1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিএএ নিয়ে বিহারে নীতীশ-বিজেপি-র লড়াই

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
৫ নভেম্বর ২০২০

বিহার নির্বাচনেও সিএএ, এনারসি প্রসঙ্গ। আর তা নিয়ে রীতিমতো সংঘাত শুরু হয়েছে নীতীশ কুমার ও বিজেপি-র মধ্যে।

https://p.dw.com/p/3ku1p
ছবি: IANS

বিহারের ভোটেও সিএএ-এনআরসি প্রসঙ্গ। আর তা নিয়ে ক্ষমতাসীন জোটে তীব্র ঝামেলা। দিন দুয়েক পরেই শেষ পর্বের ভোট। তার আগে এই বিরোধ রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে।

বিহারেএ বার বিজেপি-র তারকা প্রচারক ছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। স্বাস্থ্যের কারণে এ বার অমিত শাহকে বিহারের প্রচারে খুব একটা দেখা যায়নি। মোদী এবং যোগীই বিহার জুড়ে প্রচার করেছেন। কাটিহারের জনসভায় যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, ''যদি কোনো অনুপ্রবেশকারী ভারতে ঢোকার চেষ্টা করে তা হলে তাকে ভারতের বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। নরেন্দ্র মোদী যে আইন করেছেন, তাতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে হিন্দু, জৈন, শিখ, বৌদ্ধরা এলে নাগরিকত্ব পাবেন।'' এর সঙ্গে যোগী জানান, ''আমাদের দেশে সংখ্যালঘুরা বিশেষ অধিকার পান এবং তাঁরা ভালো আছেন। কিন্তু প্রতিবেশী সংখ্যালঘুদের কী হাল তা সকলে জানেন।''

এরপরই গর্জে উঠেছেন নীতীশ কুমার। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন,'' কে এ সব ফালতু কথা বলে। কে কাকে দেশের বাইরে করবে? কারও এত দম নেই। সব ভারতের লোক। কে বাইরে করবে? কে অপপ্রচার করছে?''

নীতীশ বলেছেন, ''আমি তো সকলকে একজোট করার চেষ্টা করেছি। কিছু লোক চায় সমাজে ঝগড়া হোক। আমরা তো চাই, সকলে প্রেম ও সৌভাতৃত্বের ভাবনায় থাকুক। তখনই সমাজ এগোতে পারবে।'' নিজের সহযোগী দলের বিরুদ্ধেই গুরুতর অভিযোগ এনেছেন নীতীশ। বলেছেন, তাদের কিছু নেতা লোকের মধ্যে ঝগড়া লাগাতে চান।

তার মানে বিহারে শেষ পর্বের ভোটের আগে নীতীশ বনাম বিজেপির লড়াই একেবারে প্রকাশ্যে চলে এল।  তা-ও সিএএ-এনআরসি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে।  প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা মনে করেন, ''বিহারের লড়াই নীতীশ কুমার বনাম যোগী আদিত্যনাথের নয়, সংঘাত নীতীশ কুমার বনাম বিজেপি-র। কারণ, যোগী আদিত্যনাথ সব জায়গায় একই ধরনের কথা বলেন। তিনি হিন্দুত্বের কথা বলবেন, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধাচরণ করবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। তাঁকে বিহারে বেশি করে প্রচার করাচ্ছে বিজেপি। তাই তারা কী ধরনের প্রচার করতে চাইছে সেটা পরিষ্কার।''

এর ফলে বিপাকে পড়েছেন নীতীশ কুমার। কারণ, এই সমাজবাদী নেতা মুসলিমদেরও ভোট পান। কিন্তু যোগী এই ধরনের কথা বলায় নীতীশ মুসলিম ভোট হারাতে পারেন। সে জন্যই তিনি গর্জে উঠেছেন।

প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্যও মনে করেন, যোগী নিজের কথাই বলেছেন। তিনি এই ধরনের কথাই বলেন। যোগী ও নীতীশ যে জায়গায় এই কথাগুলো বলেছেন, সেটা হলো বিহারের সীমাঞ্চল, এখানে মুসলিম জনসংখ্যা প্রচুর। গতবার নীতীশ লড়েছিলেন কংগ্রেস ও আরজেডির সঙ্গে। ফলে তিনি প্রচুর পরিমাণে মুসলিম ভোট পেয়েছিলেন। এ বারও কিছুটা মুসলিম ভোট পাওয়ার আশা করেছিলেন নীতীশ। যোগী বা বলা যায় বিজেপি সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। সে জন্যই নীতীশ এতটা সুর চড়িয়েছেন।''

বিহারে এ বার এমনিতেই প্রবল চাপে আছেন নীতীশ কুমার। পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁর উপর ক্ষুব্ধ। প্রথম থেকেই তাঁর সঙ্গে বিজেপি-র সম্পর্কে কিঞ্চিত ফাটল ধরেছে। তবে সেটা ছিল সদ্যপ্রয়াত নেতা রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ পাসোয়ানের  সিদ্ধান্ত নিয়ে। চিরাগ কেন্দ্রীয় স্তরে এনডিএ-তে থেকেও বিহারে আলাদা লড়ছেন। যেখানে নীতীশের দলের প্রার্থীরা আছেন, সেখানেই চিরাগও প্রার্থী দিয়েছেন। নীতীশের দলের নেতারা মনে করেন, চিরাগের পিছনে বিজেপি না থাকলে তিনি এই ধরনের কাজ করতে পারেন না। তাঁরা মনে করেন, বিজেপি চায়, নীতীশের আসন কম হোক। এর উপর যোগীর ভাষণ। নীতীশ তাই চটে লাল। সিএএ-এনআরসিনিয়ে যোগীর কথাকে এইভাবে উড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি।

কিন্তু এরপরেও কি মুসলিম ভোট পাবেন নীতীশ? তাঁর দলের প্রার্থীরা কি জিততে পারবেন? না কি ১৫ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী থকার পর বিহার মুখ ফিরিয়ে নেবে এই সমাজবাদী নেতার উপর থেকে? আগামী ১০ নভেম্বর ভোটগণনার দিন এই সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে।