1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাগরের শ্যাওলা থেকে তেল

২ এপ্রিল ২০১৮

আয়ারল্যান্ডে একটি ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পে সাগরের পানির নীচে সি-উইড বা অ্যালজির চাষ করা হচ্ছে৷ এমনকি গবেষকরা ঐ সামুদ্রিক শ্যাওলা থেকে যে তেল বার করেছেন, তা বায়োফুয়েল তৈরিতে কাজে লাগানো যায়৷

https://p.dw.com/p/2vMjJ
ছবি: picture alliance/Photoshot

উত্তর-পশ্চিম আয়ারল্যান্ডের উপকূলে একটি সুন্দর, রোদে ঝলমলে দিন৷ স্থানীয় মেরিন রিসার্চাররা বোটে করে তাঁদের সি-উইড ফার্ম বা সমুদ্রশৈবালের খামার দেখতে বেরিয়েছেন৷

মেরিন বায়োলজিস্ট ফ্রেডি ও'মাহোনি বললেন, ‘‘স্পষ্ট দেখতে পাবেন – জলের নীচে সি-উইডের বেশ ভালো ফসল গজিয়েছে৷ কিছু কিছু গাছ দুই থেকে তিন মিটার লম্বা, কাজেই ফসল তোলার সময় এসে পড়েছে৷''

সমুদ্রশৈবালের চাষ আয়ারল্যান্ডে একটা উঠতি ব্যবসা৷ হেল্থকেয়ার বা স্বাস্থ্য পরিষেবা ও স্বাস্থ্যকর খাবার-দাবার, এই দু'টি বিভাগে সি-উইডের চাহিদা বেড়ে চলেছে৷ একটি নবধারার ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পে সি-উইড ও অ্যালজি গোত্রীয় সামুদ্রিক শ্যাওলা থেকে বায়োফুয়েল বা জৈব জ্বালানি তৈরি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে৷

শ্যাওলা চাষের সুবিধা

প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর জুলি ম্যাগওয়ার জানালেন, ‘‘সি-উইডের চাষ করতে কোনো সার লাগে না, চাষের জমি লাগে না৷ কিন্তু মাটিতে যে সব ফসলের চাষ হয়, সেখানে জমি নিয়ে টানাটানি৷ এছাড়া সি-উইড খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে, ছ'মাসেই পুরো গজিয়ে যায়৷''

কিছু ধরণের অ্যালজি অর্থাৎ সামুদ্রিক শ্যাওলায় শর্করা আছে, যা বায়োএথানল তৈরিতে ব্যবহার করা যায়৷ অপর কিছু অ্যালজিতে তেল আছে, যা বায়োডিজেলে পরিণত করা যায়৷

গবেষকরা এ ধরনের জ্বালানিকে ব্যবসায়িক দিক থেকে ব্যবহারযোগ্য করতে সচেষ্ট – তাঁরা প্রধানত অ্যালজির বাড় ও অ্যালজিতে তেলের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন৷ জুলি ম্যাগওয়ার বললেন, ‘‘গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, এই শ্যাওলায় মাটিতে চাষ করা ফসলের চেয়ে ৭ থেকে ৩১ গুণ বেশি তেল থাকবে৷ এখনও অনেক কাজ বাকি, তা ঠিক, কিন্তু মনে রাখবেন যে, দশ বছর আগে মোটরগাড়িতে সি-উইড জাত তেল ভরার কথা বললে লোকে হেসে উড়িয়ে দিত৷''

সি-উইড আর মাইক্রো-অ্যালজির কোষে যে তেল ধরা রয়েছে, সেটাকে বার করাই হল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ ল্যাবরেটরিতে গুঁড়ো অ্যালজি প্রচুর পরিমাণ সলভেন্টে গুলে তেলের নিষ্কাশন বাড়ানো সম্ভব, কিন্তু কারখানায় বড় মাপে তা করতে গেলে তা খরচে কুলাবে না৷

মাইক্রোঅ্যালজি গবেষক ফিওনা মোজেস-এর মতে, ‘‘অ্যালজির চাষ করাটা শক্ত নয় – ম্যাক্রোঅ্যালজি বা মাইক্রোঅ্যালজি, দু'টোই চাষ করা সহজ৷ শক্ত কাজ হল অ্যালজি থেকে তেল বার করা৷ সবচেয়ে কম উপাদান প্রয়োগ করে সবচেয়ে সস্তায় সেটা করার পদ্ধতি আমাদের খুঁজে বার করতে হবে৷''

বায়োফুয়েল শিল্পে বিপ্লব?

সমুদ্রশৈবাল থেকে তৈরি সস্তার তেল উঠতি বায়োফুয়েল শিল্পে বিপ্লব আনতে পারে৷ আয়ারল্যান্ডের এই কারখানাটিতে পুরনো রান্নার তেল, জন্তুজানোয়ারের চর্বি ও অন্যান্য নানা ধরনের চর্বি থেকে প্রতিবছর ৩০,০০০ টন বায়োফুয়েল তৈরি করা হয়৷ সেই বায়োফুয়েলে খনিজ ডিজেল মিশিয়ে তাকে আরো পরিবেশবান্ধব করে তোলা হয়৷ গবেষকরা কারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উপর সেই অ্যালজি জাত তেলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেন – কেননা বায়োফুয়েল উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতামূলক দামে কোনো নতুন পণ্য পেলে তাদের উৎপাদন বাড়াতে পারবেন৷

গ্রিন বায়োফুয়েলস আয়ারল্যান্ড প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি ম্যানেজার জো জিউয়িসন বললেন, ‘‘আমাদের শিল্প এই নতুন তেল সম্পর্কে আগ্রহী, কেননা আমরা এই পদ্ধতিতে যে কোনো ধরনের তেলকে বায়োডিজেলে পরিণত করতে পারি৷ আর তা যত পরিবেশবান্ধব হবে, ততই আমাদের পক্ষে ভালো৷''

পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো, পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড পেলে অ্যালজি প্রায় যে কোনো জায়গায় গজাতে পারে৷ সমুদ্রশৈবাল কার্বন ডাইঅক্সাউড শুষে নিয়ে বাতাস পরিষ্কার করে ও মাছের চাষ থেকে পানিতে যে বাড়তি পুষ্টিকারক পদার্থ থেকে যায়, তা সরাতে সাহায্য করে৷

মেরিন বায়োলজিস্ট ফ্রেডি ও'মাহোনির বক্তব্য হলো, ‘‘পরিবেশের উপর সি-উইড খামারের যে প্রভাব পড়ে, তার সবটাই কল্যাণকর ও ইতিবাচক – খারাপ বলে কিছু নেই৷ সি-উইডের চাষ থেকে যে সাগরের পানি পুরোপুরি পরিশুদ্ধ হবে, এমন কথা আমি বলছি না৷ তবে সি-উইড পানিতে বাড়তি নিউট্রিয়েন্ট পুঁছে তোলার ন্যাতা হিসেবে কাজ করবে বলে আমার আশা৷''