সৌদিতে কাফালা পদ্ধতির পরিবর্তনের লাভক্ষতি
১৫ মার্চ ২০২১এছাড়া তারা সৌদি আরবের বাইরে ভ্রমণ করতে পারবেন৷ নিয়োগকর্তাকে লিখিতভাবে সরাসরি বা ইমেইলে জানালেই চলবে৷ নিয়োকারীর কোনো পূর্বানুমতি লাগবেনা৷ আর চাকরির মেয়াদ শেষ হলেই তারা চাকরি ছেড়ে চলে যেতে পারবেন৷ শুধু মাত্র অনলাইনে জানালেই হবে৷ কোনো অনুমতি নিতে হবে না৷
সৌদি জনশক্তি উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন নাসের সংস্কার প্রক্রিয়ার শুরুতে গত নভেম্বরে বলেছিলেন, ‘‘এর মাধ্যমে আমরা একটি আকর্ষণীয় শ্রমবাজার গড়ে তুলতে চাই, এখানে কাজের পরিবেশকে উন্নত করতে চাই৷’’
সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা সোমবার জানান, ‘‘আগে প্রবাসী কর্মীরা কাজ পরিবর্তন করতে পারতেন না৷ আর মেয়াদ শেষে তারা চাইলেও দেশে ফিরতে পারতেন না৷ নিয়োগকারীর অনুমতি লাগত৷ তবে এখন আর অনুমতি লাগবে না৷ তবে কোনো প্রতেষ্ঠানে কমপক্ষে এক বছর কাজ করতে হবে৷ তারপর পরিবর্তন করা যাবে৷ আর তারা ছুটিতে নিজেদের ইচ্ছায় অন্য দেশে বা নিজের দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন৷’’
এইসব সুবিধা পেতে বৈধ নিয়োগপত্র লাগবে বলে জানান তিনি৷ বৈধ নিয়োগপত্র না থাকলে তাদের জটিলতার কোনো অবসান এই আইনে ঘটবে না৷
এই ব্যবস্থার সুবিধা বাংলাদেশের গৃহকর্মী বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে যারা গেছেন তারা পাবেন কিনা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন বৈধ নিয়োগ পত্র থাকলে সবাই পাবেন৷
কিন্তু জনশক্তি রপ্তানিকারক ও বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘‘গৃহকর্মীরা সরাসরি এই সুযোগ পাবেন না৷ কারণ তারা কোনো একটি এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মে নিযুক্ত হন৷ ওই এজেন্সি যদি মনে করে কোনো কারণে তার চাকরি পরিবর্তন করিয়ে দেবে তাহলে তারা করে দিতে পারবে৷’’
ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসানও একই কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে নিয়োগপত্র নিয়ে সরাসরি কাজ করতে গেছেন তারা নতুন আইনের সুবিধা নিয়ে চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন৷’’
কিন্তু বাংলাদেশের যারা সৌদি আরবে কাজ করছেন তাদের বড় অংশ বিশেষ করে নারীরা গৃহকর্মী হিসেবেই সেখানে গেছেন৷ গাড়ি চালকদের একটি অংশ যারা ব্যক্তিগত গাড়ি চালান তারাও এই সুবিধা পাবেন না বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন৷ তবে সৌদি আরবে বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তা জানান, আইনটি মাত্র প্রয়োগ শুরু হয়েছে ৷ ধীরে ধীরে সব বিষয় পরিষ্কার হবে৷ আর এখন থেকে ভিসা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসবে৷ সিঙ্গেল এন্ট্রির পরিবর্তে প্রবাসী কর্মীদের মাল্টিপল ভিসা দেয়া হবে৷
সৌদি আরবে এখন বিভিন্ন দেশের প্রায় এক কোটি প্রবাসী কর্মী রয়েছেন৷ তার মধ্যে ২০ লাখ বৈধ বাংলাদেশি আছেন৷ আর বাংলাদেশিদের মধ্যে তিন লাখ নারী কর্মী যারা গৃহকর্মী হিসেবে সেখানে কাজ করেন৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৪০ হাজার কর্মী যান সৌদি আরবে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০ হাজারের মত বাংলাদেশি নাগরিক ডিপোর্টেশন সেন্টারে আছেন৷ তার অধিকাংশই সৌদি আরবে৷২০১৪ সালে আট লাখ বাংলাদেশি সেখানে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছেন৷
গৃহকর্মী হিসেবে যারা সৌদি আরবে কাজ করেন তারা নয় ধরনের কাজ করেন মালিকের বাড়িতে৷ ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের হিসাব মতে, গত চার বছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৪৭৩ জন বাংলাদেশী প্রবাসী নারী কর্মী মারা গেছেন৷ এরমধ্যে সৌদি আরবে মারা গেছেন ১৭৫ জন৷ ৮১ জন নারী কর্মী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আত্মহত্যা করেছেন৷ তার মধ্যে সৌদি আরবে ৫১ জন৷ গত দুই বছরে সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা ৬৩ জনকে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৫৮ জনই নারী৷
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সৌদি আরব নিজেদের স্বার্থেই শ্রম আইনে পরিবর্তন এনেছে৷ কোভিড-এর কারণে শ্রমিকের স্বল্পতা এবং বাইরে ধেকে শ্রমিক যাওয়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে৷ তবে সেখানে অবস্থানরত কর্মী বিশেষ করে বাংলাদেশিরা এখন চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন৷ বেশি বেতনে আরেক জায়গায় কাজ নিতে পারবেন৷ আগে যেটা হতো তাদের পাসপোর্ট আটকে রাখা হতো৷ তারা চাকরি পরিবর্তন তো দূরের কথা চাইলে দেশেও ফিরতে পারতেন না৷ এমনকি কেউ মারা গেলেও অনুমতি না মিললে লাশ দেশে পাঠানো যেত না৷
শরিফুল হাসান বলেন, ‘‘আরেকটি আশঙ্কার জায়গা তৈরি হয়েছে৷ আমাদের দেশের প্রতারক চক্ররা এই আইনের সুযোগ নিতে পারে৷ তার ফ্রি ভিসার কথা বলে সৌদি আরবে লোক পাঠানোর প্রতারণা শুরু করতে পারে৷ এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে৷’’
এই চাকরি পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া হয়েছে অঞ্চল ভিত্তিক৷ আর অঞ্চলও ভাগ করে দেয়া হয়েছে৷ সেই অঞ্চলের বাইরে আবার চাকরি পরিবর্তন করে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না বলে জানা গেছে৷
গতবছরের সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...