1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুপারহিট কাশ্মীর ফাইলস নিয়ে ভয়ংকর বিতর্ক

২১ মার্চ ২০২২

কাশ্মীরে পণ্ডিতদের বিতাড়নের উপর তৈরি সিনেমা 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' নিয়ে তীব্র বিতর্ক। তবে ইতিমধ্যেই সিনেমাটি সুপারহিট। 

https://p.dw.com/p/48n21
বিতর্কের ঝড় তুলেছে দ্য কাশ্মীর ফাইলস। ছবি: Debarchan Chatterjee/NurPhoto/picture alliance

সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণের শিকার হয়ে কাশ্মীর থেকে হিন্দু পণ্ডিতদের গণপ্রস্থান বা গণবিতাড়ন নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন বিবেক অগ্নিহোত্রী। অনুপম খের, মিঠুন চক্রবর্তী, পল্লবী জোশি অভিনীত এই ছবিতে বর্তমান সময়ের কোনো বড় তারকা নেই, তথাকথিত বলিউডি ছবির মতো নাচ-গান বা মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা নেই, দর্শক আকর্ষণের চিরাচরিত মশলাও নেই। পরিচালকের দাবি, 'বাস্তব ভিত্তিক সিনেমা' তৈরি করেছেন তিনি। তাসত্ত্বেও এই সিনেমা বক্স অফিসে সুপার ডুপার হিট।

আর সেই সঙ্গে এই সিনেমা নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ভয়ংকর বিতর্ক। সমালোচকরা বলছেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছবি। অর্ধসত্য ও অনেকটা মিথ্যার উপর ভিত্তি করে সিনেমা বানানো হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই সামাজিক মাধ্যমে হিসাব আসছে, কাশ্মীরে কতজন পণ্ডিত খুন হয়েছেন এবং কতজন কাশ্মীরের মুসলিম ও শিখ সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন।

সেখানে কেউ বলছেন, কাশ্মীরের লাখ লাখ পণ্ডিত যে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে এসেছিলেন এটা বাস্তব। পাশাপাশি এটাও বাস্তব, সেসময় বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি সেই সরকারকে সমর্থন করছিল। তারা পণ্ডিতদের ইস্যুতে বিশ্বনাথপ্রতাপের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেনি, করেছিল মণ্ডল-কমণ্ডলের ইস্যুতে।

মোদীর বক্তব্য

বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ''যারা হামেশা মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হন, তারা গত কয়েকদিন ধরে খুবই বিচলিত হয়ে পড়েছেন। কাশ্মীর ফাইলসকে তথ্যের আধারে বিশ্লেষণ করার বদলে, শিল্পের নিরিখে বিচার করার জায়গায়, তারা এই সিনেমাকে কলঙ্কিত করছেন, সুনামহানি করছেন।'' মোদীর বক্তব্য, ''কেউ সত্যকে সামনে আনছেন, আর সেই সত্যকে কিছু মানুষ স্বীকার করতেই প্রস্তুত নন। গত পাঁচ-ছয়দিন ধরে তাই ষড়যন্ত্র চলছে।''

মোদী বলেছেন, ''সত্যকে ঠিকভাবে দেশের সামনে আনতে হবে। এটাই দরকার। যার মনে হচ্ছে, এটা ঠিক নয়, তারা আরেকটি সিনেমা বানান। কে মানা করেছে?''

বিজেপি-শাসিত রাজ্যে

বিজেপি-শাসিত অনেক রাজ্যই কাশ্মীর ফাইলসকে করমুক্ত বলে ঘোষণা করেছে। গুজরাট, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই কাশ্মীর ফাইলসকে করমুক্ত করে দিয়েছে। হরিয়ানায় তো এক বিজেপি নেতা বিনা পয়সায় এই সিনেমা মানুষকে দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ।

শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ''গুজরাট ও রাজস্থানে ভোট আসছে। সেদিকে লক্ষ্যে রেখেই বিজেপি এই কাজ করছে।''

বক্স অফিসে সাফল্য

সিনেমা সমালোচক তরণ আদর্শ টুইট করে বলেছেন, ''আগামী বুধ, বৃহস্পতিবারের মধ্যে 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' দুইশ কোটি টাকার বাণিজ্য করবে। গত শুক্রবার ১৯ কোটি ১৫ লাখ, শনিবার ২৪ কোটি ৮০ লাখ এবং রোববার ২৬ কোটি ২০ লাখের ব্যবসা করেছে এই ফিল্ম।''

বক্সঅফিসডটকম জানিয়েছে, প্রথম সাতদিনেই দ্য কাশ্মীর ফাইলস একশ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেছে। অষ্টম দিনে করেছে ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার। সমালোচকদের মতে, বক্স অফিসে সুনামি তুলেছে এই সিনেমা।

ওমর আবদুল্লার বক্তব্য

কশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেছেন, ''আমার মনে হয় না, পরিচালক সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই সিনেমা তৈরি করেছেন। সত্য হলো, কাশ্মীর থেকে পণ্ডিতদের যখন গণপ্রস্থান হয়েছে, তখন ফারুখ আবদুল্লা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না। এটা রাজ্যপালের শাসনে হয়েছিল এবং জগমোহন তখন রাজ্যপাল ছিলেন।''

ওমরের দাবি, ''সিনেমায় একবারের জন্যও দেখানো হয়নি, তখন কেন্দ্রে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বিজেপি সরকারকে সমর্থন করছিল।'' ওমর বলেছেন, ''আমি পণ্ডিতদের খুন করার তীব্র নিন্দা করছি। কিন্তু কাশ্মীরে মুসলমানরাও মারা গেছেন। শিখরাও মারা গেছেন।''

আমির খান যা বলেছেন

আনন্দবাজার জানাচ্ছে, আমির খান সম্প্রতি দক্ষিণ ভারতীয় পরিচালক রাজামৌলীর আগামী ছবি ‘আর আর আর'-এর সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন। সেখানে কাশ্মীর ফাইলস নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি এখনও সিনেমাটি দেখিনি। আমি অবশ্যই দেখব। আমি মনে করি, প্রত্যেক ভারতীয়ের এই ছবি দেখা উচিত। কাশ্মীর ফাইলসে যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, তা হৃদয়বিদারক। দেশবাসীর সেই ইতিহাস জানা উচিত।''

আমির জানিয়েছেন, ''যারা মানবতায় বিশ্বাস করেন, এই সিনেমাটি তাদের মন ছুঁয়ে গিয়েছে।''

বিবেক অগ্নিহোত্রীকে নিরাপত্তা

কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীর ফাইলসের নির্মাতা বিবেক অগ্নিহোত্রীকে ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দিয়েছে। সরকারি সূত্র সংবাদসংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছে, তিনি এখন থেকে দেশের যেখানেই যান না কেন, সিআরপিএফ জওয়ানরা তার সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই, এনডিটিভি)