1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জীববিজ্ঞানীদের হাতিয়ার সিটি

১৭ জানুয়ারি ২০১৮

ট্যাক্সোনমি বা শ্রেণিকরণবিদ্যার একটি অপরিহার্য উপকরণ হল ব্যবচ্ছেদ৷ কিন্তু নতুন একটি প্রযুক্তিতে কম্পিউটারের স্ক্রিনে প্রাণী বা জীবটির ভার্চুয়াল, ত্রিমাত্রিক ইমেজের উপর কাটাছেঁড়া করা চলে, বাস্তব নমুনাটি অক্ষতই থাকে৷

https://p.dw.com/p/2qxT8
ছবি: picture-alliance/AP Photo/The Anchorage Daily News/Bob Hallinen

ক্রিট দ্বীপের পূর্ব উপকূলে মেরিন বায়োলজিস্টরা জলের নীচে নতুন জীবজন্তুর খোঁজ করছেন৷ পাথরের গায়ের শ্যাওলা থেকে তারা সেই সব অতি ক্ষুদ্র প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করছেন, যারা সমুদ্রবক্ষে বাস করে৷ জীববিজ্ঞানী সারা ফাউলভেটার বললেন, ‘‘বিশ্বের যে সব সাগর নিয়ে প্রভূত গবেষণা করা হয়েছে, ভূমধ্যসাগর তাদের মধ্যে অন্যতম, কেননা সমুদ্র নিয়ে ইউরোপীয় গবেষণার সূচনাই এখানে৷ তবুও আমরা আজও এখানে নতুন নতুন প্রজাতি খুঁজে পাই, যেমন গতবছর আমরা বর্ণনা করেছি৷ সাগরের অন্যান্য এলাকা নিয়ে এখনও অতোটা গবেষণা করা হয়নি, কাজেই সেখানে আরো লাখ লাখ নতুন প্রজাতি খুঁজে পাবার সম্ভাবনা রয়েছে৷’’

জোনাকিরা এক আশ্চর্য প্রজাতি৷ আলো ছড়ানো রোঁয়াওলা এই পোকাগুলোর পরিবেশ দূষণ সহ্য করার ক্ষমতা অসাধারণ – এরা হেভি মেটাল গোত্রীয় পদার্থে বিশেষভাবে দূষিত পানিতেও বেঁচে থাকতে পারে৷ ভূমধ্যসাগরের পানির তলার জোনাকিরা জিনগতভাবে ক্যারিবিয়ানের জোনাকিদের সঙ্গে এক হলেও, তাদের মর্ফোলজি বা অঙ্গসংস্থান আলাদা৷ এর ফলে এই দুই ধরনের জোনাকি একই প্রজাতির কিনা, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে৷

জীববিজ্ঞানীদের হাতে নতুন হাতিয়ার

লিনেয়ুসের পদ্ধতি

বিজ্ঞানের যে শাস্ত্রটি বিভিন্ন প্রজাতিকে শনাক্ত ও বর্ণনা করে থাকে, তার নাম হল ট্যাক্সোনমি বা শ্রেণিকরণবিদ্যা৷ সুইডিশ জীববিজ্ঞানী কার্ল লিনেয়ুস প্রায় ৩০০ বছর আগে এই শ্রেণিকরণের গোড়াপত্তন করেন এবং ট্যাক্সোনমিস্টরা আজও মাইক্রোস্কোপ দিয়ে কীটপতঙ্গ পরীক্ষা করার সময় সেই সব নমুনার ছাপা ছবি ও ডায়াগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন৷ ফলে প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল ও সময়সাপেক্ষ হয়৷

সারা ফাউলভেটার বললেন, ‘‘বস্তুত আমরা আজও তাই করে চলেছি: আমরা জন্তু-জানোয়ার দেখি, তাদের লাশ কাটি, তাদের ছবি আঁকি, তাদের বর্ণনা করি ও এ-সব নিয়ে লেখা ছাপাই৷ কাজেই ৩০০ বছর আগে যা করা হতো, ব্যাপারটা আজও তাই রয়েছে৷’’

ইউরোপীয় অর্থানুকুল্যে সংঘটিত একটি প্রকল্পে একটি নতুন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা শ্রেণিকরণবিদ্যাকে প্রযুক্তির এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে গেছে৷ সাগরে সংগৃহীত জোনাকিগুলির একটি নমুনাকে সিটি স্ক্যানারে দেওয়া হয়৷ যন্ত্রটি সেই নমুনার এক পর্যায় এক্স-রে ছবি তোলে, যা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নমুনাটির একটি বিশদ ভার্চুয়াল ত্রিমাত্রিক ইমেজ সৃষ্টি করা হয়৷

জীববিজ্ঞানী ক্রিস্টস আর্ভানিটিডিস বললেন, ‘‘তিনটি ভিন্ন ভিন্ন শাস্ত্রের সঙ্গম ঘটেছে এখানে৷ একটি হল প্রথাগত শ্রেণিকরণবিদ্যা, দ্বিতীয়ত তথ্য প্রযুক্তি, আর তৃতীয় হল বায়ো-ইমেজিং, যা বস্তুত চিকিৎসাবিদ্যার অঙ্গ৷ আমরা তিনটি শাস্ত্রকে এই পদ্ধতিতে একত্রিত করেছি৷’’

এক্স-রে স্ক্যান থেকে থ্রিডি মডেল তৈরি করতে কিছুটা সময় লাগে৷ কিন্তু একবার তৈরি হয়ে গেলে মডেলটিকে স্ক্রিনে নানাভাবে ব্যবহার করা যায়, এমনকি আদত বাস্তব নমুনাটির কোনোরকম ক্ষতি না করে তা ভার্চুয়ালি ব্যবচ্ছেদও করা চলে৷ সারা ফাউলভেটার জানালেন, ‘‘এই প্রযুক্তির ফলে বিজ্ঞানীরা জীবটিকে কাটাছেঁড়া না করে, কম্পিউটারের স্ক্রিনে ত্রিমাত্রিকভাবে পরীক্ষা করার অনন্য সুযোগ পান৷ অপরদিকে প্রথাগত ট্যাক্সোনমিতে আমাদের নমুনাটিকে মাইক্রোস্কোপের তলায় ব্যবচ্ছেদ করতে হত, যার ফলে মূল নমুনাটি বিনষ্ট হয়ে যেত৷’’

নতুন প্রযুক্তিটির গতিবেগ ও দক্ষতা সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের অনাবিষ্কৃত জীব ও প্রাণীদের সন্ধানে সাহায্য করবে৷