1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড: সাংবাদিকরা লজ্জিত!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সাত বছরেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই৷সাংবাদিক সংগঠনগুলো কী করেছে? কী করছেন সংগঠনগুলোর নেতারা?

https://p.dw.com/p/3D8Je
DW Redakteur Sagar Sarowar Dhaka
ছবি: DW

সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পূর্তির দিনটিতেও সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন বিচারের দাবিতে৷ তদন্ত শেষ করে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারক লিপিও দিয়েছেন তাঁরা৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন সেই পুরনো আশ্বাসই– অপরাধী দ্রুত ধরা পড়বে, বিচারের আওতায় আসবে৷

এদিকে তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব শুধু আদালতে একটি তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে সাত বছরে ৬২ বার সময় নিয়েও এখনো প্রতিবেদনটি দিতে পারেনি৷ এজন্য অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিব্রত৷সেরকমই বলেছেন তিনি৷

কিন্তু তদন্ত সংস্থা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় এবং সরকার কী করছে তা তো আমরা কম-বেশি জানি৷ কিন্তু সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে কী করা হয়েছে? বিচার আদায়ের জন্য তাদের ভূমিকা কতটা জোরালো? 

‘‘তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত করার কথা বললেও সাত বছরেও তা হলো না’

দৈনিক সংবাদ-এর সিনিয়র ফটো সাংবাদিক সোহরাব আলম৷ ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়েই ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজরের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন তিনি৷হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এবং ওই সময়ে পুলিশের তৎপরতা সবই তিনি দেখেছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তখন ওই বাসায় গিয়ে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত এবং আইনের আওতায় আনার কথা বলেছিলেন৷ কিন্তু সাত বছরেও তা হলো না৷''

তিনি বলেন, ‘‘ওই সময় সেখানে উপস্থিত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাও আমাদের বলেছিলেন– আমরা ক্লু ধরে তদন্ত এগিয়ে নিই, এখানে এত ক্লু যে আমরা দ্রুতই অপরাধীদের শনাক্ত করে ধরে ফেলব৷''

ইত্তেফাকের সিনিয়র প্রতিবেদক জামিউল আহসান সিপুও সেই সকালে সেখানে গিয়েছিলেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাহারা খাতুন ওই বাসায়ই সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছিলেন৷ তখন তাঁর কথায় আমাদের মনে হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের চিহ্নিত ও আটকের ব্যাপারে তিনি কনফিডেন্ট৷''

তারপর এত বছরেও কেন হলো না? জামিউল বলেন, ‘‘ওই সময়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে, পারিবারিক কোনো কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মনে করেছিল৷ এছাড়া তারা মনে করেছিল, মেবাইল ফোনের কললিস্ট ধরে অপরাধী শনাক্ত করা যাবে৷ কিন্তু বিষয়টি সেরকম নয় বলে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়৷ আর তদন্তের নামেও সাত বছর কেটে যায়৷'' 

‘ব্যর্থতা বা অনীহা না বলে হতাশার জায়গা থেকে সাংবাদিকরা পিছিয়ে গেছে বলে আমি মনে করি’

হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশের মানুষ যেমন প্রতিবাদ জানায়, সাংবাদিকরাও মাঠে নামেন অরাধীদের আটক ও বিচারের দাবিতে৷ তখন রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো এই ইস্যুতে এক হয়ে কর্মসূচি দিতে শুরু করে৷ সাংবাদিকদের দলীয় পরিচয় দূরে রেখে এক হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা দেয়৷ কিন্তু বেশি দিন এই ঐক্য থাকেনি৷ তাই মানববন্ধন বা প্রতীকী অনশনের বাইরে আর কোনো জোরালো কর্মসূচি হয়নি৷ সংবাদমাধ্যমগুলো একদিনের জন্য বন্ধ রাখার দাবি উঠলেও সাংবাদিক সংগঠনগুলো সেই কর্মসূচি দেয়নি৷ আর এখন হত্যাকাণ্ডের দিনটিতে বছরে একবার প্রেসক্লাবের সামনে  সাংবাদিকদের কালোব্যাজ পরে কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে বিচার চাওয়া একটি সাধারণ কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে৷

