1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোমাঞ্চকর ফাইনালে ইতিহাস গড়ল ইংল্যান্ড

১৪ জুলাই ২০১৯

একেই বলে পয়সা উসুল ম্যাচ৷ সুপার ওভারেও নয়, বাউন্ডারির হিসেবে নির্ধারিত হলো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন৷

https://p.dw.com/p/3M3Rw
ম্যাচসেরা হন বেন স্টোকসছবি: Getty Images/C. Mason

এর চেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ আর কী হতে পারে বিশ্বকাপের ফাইনালে! 

মূল ৫০ ওভারের ম্যাচ টাই৷ এরপর সুপারওভারও টাই! ক্রিকেটের নিয়মানুযায়ী, ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতল বাউন্ডারির হিসেবে! তারা ২২টি চার ও ২টি ছয় মেরেছে নির্ধারিত ৫০ ওভারে৷ আর নিউজিল্যান্ড মেরেছে ১৪টি চার ও ২টি ছয়৷ 

ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি৷ কখনো আবার হওয়ার সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ!

এর মধ্য দিয়ে ক্রিকেটের নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখল বিশ্ব৷ আগামী চার বছরের জন্য চ্যাম্পিয়নের তকমা এঁটে থাকবে ইংলিশদের গায়ে৷ কিন্তু এই পথ পাড়ি দিতে তাদের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটি দিতে হয়েছে ফাইনালেই, যেটা বিশ্বকাপ মঞ্চে খুব কমই দেখা গেছে৷ 

পরতে পরতে উত্তেজনা আর রোমাঞ্চে ভরপুর এক ম্যাচে উপহার দিয়েছে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড৷ ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসের মাঠে রচিত হয়েছে ইতিহাস৷

যেমন শেষ ওভারটা৷ তখন ৬ বলে প্রয়োজন ১৫ রান৷ উইকেটে বেন স্টোকস৷ অপরপ্রান্তে বল হাতে ট্রেন্ট বোল্ট৷ প্রথম বল ডট৷ পরেরটিও৷ তারপরের বলে ছয় হাঁকালেন স্টোকস৷ তারপরের বলে দু’রান নিতে গিয়ে গাপটিলের থ্রো তাঁর ব্যাটে লেগে রানআউট থেকেই শুধু বাঁচেননি, বল চলে গেছে বাউন্ডারির ওপারে৷ ফল দুই আর চার মিলে আরো ছয় রান৷ এবার প্রয়োজন ২ বলে ৩ রান৷ তারপরের বলে লংঅফে ঠেলে দিয়ে আবার দু’রান নিতে গিয়ে এবার আদিল রশিদ হন রানআউট৷ শেষ বলে তাই দরকার ১ বলে ২ রান৷ এবার লংঅনে ঠেলে দিয়ে ২ রানের জন্য তাড়া করে ১ রান নিয়ে আবারো রানাআউটের শিকার শেষ ব্যাটসম্যান মার্ক উড৷ ফলে ম্যাচ টাই৷ ফলে সুপারওভার!

ICC Cricket World Cup Finale 2019 Neuseeland - England Martin Guptil
শেষ ওভারে গাপটিলের থ্রো থেকে চার হয়, যা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ছবি: Getty Images/C. Mason

সুপারওভারটিও ছিল উত্তেজনাপূর্ণ৷ মরগ্যান তাঁর দুই বাজির ঘোড়া স্টোকস-বাটলার জুটিকেই পাঠান মাঠে৷ ৬ বলে ১৫ রান তোলেন তারা৷ জবাবে ৬ বলে সেই ১৫ই তুলে নেন গাপটিল-নিশামরা৷ ফলে সুপারওভারও হয় টাই৷ 

এর আগে ম্যাচ কখনো পেসারদের আগুনঝরা বলের নিয়ন্ত্রণে, কখনো দাপটে বেড়াচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা৷ কখনো ঝুঁকে পড়েছে কিউইদের দিকে, কখনো ইংলিশরা টেনে ধরছেন৷ কখনো বিশ্বকাপ না জেতা দুই দলের এ যেন সবটুকু নিংড়ে দেয়া পারফরম্যান্স৷ 

রোমাঞ্চের শুরুটা টস দিয়েই৷ সেটি জিতে নিয়ে একধাপ এগিয়ে যায় সেমিফাইনালের দল হিসেবে খ্যাত নিউজিল্যান্ড৷ কিন্তু অধিনায়ক উইলিয়ামসন  পুরোপুরি এগিয়ে রাখেননি নিজেকে৷ বলেন, মাথার ওপরে আকাশে যেমন মেঘের ছড়াছড়ি, তা যে কাউকেই এগিয়ে রাখবে৷ ইংলিশ অধিনায়ক মরগ্যানও তাতে সায় দেন৷ শুরু হয় মাঠের লড়াই৷ 

উইলিয়ামসনের শঙ্কা শুরুতেই সঠিক প্রমাণ করলেন ইংলিশ পেসার ওকস-আর্চাররা৷ প্রথমে ব্যাট করে বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন পূরণ করার পথে চীনের প্রাচীর হয়ে গেলেন৷ ফলাফল, যাদের ব্যাটে ভর করে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার কথা, সেই গাপটিল, উইলিয়ামসন, রস টেলররা উইকেটে থিতু হবার আগেই পথ দেখেছেন৷ 

