1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উচ্চবিত্ত করদাতারা কোথায়?

রেশমী নন্দী
৮ নভেম্বর ২০১৭

এ মাসের প্রথম দিন থেকে করদাতাদের সেবা দিতে দেশব্যাপী শুরু হয় জাতীয় আয়কর মেলা৷ রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে এক সপ্তাহ, জেলা শহরে চার দিন ও ৩২ উপজেলা শহরে দু'দিনব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়৷

https://p.dw.com/p/2nFLL
Symbolbild Bangladesch Korruption Banknoten Geld Bestechung
ছবি: DW

এবারের মেলায় সব মিলিয়ে কর আদায় হয়েছে ২ হাজার ২১৭ কোটি টাকার৷ রিটার্ন জমা দিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ করদাতা৷ আর সেবা নিয়েছেন ১১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ৷ গতবারের তুলনায় এবারের মেলায় কর আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ৷ আর সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ৷

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে প্রতি বছরই৷

বাড়ছে আদায়ের পরিমাণও৷ নানামুখী পদক্ষেপের ফলে কর দেয়ার বিষয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহও বাড়ছে৷ ২০১০ সালে প্রথম আয়কর মেলা শুরু হয়৷ সে বছরই শুরু হয় সেরা করদাতাদের পুরস্কৃত করা৷ এবছর থেকে শুরু হয়েছে করদাতাদের পরিবারভিত্তিক সম্মাননা ‘কর বাহাদুর' খেতাব দেয়া৷ এছাড়াও, যারা রিটার্ন দাখিল করবেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের সেইসব করদাতারা পাচ্ছেন ‘ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড' ও ‘ইনকাম ট্যাক্স পেয়ার স্টিকার'৷ অনলাইনে আয়কর নিবন্ধন (ই-টিআইএন) চালুর ফলে করসংক্রান্ত সব সেবা মিলছে ঘরে বসেই৷ এমন নানামুখী সমন্বিত প্রভাবে দেশে বাড়ছে করদাতার সংখ্যা৷

বিশেষ করে আয়কর মেলায় ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর দেয়ার প্রবণতা বেড়েছে লক্ষ্যণীয় হারে৷ বিপুল উৎসাহের সাথে সাধারণ মানুষ আসেন এ মেলায়৷ প্রয়োজনীয় তথ্য সহজেই পাওয়া যায়,  সেই সাথে হয়রানি ছাড়াই নির্বিঘ্নে কর সংক্রান্ত সবকিছুই সেরে ফেলা যায়, ফলে প্রতি বছরই এ মেলা হয়ে উঠছে আরো জমজমাট৷

চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-২ এর কমিশনার প্রদ্যুৎ কুমার সরকার জানান, মেলাকে ঘিরে আয়করদাতাদের উৎসাহ বাড়ছে প্রতি বছরই৷ ‘‘গতবারের তুলনায় চট্টগ্রামে আয়কর মেলায় এবার রিটার্ন দাখিলের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি৷ সুতরাং প্রগ্রেস তো ভালোই৷'' আমলাতান্ত্রিক জটিলতামুক্ত পরিবেশ, হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে ফর্ম পূরণের সুবিধা, ব্যাংকিং সুবিধা ইত্যাদি কারণে মেলায় এসে আয়কর দেয়া সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক, ফলে এ মেলা সাধারণ মানুষের আয়কর ভীতি কাটিয়ে উঠতে অনেকখানি সাহায্য করছে বলে মনে করেন তিনি৷ রাজস্ব সংগ্রহের এ ধারা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক হলেও এ ধরনের উদ্যোগ মূলত সাধারণ পেশাজীবীদের কর দিতে উৎসাহিত করছে৷ অন্যদিকে, বড় করদাতাদের বিষয়টি এখনো আইনি জটিলতা ও রাজস্ব বোর্ডের দুর্নীতির আড়ালেই রয়ে গেছে৷

এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আয়কর মেলা মূলত ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্য নিয়েই শুরু হয় এবং সে কাজ ভালোভাবেই চলছে৷ তবে বড় করদাতাদের মনিটরিং এর ক্ষেত্রে এনবিআর-এর লোকবলের সীমাবদ্ধতা, পদ্ধতিগত জটিলতা সেই সাথে আইনের দুর্বলতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷ বড় করদাতাদের উৎসাহিত করার চেয়ে বরং মনিটরিং বাড়ানো দরকার যাতে তারা ন্যায্য কর দেন৷ এ বিষয়ে আরো বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন৷'' বর্তমানে যে আয়কর অধ্যাদেশের আওতায় কর সংগৃহীত হচ্ছে সেটি ১৯৮৪ সালে প্রণীত৷ আইনটি বেশ দুরূহ, সেই সাথে সময়পোযোগীও নয়৷ ফলে আইনের সংশোধন যতদিন হচ্ছে না, ততদিন বড় করদাতাদের ফাঁকির বিষয়টি ধরা বেশ কঠিন৷ আয়কর আইনটি সংশোধনে কালক্ষেপন করা হচ্ছে উল্লেখ করে আইনটি দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন তিনি৷

TIB IFTEKHAR EDITED - MP3-Stereo

অন্যদিকে, আয়কর দেয়ার ক্ষেত্রে ভীতি এবং বিশ্বাসের সংকটও অনেক আয়কারদাতার মধ্যে রয়েছে৷ কর যে স্বচ্ছতার সাথে দেশের উন্নয়ন কাজে ব্যয় হবে সেটা নিয়ে রয়েছে আস্থার অভাব ৷

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজস্ব বিভাগের নেয়া নানা উদ্যোগ সাধারণ মানুষকে কর দিতে উৎসাহিত করছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই৷ তবে বড় করদাতাদের মধ্যে এখনো রাজস্ব ফাঁকি দেবার প্রবণতা রয়েই গেছে৷ অনেক ক্ষেত্রে রাজস্ব কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে কর ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন অনেকে৷ ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ কর ফাঁকি দেয় আর এর সাথে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিকরণ হয়ে গেছে৷'' তিনি আরো বলেন, করের প্রত্যক্ষ সুবিধা না পেয়েও অনেক সম্ভাব্য করদাতা এ বিষয়ে নিরুৎসাহিত হন৷ কেবল আইন দিয়ে মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর আইন সংস্কারের পাশাপাশি সবার মধ্যে কর বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি৷

‘আমি মনে করি পুরো প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ এখনো নয়’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব মতে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা সাড়ে ৩০ লাখেরও বেশি৷  তবে এর মধ্যে কর দেয় মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ৷ অর্থাৎ, ১৬ কোটি মানুষের দেশে করদাতার সংখ্যা খুবই নগন্য৷ রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘এনবিআর-এর পক্ষ থেকে সবাইকে কর দিতে উৎসাহিত করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷'' বড় করদাতাদের ক্ষেত্রে এসব উদ্যোগ কতটা কার্যকর এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে যে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, তা কার্যকর হলে ব্যবসায়ীদের ‘মানি ফ্লাইট বা ট্রান্সফার প্রাইজিং' এর মতো পদ্ধতিতে কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ অনেক কমে যাবে৷'' আগামী বছরের জুন নাগাদ নতুন আইন কার্যকর হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি৷

এ বছর সেরা করদাতাদের একজন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, বড় করদাতাদের কেবল দায়ী করলে হবে না, কারণ প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, যারা কর দেন তাদের উপরই নানাভাবে বারবার করের বোঝা চাপানো হয়৷ অন্যদিকে, যেসব বড় ব্যবসায়ী কর দেন না, তারা নেটের বাইরেই থেকে যাচ্ছে৷ যে মেকানিজমের মধ্যে কর আদায় করছেন, তাদের স্বচ্ছতা আছে কিনা সেটাও তো দেখতে হবে৷ ‘‘আমি মনে করি পুরো প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ এখনো নয়, যার ফলে ট্যাক্স নিয়ে বিভিন্ন ত্রুটির কথা শোনা যায়৷''  যাঁরা কর ফাঁকি দিচ্ছেন তাঁদের যেমন আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন, তেমনি যাঁরা নিয়মিত কর দিচ্ছেন তাঁদের উপর নতুন করে আরো করের বোঝা যাতে না চাপে সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷

প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য