকার ‘ওবামাকেয়ার'র আদলের এই পরিষেবা কথা দিয়েছিল দেশের ৫০ কোটি জনতার কাছে স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যবীমা পৌঁছে দেবার৷ কিন্তু অর্থায়নের অভাবে আজও বাস্তবায়ন হয়নি এই প্রকল্পের৷

অন্যদিকে, বিশ্বব্যাঙ্কের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা রয়েছে খোদ ভারতে৷ শুধু তাই নয়, বীমার সুযোগ পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকায়, ভারতে মোট ৬৫ শতাংশ নাগরিকই নিজের পকেট থেকেই চিকিৎসাসংক্রান্ত খরচ বহন করেন৷ ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের আরেকটি প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সালে ভারতের জিডিপি'র (গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট) মাত্র ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ ব্যয় করা হয় স্বাস্থ্যখাতে৷ এর ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ খরচ হয় বেসরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার পেছনে৷ সরকারি পরিষেবার জন্য বরাদ্দ মাত্র এক শতাংশ৷

ভারতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূলে রয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে নাগরিকের বাস্তবিক দূরত্বের প্রশ্ন৷ যে দেশের মোট ৬৬ শতাংশ নাগরিক গ্রামাঞ্চলে বাস করে, যে দেশের প্রায় ৪০ শতংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে অবস্থান করে, সেই দেশে সরকারির চেয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার পেছেন বেশি খরচ কতটা যৌক্তিক, সেই প্রশ্ন রয়েই যায়৷

পাশাপাশি, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার মান উন্নত হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট খরচের পরিমাণ সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের সামর্থ্যের অনেকটাই বাইরে রয়ে যায়৷ ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিদেশ থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে বিপুল অর্থ লাভ করে বিশ্বের অন্যতম সফল মেডিকাল টুরিজমের স্থান হতে পেরেছে৷ এবিষয়ে অনেক গবেষণা থাকলেও অধরা রয়ে যাচ্ছে বিদেশি রোগীদের আর্থসামাজিক পরিচয়ের ভিত্তিতে ভারতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার কার্যকরিতার বিষয়টি৷

রোগীর আর্থসামাজিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে কোনো রোগী যখন ভারতে উন্নত মানের চিকিৎসা পাবেন, তা তিনি যে কোনো দেশের নাগরিকই হন না কেন, তখনই সম্পন্ন হবে ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবার গণতান্ত্রিকীকরণ৷

এসএস/কেএম