1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্দি মানুষ

২২ সেপ্টেম্বর ২০১০

সম্প্রতি মার্কিন মুল্লুকের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সোশ্যাল মিডিয়া এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে তার প্রভাব নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল৷

https://p.dw.com/p/PJ4u
ছবি: picture alliance/dpa

সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা দিনের সিংহভাগ সময় সোশ্যাল মিডিয়ার পেছনে ব্যয় করে থাকেন, তাঁরা মানসিক চাপ বা স্নায়ূর দূর্বলতা, অনিদ্রা এমনকি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নানান ঝামেলায় পড়েন৷

ইদানিং ফেসবুক, টুইটার সহ অপরাপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি যুব সমাজের অধিকাংশই যেন একেবারে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভানিয়ার হ্যারিসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি এ'নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল৷ সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলে কী ঘটে তা দেখার জন্য সেখানকার যাবতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢোকার পথটি এক সপ্তাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ অর্থাৎ, সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য যে আইপি ঠিকানাটি ব্যবহৃত হয় সেটি এক সপ্তাহ ধরে ‘লক' বা আটকে রাখা হয়েছিল৷ আর তার ফলে বিভিন্ন জনের বিচিত্র সব অনুভূতির কথা জানা গেছে৷

এই এক সপ্তাহ জুড়ে কারও কারও মনে হয়েছে, তাঁরা খানিক দম ফেলার ফুরসৎ পেলেন৷ সংখ্যার বিচারে সে অবশ্য অতি নগণ্য৷ তাদের মনে হয়েছিল, বন্ধুর মুখোমুখি, সামনাসামনি চেয়ার টেনে কতদিন যে বসা হয় না! আবার কেউ কেউ নাকি ঘুমের জন্য বেশ খানিকটা সময়ও পেয়েছিলেন! বোঝাই যাচ্ছে বেচারাদের দুচোখ সারাক্ষণ টেনে ধরে থাকে এইসব সোশ্যাল মিডিয়ার বহুবর্ণিল জানালা৷

কিন্তু অধিকাংশের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ধূমপায়ীরা যেমন দীর্ঘসময় ধরে ধূমপান না করতে পারলে রীতিমতো ছটফট করতে থাকেন৷ এইসব সোশ্যাল মিডিয়ার নাগাল না পাওয়ার কারণে তারা ঠিক তেমনি ছটফট করে বেড়াচ্ছেন৷ অবশ্য সময় বদলেছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ার এই তৃষ্ণা মেটাতে তাঁরা তাদের স্মার্টফোনটির সহায়তা নিতে খুব একটা বেশি দেরি করেন নি! শেষতক আর সহ্য না করতে পেরে মুঠোফোনেই যে যার গন্তব্যে ঢুকে পড়েছেন৷

যারা খুব একটা বেশি সোশ্যাল মিডিয়ার ভক্ত নন, এমন ছাত্রদেরও নাকি খানিক অসুবিধাই হয়েছিল৷ তারাও এই সপ্তাহ জুড়ে ক্ষণে ক্ষণে নাকি বেশ বিরক্তই হয়েছেন৷ কেবলই নাকি মনের মধ্যে খচ খচ করছিলো, কী যেন নেই কী যেন নেই! ছাত্রছাত্রীদের এই সমস্ত পরিস্থিতি দেখে-শুনে কলেজের প্রোভোস্ট এরিক ডার জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের এইসব আচরণে তাঁর মনে হয়েছে, মানুষ যেমন নেশায় আসক্ত হয় তেমনি এরাও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি রীতিমতো আসক্ত হয়ে পড়েছে৷তিনি বলেছেন, ছাত্র-ছাত্রীদের কেউ কেউ আবার নাকি রীতিমতো বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন৷ মাত্র এক সপ্তাহের এই ইন্টারনেট ‘বনধ্' এর কারণেই তারা তাদের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে বলেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন৷

অথচ বলতে গেলে বিষয়টা এখন গল্পের মতোই শোনাবে৷ খুব বেশিদিন আগের কথা নয় কিন্তু, বছর দশেক আগেও একটা সময় ছিলো যখন কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে কিংবা কথা বলতে হলে সে ছিল এক বড় হ্যাঁপার বিষয়৷ কাউকে কোন বিশেষ কথা জানাতে চাইলে তা ধীর স্থির এক পরিকল্পনার বিষয়ই ছিল৷

কিন্তু সময় বদলেছে৷ এখন ক্ষণে ক্ষণে বন্ধুর ভার্চুয়াল দরজায় টোকা দেয়া কিংবা তাঁর জানালায় চোখ রাখা আর কোন বিষয়ই নয়৷ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এখন সম্পর্কের টেনে ধরা চোখে অন্য কাজের আর কোন সময়ই মেলে না৷

প্রতিবেদনঃ হুমায়ূন রেজা

সম্পাদনাঃ সাগর সরওয়ার