1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোয়াজিল্যান্ডে আতঙ্কে বাংলাদেশিরা

ফয়সাল শোভন
৬ জুলাই ২০২১

সোয়াজিল্যান্ড নামে পরিচিত আফ্রিকার দেশ এসোয়াতিনিতে সহিংসতার জেরে বিপাকে পড়েছেন সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা৷

https://p.dw.com/p/3w6Uu
সোয়াজিল্যান্ডে গত সপ্তাহ থেকে রাজতন্ত্র বিরোধী বিক্ষোভ চলছে
সোয়াজিল্যান্ডে গত সপ্তাহ থেকে রাজতন্ত্র বিরোধী বিক্ষোভ চলছেছবি: AFP/Getty Images

স্থানীয়দের রোষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পাশাপাশি, লুটতরাজের শিকার হয়েছেন তারা৷ আতঙ্কে দেশটি ছাড়ার কথা ভাবছেন অনেকে৷

আফ্রিকার শেষ পূর্ণ রাজতন্ত্রের দেশ সোয়াজিল্যান্ড বা এসোয়াতিনিতে গত সপ্তাহ থেকে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে৷ রাজতন্ত্র বিরোধী বিক্ষোভ দমনে সরকার সেনাবাহিনীও মাঠে নামিয়েছে৷ দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ২০ জন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷

এদিকে সহিংসতার ঘটনায় বিপদে পড়েছেন সেখানে বসবাসরত বিদেশিরা৷ বিশেষ করে দেশটিতে থাকা বিপুল এশিয়ানদের ব্যবসা বাণিজ্য জ্বালিয়ে দেওয়া ও লুটতরাজের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ ডয়চে ভেলের কাছে সেখানে বসবাসরত একাধিক বাংলাদেশি জানিয়েছেন তাদের দোকান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে৷ অনেকে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন৷

​​​​সোয়াজিল্যান্ডে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি মালিকানার একটি ফিলিং স্টেশন
​​​​সোয়াজিল্যান্ডে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি মালিকানার একটি ফিলিং স্টেশনছবি: Bodruzzaman Chowdhury

১৯৯৮ সাল থেকে দেশটিতে বসবাস করছেন ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান গত দুই যুগে সেখানে এমন পরিস্থিতিতে তারা কখনও পড়েননি৷ বলেন, ‘‘বাংলাদেশিসহ বেশিরভাগ এশিয়ান দোকান, সম্পদে অগ্নিসংযোগ বা লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে৷ আমাদের ৯৫ শতাংশ বাংলাদেশিরই দোকানপাট আক্রান্ত হয়েছে৷ অনেক বাংলাদেশি এখন সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব৷ তাদের পরনে যে জামাকাপড় শুধু সেটিই আছে৷ এমনকি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পর্যন্ত পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷’’

আশরাফুল আলমের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় অর্ধশত বাংলাদেশি কাজ করেন৷ দেশটির রাজধানী বাবানেতে তার বাড়িতে এখন আশ্রয় নিয়েছেন নারী ও শিশুসহ আশেপাশের প্রায় ৬০ জন বাংলাদেশি৷ তাদেরই একজন বদরুজ্জামান চৌধুরী৷ তার একাধিক ফিলিং স্টেশনের ব্যবসা রয়েছে দেশটিতে৷ এরমধ্যে একটিতে ভাংচুর করা হয়, বাকিগুলোতে হামলা করা হলেও নিরাপত্তাক্ষীরা সেগুলো রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে এই প্রবাসী বলেন, ‘‘অনেক বাংলাদেশি মিলে একটি জায়গায় থাকার চেষ্টা করছি৷ আমরা এখানে ৬০ জনের মতো একসাথে আছি৷ এছাড়া মানজিনি নামের আরেকটি বড় শহরেও অনেকে একসঙ্গে থাকছেন৷ এই অবস্থা চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে আমাদের খাবারে সংকট দেখা দেবে৷’’ ঘরে এসেও হামলা করা হতে পারে এমন আতঙ্কে ভুগছেন তারা৷ ‘‘ওদের একটা মাইন্ডসেট হয়েছে আমরা বোধহয় ওদের সবকিছু নিয়ে নিচ্ছি৷ যারা আন্দোলন করছেন তারা হয়ত ওদের মনে এমন একটি বিষয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন,’’ বলেন বদরুজ্জামান৷

এই অবস্থা চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে আমাদের খাবারে সংকট দেখা দেবে: বদরুজ্জামান চৌধুরী

এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের অনেকে প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকায় আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবছেন৷ তবে পরিস্থিতির কারণেও সেটিও সম্ভব হচ্ছে না৷ দক্ষিণ আফ্রিকা ও মোজাম্বিকের সীমান্ত ঘেরা ছোট দেশটিতে বাংলাদেশের কোন দূতাবাসও নেই৷ সহায়তার জন্য তাই তারা যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন কাছের দূতাবাস প্রিটোরিয়াতে৷ সেখানে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দায়িত্বে থাকা নুর-ই হেলাল সাইফুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের তথ্য অনুযায়ী সোয়াজিল্যান্ডের পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে৷’’ সেখানকার বাংলাদেশিদের সাউথ আফ্রিকায় স্থানান্তর সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘কারো যদি ভিসা থাকে তিনি চাইলে নিজ দায়িত্ব সাউথ আফ্রিকায় আসতে পারেন৷ রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু করা হচ্ছে না৷ ওখানকার পরিস্থিতি এত খারাপ হয়নি যে সাউথ আফ্রিকা সরকার তাদের বিনা ভিসায় ঢুকতে দিবে৷... আমরা যোগাযোগ রাখছি, তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিচ্ছি৷ বাংলাদেশের সরকারও বিষয়টা জানে৷ তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় না পরিস্থিতি এত খারাপ যে ঐ দেশ ত্যাগ করে চলে আসতে হবে৷’’

আমাদের তথ্য অনুযায়ী সোয়াজিল্যান্ডের পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে: নুর-ই হেলাল সাইফুর রহমান

বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন সাউথ আফ্রিকায় বাংলাদেশ দূতাবাস এই বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে৷

এদিকে সোয়াজিল্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ৷ জেনেভায় সংস্থাটির মুখপাত্র লিজ থ্রোশেল সাংবাদিকদের কাছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণের সমালোচনার পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এখন কিছুটা শান্ত তবে আবারো অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কায় আমরা উদ্বেগে রয়েছি৷’’

প্রবাসীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সোয়াজিল্যান্ডে বর্তমানে প্রায় আঠারশো বাংলাদেশি বসবাস করেন৷ যাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত৷

DW Mitarbeiterportrait | Faisal Ahmed
ফয়সাল শোভন ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক৷@FaisalShovon14