সপ্তম ওভারে গাপটিলকে দিয়েই শুরু৷ ক্রিস ওকসের ইনসুইঙ্গারে পরাস্ত গাপটিল আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন৷ কিন্তু রিভিউ টেকেনি৷ ১৮ বলে ১৯ রানে ফেরেন এই মারকুটে ব্যাটসম্যান৷ 

সেখান থেকে আরেক ওপেনার নিকোলসকে সঙ্গে করে অধিনায়ক উইলিয়ামসন দলের স্কোরবোর্ড দীর্ঘ করছিলেন ধীর গতিতে৷ কিন্তু দলীয় শতরান পার হতেই বাধে বিপত্তি৷ 

বদলি বোলার লিয়াম প্লাঙ্কেট এসে সাঁকো নাড়া দেন৷ ঝরে পড়েন উইলিয়ামসন ও নিকোলস দু’জনই৷ ৩০ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন কিউই অধিনায়ক৷ আর ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে নিকোলসের উইকেট ভেঙ্গে দেয় প্লাঙ্কেটের আরেক ইনসুইঙ্গার৷ 

ICC Cricket World Cup 2019 | Finale England vs. Neuseeland
৪২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন প্লাঙ্কেটছবি: AFP/Getty Images/G. Kirk

রস টেলর ক্রিজে এসে দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করছিলেন৷ কিন্তু দলীয় সংগ্রহ দেড়শ হবার আগেই তাকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান ইংলিশ গতিদানব মার্ক উড৷ 

প্লাঙ্কেট তাঁর তৃতীয় শিকার বানান নিশামকে৷ ৪৪তম ওভারে ২০০ রানের কোটা পেরোয় কিউইরা৷ বাকি ৬ ওভারে ৪১ রানই কেবল তুলতে সমর্থ হয় তারা৷ 

উইকেটকীপার ব্যাটসম্যান লাথাম ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখান৷ তবে তাঁর প্রচেষ্টা থামে ব্যক্তিগত ৪৭ রানে৷ ওকসের স্লোয়ারের শিকার হন তিনি, ক্যাচ দেন শর্ট লংঅনে৷ সব মিলিয়ে আট উইকেটে ২৪১ রানের সংগ্রহ গড়তে পারে নিউজিল্যান্ড৷ শেষ দিকে অবশ্য উইকেট কিছুটা স্লো হয়ে পড়ে৷ 

প্লাঙ্কেট ও ওকস ৩টি করে উইকেট নেন৷ আর আর্চার ও উড নেন ১টি করে৷ 

২৪১ রান তাড়া করতে নেমে প্রতিপক্ষের পেসারদের তোপের মুখে পড়েন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরাও৷ শুরু থেকেই রয়-বেযারস্টোদের উইকেটে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিচ্ছিলেন না বোল্ট-হেনরিরা৷ খুব দ্রুত সাফল্যও পান কিউই বোলাররা৷ 

হেনরির বলে ১৭ রানে জেসন রয় এবং গ্র্যান্ডহমের বলে ৭ রানে জো রুট উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন৷ আর লোকি ফার্গুসনের বলে ইনার এজে লেগে ৩৬ রানে উইকেট ভাঙ্গে বেয়ারস্টোর৷ 

সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক এউইন মরগ্যানও৷ পেসার নিশামের বলে এরপর মিডউইকেটে ক্যাচ দেন৷ দুর্দান্তভাবে সামনে ঝাপিয়ে পড়ে ক্যাচটি লুফে নেন ফার্গুসন৷ স্কোরবোর্ডে তখন ৪ উইকেটে ৮৬ রান৷ এরপর শুরু হয় স্টোকস-বাটলার জুটির দ্বৈরথ৷ ২৮তম ওভারে এসে শতরান পূর্ণ করে ইংল্যান্ড৷ 

ICC Cricket World Cup Finale 2019 Neuseeland - England Kane Williamson
টুর্নামেন্ট সেরা কেন উইলিয়ামসনছবি: Getty Images/AFP/P. Ellis

ইংলিশ শিবিরে চেপে বসা পাহাড় সমান চাপ চমৎকার বোঝাপড়ায় সামলাতে শুরু করে স্টোকস-বাটলার জুটি৷ ৩৮তম ওভারে দলের সংগ্রহ দেড়শ’ অতিক্রম করে৷ এই জুটি ১০৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ইংল্যান্ডকে খাদ থেকে টেনে তোলে৷ মনে হচ্ছিল ম্যাচ নিয়ন্ত্রণেই এসে পড়ছে ইংলিশদের৷ 

জুটি ভাঙ্গেন ফার্গুসন৷ ৬০ বলে ৫৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন বাটলার৷ তখনো ইংল্যান্ড বেরিয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল৷ নিশাম পরপর প্লাঙ্কেট ও আর্চারকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিপক্ষের জন্য আবারো কঠিন করে তোলেন ম্যাচ৷ কিন্তু ৯৮ বলে ৮৪ রানে অপরাজিত থাকা স্টোকসের ব্যাট বলেছে ভিন্ন কথা৷ 

তাঁর অনবদ্য ইনিংসের জন্য স্টোকসই জিতে নেন ম্যাচসেরার পুরস্কার৷ আর টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার ওঠে কিউইদের ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে আসা এবং টুর্নামেন্টে ৫৭৮ রান করা কেন উইলিয়ামসন৷