1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সময় এসেছে ধর্ম এবং পুরুষতান্ত্রিকতা নিয়ে কথা বলার'

২৩ অক্টোবর ২০১৯

ধর্মীয় উগ্রতা আর পুরুষতান্ত্রিকতা এশিয়ার উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করেন বাংলাদেশের নারী অধিকার কর্মী খুশি কবির৷ তাঁর মতে, এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য মানুষকে অন্ধভাবে সব মেনে নেয়ার বদলে প্রশ্ন করতে হবে৷

https://p.dw.com/p/3RltJ
Bangladesch Khushi Kabir, Frauenrechtlerin und Aktivistin
ছবি: DW/R. Ebbighausen

বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে নারীপক্ষ৷ ঢাকায় সংগঠনটির কার্যালয়ে নেই কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা৷ তার বদলে তাদের সবগুলো জানালাই খোলা৷ বাহিরের গাড়ির শব্দ কিংবা ভিতরে ফ্যানের আওয়াজ নারীপক্ষের কর্মীদের কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না৷ ডয়চে ভেলেকে খুশি কবির বলেন, পরিবেশবান্ধব হওয়ার ইচ্ছা থেকেই তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করেন না৷

খুশি কবির এবং তাঁর সংগঠনের কর্মীরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের নারীদের অধিকার আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের মতামতকে তারা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন৷ খুশি কবির বর্তমানে কাজ করছেন ভূমি অধিকার ইস্যু নিয়ে৷

তাঁর মতে, পরস্পর সম্পর্কিত দুটি বিষয় বাংলাদেশ ও এশিয়ার দেশগুলোর নারীদের উন্নয়নের পথে বড় বাধা হিসেবে কাজ করে৷ প্রথমটি পুরুষতান্ত্রিকতা আর দ্বিতীয়টি মূলত পুরুষতন্ত্র দ্বারাই গঠিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা৷

পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাব

খুশি কবিরের মতে, পুরুষতান্ত্রিকতা হলো এমন একটি মতবাদ, যার মাধ্যমে পুরুষরা প্রতিটি পর্যায়ে সুবিধাভোগ করে৷ কিন্তু সমাজে এর ব্যাপক প্রভাব সেভাবে উপলব্ধি করা যায় না৷ কেননা জীবন যাপনের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের ধারণা নেই৷ পরুষতান্ত্রিকতা তাদের কাছে প্রকৃতিগত একটি ব্যাপার, যা আসলে সত্য নয়৷

তাঁর মতে, ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে পুরুষতান্ত্রিকতা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে৷ ‘‘পুরুষের মতো নারীরাও এটি (পুরুষতান্ত্রিকতা) আঁকড়ে থাকে৷ সে মনে করে এভাবেই সমাজ গঠন হয়েছে, চলে আসছে এবং এর কোনো বিকল্প নেই৷''

পুরুষতান্ত্রিকতা সমাজের এতটা গভীরে শেকড় গাড়ার জন্য তিনি ধর্মকেও দায়ি করেন৷ ‘‘সব ধর্মই আচরণগত দিক থেকে পুরুষতান্ত্রিক- গঠনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে চর্চা যেদিক থেকেই বলা হোক না কেন৷'' তাঁর মতে, ধর্মগ্রন্থকে যেভাবে আক্ষরিকভাবে ব্যবহার করা হয় তাতে সমন্বয় করার জায়গা থাকে না৷ এ কারণে নারীর প্রতি বৈষম্যের ধারণাটিও শত শত বছর ধরে টিকে আছে৷ যেভাবে ধর্মগ্রন্থে লেখা হয়েছে এবং যে আচরণ হয়ে আসছে সেটিকে প্রশ্ন করার সুযোগ নেই৷

খুশি কবির মনে করেন, তাঁর এই ধারণার সবচেয়ে বেশি মিল ইসলামের ওয়াহাবিজম ধারা বা মতবাদের সঙ্গে৷ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যে সুন্নি ইসলামের চর্চা করত সেখানে সুফিবাদের ব্যাপক প্রভাব ছিল৷ ঐতিহাসিকভাবে সুফিবাদের সঙ্গে ওয়াহাবিজমের মতদ্বন্দ রয়েছে৷ ওয়াহাবিজম পৃথিবীর এই অংশের মানুষের কাছে ছিল সম্পূর্ণ নতুন এক বিষয়৷

কিন্তু সৌদি আরবের পেট্রোডলারের প্রভাবে ওয়াহাবিজম দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে৷ ‘‘যেসব শ্রমিক সৌদি আরবে যান তারা শুধু টাকাই পাঠান না, সাথে হিজাব আর বোরকাও পাঠান৷ এতে একটি মানসিক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে৷'' খুশি কবির বলেন, ১৫ বছর আগে যেখানে হাতে গোনা কয়েকজনকে বোরকা পরতে দেখা যেতো এখন সেখানে বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে এটি খুব স্বাভাবিক একটি দৃশ্যে পরিণত হয়েছে৷''      

নিরাপত্তাবোধ থেকে অনেক নারী হিজাব পরলেও এই পোশাকও তাদের নিপীড়ন, এমনকি ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচাতে পারছে না৷ বিষয়টি উল্লেখ করে খুশি কবির বলেন, নারী তার শরীরের কারণে যৌন নিপীড়নের শিকার হয় এটি ভুল ধারণা৷ সমস্যা মূলত সেই মানসিকতায়, যেখানে নারীকে যৌন বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেখানে সে কী পোশাক পরল কিংবা তার বয়স কত সেসব কোনো বিষয় না৷

তিনি পুরুষদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘যদি আমি আপনাদের মতো হতাম আমি নিজেই লজ্জা বোধ করতাম, কেননা, হিজাব আসলে সেই সাক্ষ্যটাই দেয় যে পুরুষ মানুষ না, তারা তাদের লালসা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না৷ কাজেই এটা আমার কাছে অপমানের মনে হতো৷''

নারীদের অধিকার নিয়ে নারীপক্ষের বিভিন্ন দাবি যখন সরকার অতি আধুনিক অ্যাখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে খুশি কবির তাতে খুবই মর্মাহত হন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন সমতা ও উত্তরাধিকার নিয়ে কথা বলতে শুরু করি তখন একে কট্টর চিন্তা হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়া হয়৷ আবার যখন আমরা বলি যে, ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম করা যাবে না, কারণ, এটা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, তখনও আমাদের ভীষণ কট্টর বলা হয়৷'' অন্যদিকে যখন ইসলামের প্রচারকরা নারীদের নিয়ে বৈষম্যমূলক কথা বলে তখন সরকার তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয় না৷

এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সবাইকে কণ্ঠস্বর জাগ্রত করতে হবে বলে মনে করেন খুশি কবির৷ তিনি বলেন, বেশিরভাগ মানুষ ধর্ম নিয়ে কথা বলতে ভয় পায়, কেননা, এজন্য যে কেউ নির্যাতন বা হত্যার শিকারও হতে পারেন৷ কিন্তু অগ্রগতি আর উন্নয়নের পথে বাধাগুলো দূর করতে হলে ধর্ম আর পুরুষতান্ত্রিকতা নিয়ে কথা বলার কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি৷ ‘‘আমরা যারা পরিবর্তনের কাজ করতে চাই তাদেরকে অবশ্যই নিজেদের ভেতরে পুষে রাখা এই বাধা ডিঙ্গাতে হবে এবং মুক্ত হওয়া শিখতে হবে৷'' 

রোডিয়ন এবেগহাউসেন/এফএস

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য