সোহরাব আলম বলেন, ‘‘আসলে শুরু থেকেই আন্তরিকতা ছিল না৷ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে লোকদেখানো প্রতিবাদ ছিল৷ আর এজন্য এখন আর আমি নিজেও কোনো কর্মসূচি দিলে সেখানে যাই না৷ শুরুতে সব কর্মসূচিতে আমি অংশ নিতাম৷ আমি হতাশ হয়েছি৷ কারণ, যতটা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা যেতো, তা করা হয়নি৷''

জামিউল আহসান সিপু বলেন, ‘‘হত্যাকাণ্ডের পর ১৫-২০দিন সাংবাদিকরা জোরালো আন্দোলন করলেও এরপর ম্রীয়মান হয়ে যায়৷ সাংবাদিকদের একটা প্রচেষ্টা ছিল তীব্র আন্দোলন করা যায় কিনা, পত্রিকার প্রথম পাতার এক কলামের কিছু অংশ ফাঁকা রাখা যায় কিনা, অথবা সব ধরনের সংবাদমাধ্যমে এক দিন ধর্মঘট পালন করে প্রকাশনা ও সম্প্রচার বন্ধ রাখা যায় কিনা, কিন্তু এই মাত্রার প্রতিবাদ শেষ পর্যন্ত হয়নি৷ কর্মসূচিভিত্তিক কিছু প্রতিবাদ হয়েছে৷''

‘যেভাবে আন্দোলন করা দরকার ছিল, আমরা তা পারিন, সাগর-রুনির সন্তানের কাছে লজ্জিত’

তিনি বলেন, ‘‘এটাকে আমি ব্যর্থতা বা অনীহা না বলে হতাশার জায়গা থেকে সাংবাদিকরা পিছিয়ে গেছে বলে আমি মনে করি৷''

সাগর-রুনি হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে সাংবাদিদের শুরুর দিকের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন সাংবাদিক আবু জাফর সূর্য৷ তিনি এখন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করি৷ আমরা তো অন্য শ্রেণি-পেশার মতো রাস্তা অবরোধ করতে পারি না৷ আমরা সাগর-রুনির সন্তানের কাছে লজ্জিত৷ তাদের কাছে আমাদের দায় রয়ে গেছে৷ বিচারের দাবিতে যেভাবে আন্দোলন করা দরকার ছিল, আমরা তা পারিনি৷ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় এমন আন্দোলন আমরা গড়ে তুলতে পারিনি৷'' 

কেন তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা যায়নি? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘‘আমাদের সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন আছে৷ ফলে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারিনি৷ আমাদের সাংবাদিকদের মধ্যে দলকানা ভাবও আছে৷ ফলে আমরা বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি৷ কিন্তু হতে পারতো৷'' 

ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস খানও শুরুর দিকের আন্দোলনে ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেকে বলছেন, সাংবাদিকরা কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি৷ কিন্তু সাংবাদিকরা তাদের দলীয় বিভাজন এবং বিভেদ ভুলে অনেক দিন আন্দোলন করেছেন৷ কিন্তু সরকার যদি বিষয়টি আমলে না নেয়, গুরুত্ব না দেয়, তাহলে আমরা কী করতে পারি৷ আসলে এখানে সরকারের আন্তরিকতাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷''

‘শেষ পর্যন্ত তো আর সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ খাকেননি, কেন এমন হলো, এটা আমারও প্রশ্ন’

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো আর সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ খাকেননি৷ কেন এমন হলো? ইলিয়াস খান বলেন, ‘‘এটা আমারও প্রশ্ন৷ বাজারেও তা চাউড় হয়েছে, যাঁরা নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায়ে ছিলেন, তাঁরা সরকারের কাছ থেকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ম্যানেজড হয়ে যান৷ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল৷ আমাদের সাংবাদিক ইউনিয়নে রাজনৈতিক বিভক্তি আছে৷ কেউ কেউ সরকারের উচ্চ পদে গিয়েছেন৷ দু'চারজন সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন৷ ফলে আমাদের আর ঐক্যবদ্ধ হওয়া হয়নি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের অনৈক্যের কারণেই আমরা সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে সংবাদমাধ্যমে ধর্মঘট বা বন্ধ রাখার মতো কর্মসূচিতে যেতে পারিনি৷ তবে সরকার যদি আন্তরিক হতো, তাহলে অপরাধীরা শনাক্ত হতো এবং বিচারের আওতায় আসত৷ তবে আমি এখনো আশাবাদী যে, একদিন বিচার হবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য