1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সব ধরনের কাজ থেকে বিরত ড. বিজন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩১ আগস্ট ২০২০

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান বিজ্ঞানী এবং করোনা শনাক্ত ‌কিটের আবিস্কারক ড. বিজন কুমার শীল প্রতিষ্ঠানটির সব ধরনের কাজ থেকে বিরত আছে৷ নাগরিকত্ব এবং ভিসা জটিলতায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3hoKt
ছবি: privat

ড. বিজন জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক হলেও তিনি আগেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়ে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন৷ এতদিন বাংলাদেশে তার কাজ করতে অসুবিধা না হলেও জুলাইয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগ বলে দিয়েছে, বিদেশি নাগরিক হিসেবে কাজের অনুমতি না নিয়ে তিনি কাজ করতে পারবেন না৷ 

ড. বিজন গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে টুরিস্ট ভিসায় আসেন৷ সেই ভিসার মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হলেও বলে দেয়া হয়েছে যে, এখানে কাজ করতে হলে অনুমোদন লাগবে৷ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এরইমধ্যে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপটমেন্ট অথরিটির (বিআইডিএ) কাছে তার কাজের অনুমোদন চেয়েছে৷ বিআইডিএ জানিয়েছেন, ‘‘অনুমোদনের বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে তা জানানো সম্ভব নয়৷ এটি একজন ব্যক্তির গোপন তথ্য৷’’

ড. বিজন ডয়চে ভেলেকে জানান, তিনি বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে গিয়ে ২০০২ সালে সেখানকার সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন৷ ওই দেশের নিয়ম অনুযায়ী সেখানকার সিভিল সার্ভিসে চাকরি করতে হলে সে দেশের নাগরিক হতে হয়৷ আর সিংগাপুরে দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান নেই৷ ফলে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হয়৷ 

কাগজপত্র ঠিক থাকলে এক-দুই দিনের মধ্যেই আমরা অনুমোদন দিই: আরিফুল হক

তিনি গত জানুয়ারি মাসে যখন বাংলাদেশে আসেন তখন টুরিস্ট ভিসায় আসেন৷ এক বছরের এই ভিসা তার আগেই নেয়া ছিলো৷ যার মেয়াদ জুলাই মাসে শেষ হলে তিনি আরও এক বছরের টুরিস্ট ভিসা পান৷ কিন্তু এবার শর্ত দেয়া হয়েছে যে বাংলাদেশে কোনো প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করতে পারবেন না৷ ড. বিজন জানান, ‘‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আমার জন্য বিদেশি হিসেবে কাজ করার অনুমতির আবেদন আগেই করা হয়েছে৷ কিন্তু সেই অনুমতি এখনো না দেয়ায় আমি এখনো টুরিস্ট ভিসায়ই আছি৷’’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী জানান, ‘‘আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তার ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করেছি৷ সে বাংলাদেশের একজন কৃতি বিজ্ঞানী৷ তাকে আমরা সারাজীবন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রাখতে চাই৷ কিছু লোক নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে৷ আমার ধারণা এটা ঠিক হয়ে যাবে৷’’

ড. বিজন বলেন, ‘‘আমি জুলাই থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সব ধরনের কাজ থেকে বিরত আছি৷ যেহেতু টুরিস্ট ভিসার শর্ত হলো আমি এখানে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারের ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করতে পারবনা৷ তাই কাজ করছিনা৷’’

বিদেশি পাসপোর্টধারীদের বাংলাদেশে কাজের অনুমতি দেয়ার জন্য কাজ করে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিআইডিএ)৷ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আরিফুল হক জানান, ‘‘আবেদনটি আমাদের এখানে বিবেচনাধীন আছে৷ কিন্তু বিষয়টি ব্যক্তিগত, তাই কোনো তথ্য দেয়া যাবেনা৷’’

প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজারেরও বেশি বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কাজের অনুমতি চেয়ে বিআইডিএ-তে আবেদন করে৷ সাধারণত নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষই এই আবেদন করে থাকে৷ ১০ ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয় আবেদনের সঙ্গে৷ আরিফুল হক জানান, ‘‘কাগজপত্র ঠিক থাকলে এক-দুই দিনের মধ্যেই আমরা অনুমোদন দিই৷’’ কিন্তু ড. বিজন কুমার শীলের পক্ষে আবেদন করা হয়েছে গত মার্চ মাসে৷ এখনো অনুমোদন মেলেনি৷ তিনি বলেন, আইন সবার জন্য সমান৷ তার কাগজপত্র ঠিক থাকলে অনুমতি পেয়ে যাবেন৷

আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে দেশে এসেছি: ড. বিজন 

ড. বিজন কুমার শীলের জন্ম ১৯৬১ সালে নাটোরে৷ তিনি বনপাড়া সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে এসএসসি ও পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন৷ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভেটেরেনারি মেডিসিনে মাস্টার্স করা বিজন কুমার ডক্টরেট করেছেন ইংল্যান্ডের সারে ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৯১ সালে৷ ওখানে তিনি ১০ বছর কাজ করেন৷ ২০০২ সাল থেকে তিনি সিংগাপুরের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এনভায়রোনমেন্ট এজেন্সিতে কাজ শুরু করেন৷ সার্স ভাইরাস পরীক্ষার কিটের প্যাটেন্ট ড. বিজন কুমারের নিজের৷ তিনি সিংগাপুরের ন্যাশনাল এনভায়োরোমেন্ট এজেন্সিতে চাকরিরত অবস্থায় ২০০৩ সালে এই কিট আবিস্কার করেন৷

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি ভাইরোলজি বিভাগে চেয়ারপার্সন হিসেবে যোগ দেন তিনি৷ একই সঙ্গে তিনি গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালের প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবেও যোগ দেন৷

ড. বিজন বলেন, ‘‘আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে দেশে এসেছি৷ তারাই বিবেচনা করবে আমি কিছু করেছি কিনা৷ আমাকে কাজের অনুমতি না দিলে আমি সিঙ্গাপুরে ফিরে যাব৷’’

তিনি এখন সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব ছেড়ে ফের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘‘সে সিদ্ধান্ত আমি এখনো নেইনি৷ এখনো সেটা ভাবার সময় আসেনি৷’’

তিনি এখন তার আগের গবেষণার বিষয় নিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে লেখালেখি করছেন৷ আর নিজে থেকে নতুন একটি গবেষণায় হাত দিয়েছেন বলে জানান৷